বাংলাদেশে আদিবাসী বিতর্ক

মেহেদী হাসান পলাশ, Mehadi Hassan Palash

মেহেদী হাসান পলাশ

আগামীকাল ৩ আগস্ট এ বছরের আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের মূল অনুষ্ঠান পালিত হবে বাংলাদেশে। ঈদের ছুটির কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে ৯ আগস্টের বদলে আদিবাসী দিবসের কর্মসূচি কিছুটা এগিয়ে এনে পালন হচ্ছে। জাতিসংঘ ঘোষিত আদিবাসী দিবসে এবারের শ্লোগান হচ্ছে, “আদিবাসী জাতিসমূহের অধিকার সংক্রান্ত সকল চুক্তি ও অঙ্গীকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন!”

ঢাকা রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে দিবসের কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন রাশেদ খান মেনন, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আদিবাসী ফোরামের সভাপতি ও পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা।

বিশ্ব আদিবাসী দিবসকে সামনে রেখে আবার নতুন করে আলোচিত হচ্ছে বাংলাদেশে আদিবাসী বিতর্কটি। বাংলাদেশে আদিবাসী কারা- এই বিতর্কটি খুব প্রাচীন নয়, বড়ো জোর এক দশকের। ইস্যুটি পুরাতন না হলেও তা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাস, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে নাড়া দিয়েছে। জাতীয় সংহতির প্রশ্নে তাই এ বিতর্কের আশু সমাধান জরুরি।

বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর যে অংশটি নিজেদের হঠাৎ আদিবাসী বলে দাবী করতে শুরু করছে তারা কিন্তু বছর দশেক আগেও নিজেদের এ পরিচয়ে পরিচিত করাতে চায়নি। উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা বা নিজ জাতির পরিচয়েই তারা পরিচিত হতে চেয়ে দাবী করে আসছিল দীর্ঘ দিন ধরে। এরকম হঠাৎ করে আদিবাসী হয়ে যাওয়ার নজির বিশ্বে আর নেই। আদিবাসী জনগোষ্ঠী হিসাবে বিশ্বে যারা সুপরিচিত, যেমন, অস্ট্রেলিয়ার এবরিজিন, যুক্তরাষ্ট্রের রেড ইন্ডিয়ান, নিউজিল্যান্ডের মাউরি, দক্ষিণ আমেরিকার ইনকা প্রভৃতি সুপ্রাচীন কাল থেকেই আদিবাসী হিসেবে বিশ্বে সুপরিচিত। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কিছু অংশ যারা ১৯৯৭ সালেও নিজেদের উপজাতি বলে জাতীয়ভাবে পরিচিত করিয়েছে তারা হঠাৎ করে সেলফ প্রমোশন নিয়ে একবিংশ শতকের শুরু থেকে নিজেদের আদিবাসী বলে দাবী করতে শুরু করে। এমনকি দেশের মধ্যে বসবাসকারী যাযাবর ও তফসিলী সম্প্রদায়গুলোকেও তারা আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত করে নিয়েছে। আর এভাবে দাবী করা হচ্ছে বাংলাদেশে ৭৫টি (মতান্তরে ৪৫টি) আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে।

বাংলাদেশের  আত্মঘাতী মিডিয়া ও সুশীল সমাজের একটি অংশের জোরালো সমর্থন ও আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে তারা এরই মধ্যে সরকারের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে একক বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সরকারও তাদের দাবীর কাছে আংশিক নতি স্বীকার করে সংবিধানে তাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আর এই সুযোগে তফসিলী সম্প্রদায়ভুক্ত জনগোষ্ঠী (উপজাতি বা ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা হবার বৈশিষ্ট্যধারী নয়) নিজেদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতি মুফতে পেয়ে গেছে। অথচ একই জনগোষ্ঠীগুলো মূল অংশ ভারতে এখনো সাংবিধানিকভাবে তফসিলী সম্প্রদায় হিসেবে চিহ্নিত ও সুবিধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

আদিবাসী বিতর্কের সমাধানে প্রথমেই আমাদের আদিবাসীর সংজ্ঞা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। আদিবাসী বিষয়ে দুধরণের সংজ্ঞা পাওয়া যায়। একটি আভিধানিক সংজ্ঞা এবং অন্যটি জাতিসংঘের অধীনস্ত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত সংজ্ঞা- যা জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত। প্রথমেই আমরা আভিধানিক সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করতে পারি।

 আদিবাসীর সংজ্ঞা কী?

আদিবাসী শব্দের ইংলিশ প্রতিশব্দ Indigenous people.  অনেকে আদিবাসী শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে Aborigine ব্যবহার করেন। কিন্তু Aborigine বলতে সার্বজনীনভাবে আদিবাসী বোঝায় না। Aborigine বলতে সুনির্দিষ্টভাবে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের বোঝায়। অক্সফোর্ড ডিকশনারীতে Aborigine  শব্দের অর্থ বলা হয়েছে Ôa member of a race of people who were the original living in a country, especially AustraliaÕ. একইভাবে Red Indian বলতে মার্কিন আদিবাসীদের বোঝায়, অস্ট্রেলীয় Aborigine বা আদিবাসীদের বোঝায় না। এ ছাড়াও বিভিন্ন ডিকশনারীতে আদিবাসী বিষয়ে যে সংজ্ঞা ও প্রতিশব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা নিম্নরূপ:

Aborigine: noun. a member of a race of people who were the original living in a country, especially Australia. Indigenous: belonging to a particular place rather than coming to it from some where else. Native. The indigenous people/ indigenous area. Aborigine: earliest. Primitive. Indigenous. Indigenous: adj. Native born or produced naturally in a country, not imported (opposite to exotic).

 অন্যদিকে বাংলা একাডেমীর অভিধানে Indigenous শব্দের অর্থ বলা হয়েছে: দেশী, দৈশিক, স্বদেশীয়, স্বদেশজাত। কোলকাতা থেকে প্রকাশিত সংসদ অভিধানে Indigenous শব্দের অর্থ হিসেবে বলা হয়েছে, স্বদেশজাত, দেশীয়। আবার চেম্বার্স ডিকশনারীতে Indigenous শব্দের অর্থ হিসেবে বলা হয়েছে, native born, originating or produced naturaly in a country, not imported. একই ডিকশনারীতে Indigenous শব্দের বিপরীত শব্দ হিসেবে exotic শব্দটিকে ব্যবহার করা হয়েছেÑ যার অর্থ বহিরাগত। অর্থাৎ অভিধানিকভাবে আদিবাসী শব্দের অর্থ দেশী, স্বদেশজাত বা ভূমিপুত্র।

 এখন ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করে দেখা দরকার বাংলাদেশে যারা নিজেদের আদিবাসী বলে দাবী করছেন তারা কতোটা ‘স্বদেশজাত’ বা ‘ভূমিপুত্র’।

ইতিহাসের এই বিশ্লেষণে দেশী বিদেশী অনেক পুস্তকের রেফরেন্স নেওয়া যায়, কিন্তু এ আলোচনায় মাত্র দুটি পুস্তককে রেফরেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হলো। এর একটি হলো বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রণীত বাংলা পিডিয়া এবং বাংলাদেশ আদিবাসী অধিকার আন্দোলন কর্তৃক প্রণীত বাংলাদেশের আদিবাসীঃ এথনোগ্রাফীয় গবেষণা।

এ বই দুটি নির্বাচনের কারণটি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাপিডিয়াতে এ সংক্রান্ত এন্ট্রির শিরোনাম ‘আদিবাসী’- রচয়িতা বাংলাদেশের আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক, আদিবাসী বিষয়ক জাতীয় কোয়ালিশনের মুখপাত্র, আন্তর্জাতিক সিএইচটি কমিশনের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। অন্যদিকে দাতা সংস্থা অক্সফামের সহায়তায় বাংলাদেশের আদিবাসী অধিকার আন্দোলন কর্তৃক প্রকাশিত তিন খণ্ডের বাংলাদেশের আদিবাসী: এথনোগ্রাফিয় গবেষণা বইটির প্রথম খণ্ডের গবেষণা ও সম্পাদনা করার কাজটি করেছেন, মঙ্গল কুমার চাকমা, জেমস ওয়ার্ড খকশী, পল্লব চাকমা, মংসিংঞো মারমা, হেলেনা বাবলি তালাং। পুস্তকটির ৫ সদস্যের রিভিউ কমিটির মধ্যে আছেন বাংলাদেশে আদিবাসী আন্দোলনের প্রবর্তক ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং। লেখার পরিসর চিন্তা করে এ লেখায় শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠিগুলোর ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হলো।

 চাকমা

1356_487607401320978_1904084497_n

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী ভিন্ন ভাষাভাষী আদিবাসী দাবীদার জুম্ম জনগোষ্ঠীর অন্যতম চাকমা জনগোষ্ঠী।  তিন পার্বত্য জেলাতেই চাকমাদের বসবাস রয়েছে। চাকমারা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী উপজাতীয় জনগোষ্ঠী। তবে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সবচেয়ে অধিক চাকমা বসবাস করে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এই তিন পার্বত্য জেলায় চাকমাদের  মোট জনসংখ্যা ২,৩৯,৪১৭ জন । ঐ সময় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ভারতের  ত্রিপুরা  রাজ্যে প্রায় ৬০ হাজার চাকমা শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করছিল বলে অভিযোগ করা হয়ে থাকে- যাদের গণনায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি। বাংলাপিডিয়া মতে, আনুমানিক ১৫৫০ খ্রিষ্টব্দের দিকে পর্তুগিজ মানচিত্র প্রণেতা লাভানহা অঙ্কিত বাংলার সর্বাপেক্ষা পুরাতন ও এ পর্যন্ত অস্তিত্বশীল মানচিত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের এই চাকমাদের সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়। কর্ণফুলীর নদীর তীর বরাবর চাকমাদের বসতি ছিল। চাকমাদের আরো আগের ইতিহাস সম্পর্কে দুটি তাত্ত্বিক অভিমত প্রচলিত। উভয় অভিমতে মনে করা হয়, চাকমারা বাইরে থেকে এসে তাদের বর্তমান আবাসভূমিতে বসতি স্থাপন করে। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তাত্ত্বিক অভিমত অনুযায়ী, চাকমারা মূলত ছিল মধ্য মায়ানমারের আরাকান এলাকার অধিবাসী। তবে বাংলাদেশের আদিবাসী: এথনোগ্রাফিয় গবেষণা পুস্তকের মতে, কিংবদন্তী অনুযায়ী অতীতে চাকমারা চম্পকনগর নামে একটি রাজ্যে বাস করত। চম্পক নগর ত্রিপুরা রাজ্যেরই কাছাকাছি কোন জায়গায় অবস্থিত ছিল।  এ ব্যাপারে নানা সাক্ষ্যও পাওয়া যায়। অশোক কুমার দেওয়ানের অনুমানে উত্তর ত্রিপুরার কোন স্থানে বসবাসকারী চাকমারা সেখানে আনুমানিক দুশ থেকে আড়াইশ বছর কাল অতিবাহিত করার পর পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে উত্তর ত্রিপুরা থেকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পূর্বদিকে সরে আসতে থাকে এবং পঞ্চদশ শতকের শেষ দিকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এবং তার উপনদীসমূহের উপত্যকা ভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে। এই হিসাব অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের আগমন ৫০০ বছরের বেশি নয়।

চাকমা রাজবংশের ইতিহাস অনুযায়ী বিজয়গিরিকে ১ম রাজা ধরলে ৩২/৩৩ তম রাজা হচ্ছেন অরুণযুগ (ইয়াংজ )। তার শাসনকাল আনুমানিক ১৩১৬ খ্রিষ্টাব্দ হতে ১৩৩৩ খ্রিষ্টাব্দ। চাকমা ঐতিহাসিকদের মতে অরুণ যুগের পতনের পরপরই অর্থাৎ ১৩৩৩ খ্রিষ্টাব্দে চাকমারা বার্মা থেকে চট্টগ্রামে বা পার্বত্য চট্টগ্রামে আগমন করেন ।

খুমি

পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি এই তিন উপজেলায় খুমীরা বসবাস করে। ২০০৬ সালে সিঅং খুমী ( একজন সাংস্কৃতিক কর্মী) এর নেতৃত্বে এক জরিপ পরিচালনা হয়েছিল। সে জরিপ অনুযায়ী খুমী জনসংখ্যা  ছিল ২০৯৪ জন ।

বাংলাপিডিয়া মতে, সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে খুমিরা আরাকান থেকে বাংলাদেশে আসে। খ্যাং উপজাতি তাদেরকে আরাকান থেকে বিতাড়ন করে। তবে এখনো কিছু খুমি আরাকানের কোলাদাইন নদীর তীরে বসবাস করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের আদিবাসী: এথনোগ্রাফিয় গবেষণা পুস্তকের মতে, খুমি আদিবাসীরা মূলত মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীভুক্ত একটি দল। তারা তিব্বতি বার্মিজ-কুকি-চীন ভাষায় কথা বলে। বাংলাদেশে খুমি নৃ-গোষ্ঠীর আগমন বার্মার চীন প্রদেশ থেকে। এই চীন হিলস প্রদেশ ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ সালে আরাকান প্রদেশ থেকে আলাদা হয়ে নামকরণ করা হয় চায়না হিলস। অনেকের মতে, সতের শতকের মাঝামাঝি সময়ে খুমীরা চায়না হিল (তৎকালীন সময়ে আরাকান প্রদেশ নামে পরিচিত) থেকে এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করে। খুমি আদিবাসীরা সার্মথাং(Samthang) গোত্রের পূর্ব-পুরুষদের মৌখিক (অলিখিত) ইতিহাস থেকে জানা যায় যে খুমিরা বাংলাদেশে আট পুরুষ(বংশধর) ধরে বসবাস করছে ।

চাক

বান্দরবান পার্বত্য জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে সর্বদক্ষিণ প্রান্তে মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের সীমানা বরাবর অবস্থিত নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় চাকদের আবাসস্থল। ১৯৯১ সালের আদমশুমারী প্রতিবেদন অনুসারে চাকদের লোকসংখ্যা ২০০০ জন । বাংলাপিডিয়া মতে, কয়েক শতাব্দি আগে মায়ানমারের ইরাবতী নদীর উজান অঞ্চল থেকে এরা আরাকান দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে। অন্যদিকে বাংলাদেশের আদিবাসী: এথনোগ্রাফিয় গবেষণা পুস্তকের মতে, বাংলাদেশের বাইরেও বিভিন্ন দেশে যেমন: ভারতের মনিপুর ও অরুণাচল, মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশ, মধ্য বার্মা (রোহমা পর্বতের পাদদেশে ), উত্তর ও দক্ষিণ বার্মা এবং লাওসে বিচ্ছিন্নভাবে চাক জনগোষ্ঠীর বংশভুক্ত প্রাচীন আদিবাসী আছে। ইতিহাসে জানা যায়, হিমালয়ের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের পামির মালভূমি চাকদের উৎপত্তিস্থল । ষোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকে চাকরা বংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলে বসতি গড়ে তোলে। প্রায় তিনশত বছর আগে (সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ্বে) ক্যউ বলী নামে এক পরাক্রমশালী চাক ব্যক্তির নেতৃত্বে গুটিকয়েক পরিবার নিয়ে বর্তমান বাইশারীতে চাষাবাদ ও ক্ষেত খামার শুরু করে। পরবর্তীতে  ম্রাসাঅং রোয়াজা, ধুংরী মহাজন, ক্যজরী মহাজন, থোয়াইঅং মহাজন, অংগাইজাই চাক প্রমুখ ব্যক্তিগণ ও বাইশারীতে এসে ক্যউ বলীর সাথে একত্রিত হয় এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্ম আজ পর্যন্ত ঐ খানে বাস করছে।

ত্রিপুরা

বাংলাদেশের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে বাস করে। তিন পার্বত্য জেলা ছাড়াও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী সমতল এলাকার কুমিল্লা, সিলেট, বৃহত্তর চট্টগামের বিভিন্ন উপজেলা, রাজবাড়ি, চাঁদপুর, ফরিদপুর ইত্যাদি অঞ্চলেও বর্তমানে বসবাস করে। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে একসময় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী যে সবর্ত্র ছিল ১৮৭২ ও ১৮৮১ সালের আদমশুমারী প্রতিবেদন পরীক্ষা করলে তার প্রমাণ মেলে। ১৮৭২ সালে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মোট সংখ্যা ছিল ১৫,৬৩২ জন যা ১৮৮১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮,৫০৯ জনে। বর্তমানে বাংলাদেশে ত্রিপুরাদের জনসংখ্যা অনেকেই মনে করেন দুই লক্ষের কাছাকাছি। তার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রিপুরাদের জনসংখ্যা দেড় লক্ষাধিক। বাংলাপিডিয়া মতে, এরা ছিল বর্তমান বারীয় রাজ্য ত্রিপুরার পার্বত্য এলাকার অধিবাসী। পরবর্তীতে এরা নিজ এলাকা ছেড়ে বাংলাদেশের মূলত কুমিল্লা, সিলেট এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বসতি স্থাপন করে। অনেকের মতে, টিপরারা আসাম, বার্মা এবং থাইল্যাণ্ডের অধিবাসী সাধারণ এক উপজাতির পূর্বপুরুষ বডো জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশের আদিবাসী: এথনোগ্রাফিয় গবেষণা পুস্তকের মতে, এ জাতির মূল অংশ বাস করছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। ত্রিপুরা রাজ্য ছাড়াও ভারতের মিজোরাম , আসাম প্রভৃতি প্রদেশেও অনেক ত্রিপুরা বাস করে। মিয়ানমারেও ত্রিপুরাদের জনবসতি আছে বলে জানা যায়। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ইতিহাস থেকে জানা যায় আনুমানিক ৬৫ খ্রিস্টাব্দে সুই বংশের সময়কালে পশ্চিম চীনের ইয়াংসি ও হোয়াংহো নদীর উপত্যাকা হচ্ছে এদের প্রাচীন আবাসস্থল। পরবর্তীতে এই জনগোষ্ঠী ভারতের আসাম হয়ে বর্তমান বসতি অঞ্চলে বসতি গড়ে তোলে এবং রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে  বলে ইতিহাস সূত্রে জানা যায়।

 পাঙ্খো

 সাধারণত পাঙ্খোয়ারা উঁচু পাহাড়ের উপরে বসবাস করতে পছন্দ এবং সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় বিলাইছড়ি ইউনিয়নে পাঙ্খোয়া পাড়া এবং বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার সাইজাম পাড়া ও নানখারপাড়া (বড়থুলী) প্রভৃতি স্থানে পাংখোয়াদের বসবাস রয়েছে। রাঙ্গামাটি সদর থানার কর্ণফুলী নদীর পূর্ব পাড়ে ১৬১০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট বসন্তমোন- এ অবস্থিত পাংখোয়া পাড়াটি সবচেয়ে পুরোনো। ২০০ বছরেরও আগে তারা এখানে বসতি স্থাপন করে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী পাংখোয়া জনসংখ্যা ৩২২৭ জন। তবে বর্তমানে পাংখোয়াদের মোট জনসংখ্যা ৪০০০ জন হতে পারে  বলে পাংখোয়ারা মনে করে। 

বাংলাপিডিয়া মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামের এই উপজাতিকে মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর একটি উপশাখা বলে মনে করা হয়। এদের আদি নিবাস সম্ভবত ব্রহ্মদেশ(মায়ানমার)। সেখান থেকে কোনো কারণে বিতাড়িত হয়ে কয়েকশ’ বছর আগে তারা এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের আদিবাসী: এথনোগ্রাফিয় গবেষণা পুস্তকের মতে, পাংখোয়াদের বিশ্বাস অতীতে তারা লুসাই পাহাড়ের পাংখোয়া নামক কোন গ্রাম থেকে এসেছিল। মিজোরাম প্রাদেশিক দলিলপত্র ও মানচিত্রে ৫৬১১ নং পাংখোয়া গ্রামটির চিহ্ন উল্লেখ পাওয়া  যায়।  তারা বিশ্বাস করে যে, তারা বার্মার শান জাতির অংশ এবং দক্ষিণ দিক থেকে তারা এসেছিল।  তাদের মূল আবাসভূমি বর্তমান মিয়ানমারের চীন প্রদেশ। পণ্ডিতদের মতে, পাংখোয়ারা সেই অঞ্চল থেকে সরে এসে ক্রমান্বয়ে আরাকান ওলুসাই হিলসে বসতি স্থাপন করে এবং কালক্রমে ধীরে ধীরে  জীবন জীবিকার সন্ধানে পাংখোয়াদের একটি অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে।

 মগ

মারমা সম্প্রদায়ের অনেকের মতে মগ কোনো সতন্ত্র উপজাতি নয়, আরাকানবাসীর একটি উচ্ছৃঙ্খল দল মাত্র। ১৭৮৪ সালে বার্মা কর্তৃক স্বাধীন আরাকান রাজ্যের পতনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে মগদের বসতি গড়ে ওঠে। বার্মার সাথে আরাকানের সংযুক্তির পর বার্মার রাজা বোদাওপা এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। এর ফলে আরাকানের জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ বাংলার দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে দেশান্তরিত হয়। ব্রিটিশ সরকার তাদের পুনর্বাসনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বার্মার এক সাবেক নৌ অফিসার ক্যাপ্টেন এইচ কক্সকে মগ বসতির জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করা হয়। তার নামানুসারে বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের নামকরণ করা হয়। মগদের এরূপ আশ্রয় দান, ও তাদের লুটতরাজের ফলে ১৯২৪-১৯২৫ সালে প্রথম ইঙ্গ বার্মিজ যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যাতে বার্মা পরাজিত হয় এবং ১৮২৬ সালের ইয়ানদাবু চুক্তির ফলে আরাকান ও তেনাসারিম অঞ্চল ব্রিটিশ শাসনভুক্ত হয়। এর ফল স্বরূপ, আরাকান থেকে দ্বিতীয় দফায় মগদের দেশত্যাগ আরম্ভ হয়, আরাকান থেকে দ্বিতীয় দফায় মগদের দেশত্যাগ আরম্ভ হয়, আরাকান থেকে আগত শরণার্থীরা চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণ অঞ্চলে একটা স্থায়ী ঠিকানা খুঁজে নেয়। ক্রমে মাতামুহুরী উপত্যকার মধ্য দিয়ে তারা বান্দরবানে ছড়িয়ে পড়ে। তৃতীয় দলটি সীতাকুণ্ডু অঞ্চল থেকে খাগড়াছড়িতে প্রবেশ করে। চতুর্থ দলটি বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করে বৃহত্তর পটুয়াখালীর দক্ষিণ অঞ্চলে পৌছে এবং সেখানে বসতি গড়ে তোলে।

 মারমা

 তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে মারমাদের সবচেয়ে বেশি লোক বান্দরবান জেলায় বাস করে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারী অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মারমা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা হচ্ছে ১,৪২,৩৩৪ জন।  বাংলাপিডিয়া মতে, মারমা শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বার্মিজ শব্দ ‘মায়ানমা’ থেকে, যার অর্থ বার্মার অধিবাসী। মারমা জনগণের পূর্ব পুরুষগণ বার্মার পেগু নগরে বসবাস করতেন। আরাকান রাজার সেনাবাহিনীর অধিনায়ক মহাপিন্নাগি ১৫৯৯ সালে বার্মায় একটি আগ্রাসন পরিচালনা করেন। তখন তারা বঙ্গীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। বাংলাদেশের আদিবাসী: এথনোগ্রাফিয় গবেষণা পুস্তকের মতে, ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে আরাকানের রাজা শ্রী সুধাম্মার ( শ্রীসুধর্ম ) মৃত্যুর পর তার এক অমাত্য নরপতি আরাকানের সিংহাসন দখল করে রাজপরিবারের সদস্য ও পণ্ডিতদেরকে মৃতুদণ্ড দিতে থাকলে অনেকেই দেশ ছেড়ে পালাতে থাকে। দেশের এই রাজনৈতিক দুর্যোগের সময় রাজার পুত্র নাগাথোয়াইখিন রাজপরিবারের সদস্যবর্গ ও পণ্ডিতদের নিয়ে রাজধানী ছেড়ে পালিয়ে যান। এসময় তিনি চট্টগ্রামের কাইসাঁ জায়গায় আশ্রয় নেন। প্রায় ৫০০০০ সৈন্য তাকে অনুসরন করে। কাইসাঁ  বা কর্ণফুলী নদীর তীরে বাস করতে থাকে।  নাগাথোয়াইখিন কাইঁসা অঞ্চলের শাসক  হিসেবে  বা  ম্রাইমাগ্রি মাঙঃ বা ম্রাইমাগ্রিদের রাজা  হিসেবে পরিচিতি পান। আরাকানের নতুন রাজা নাগাথোয়াইখিন এর অবস্থান জানার পর শত্রুতার পথে না গিয়ে তাকে কাইসাঁ অঞ্চলের শাসক হিসেবে স্বীকিৃতি দেন।১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা থেকে আরাকানি শাসনের পতন হলে মোগল শাসণাধীনে মারমাদের পেলেংসা: গোত্র মোগলদের কর প্রদানের  মাধ্যমে নিজেদের স্থায়ী আবাসভূমি গড়ে তুলেছিল। ১৭৮২  সালের দিকে তারা পেলেংসা: রাজবংশের পূর্বসূরী ম্রাচাই ধাবইং এর নেতৃত্বে সীতাকুন্ড এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ধাবইং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে কার্পাস মহলের কর আদায়ের চুক্তি অনুসারে ঐ এলাকার চিফ পদ লাভ করেন।

 মুরং

তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে ম্রোরা শুধু বান্দরবান জেলায় বাস করে। মুরংরা ছিল আরাকানের একটি সুপরিচিত জনগোষ্ঠী। দুই মুরং রাজা আ-মিয়া-থু(৯৫৭)এবং পাই ফ্যু(৯৬৪) দশম শতাব্দিতে আরাকান শাসন করেন। সে সময় আরাকানের রাজধানী ছিল ওয়াথালি। কোলাদাইন নদীর তীরে খুমি উপজাতির সঙ্গে মুরংদের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। যুদ্ধে খুমিরা মুরংদের পরাজিত করে আরাকান থেকে বিতাড়ন করে। সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে মুরংরা পার্বত্য চট্টগ্রামে চলে আসে। আরাকন রাজাদের ধারা বিবরণী রাজওয়াং-এ বলা হয়েছে দ্বাদশ শতাব্দিতে আরাকানের রাজা দা থা রাজাকে(১১৫৩-১১৬৫) ‘মহামুণি মূর্তির’ অবস্থান খুঁজে বের করতে দু’জন ম্রো সাহায্য করেছিলেন। চতুর্দশ শতকে খুমি নামে একটি শক্তিশালী উপজাতি ম্রোদের আরাকান থেকে বিতাড়িত করলে তারা বান্দরবানের পার্বত্য অঞ্চলে চলে আসে এবং মাতামুহুরী নদীর তীর বরাবর সাঙ্গু উপত্যকার পশ্চিমে বসতি স্থাপন শুরু করে। তৎকালীন বার্মা রাজা কর্তৃক চট্টগ্রামের জেলা প্রধানের কাছে লিখিত এক চিঠিতে এর সমর্থন পাওয়া যায়। বাংলাদেশের আদিবাসী: এথনোগ্রাফিয় গবেষণা পুস্তকের মতে,  ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টারের মতে, ম্রো (মুরং) নামে একটি জনজাতি যারা পূর্বে আরাকান হিলস-এ বাস করত তারা প্রধানত এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের সাঙ্গু নদীর পশ্চিমে এবং মাতামুহুরী নদী বরাবর বাস করে। তারা নিশ্চিত করে খুমিরা তাদের আরাকান থেকে বের করে দেয়।  মুরংরা বর্তমানে বোমাং রাজার প্রজা। বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক স্যার আর্থার ফেইরি তার বিখ্যাত  ‘বার্মার ইতিহাস’ গ্রন্থে জানান যে, এটা একটি জনজাতি বর্তমানে তাদের প্রাচীন রাজ্য থেকে কমে গেছে। তারা এক সময় কোলদান নদী ও এর উপনদীতে বাস করত। কিন্তু খুমি জনজাতি কর্তৃক ধীরে ধীরে বিতাড়িত হয়ে তারা পশ্চিমে স্থানান্তর হয়েছিল এবং আরাকান  ও চট্টগ্রাম সীমান্তবর্তী এলাকায় বসতি গড়ে তোলে।

 লুসাই

লুসাইগণ বর্তমানে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি থানার সাজেক উপত্যাকায় বাস করে। তবে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলায়ও খুব অল্প সংখ্যক লুসাই বাস করে। সিলেট জেলাতে ও লুসাইদের বসবাস রয়েছে। বাংলাদেশের লুসাইদের সংখ্যা আনুমানিক ১০০০-এর মত। বাংলাপিডিয়া মতে, লুসাইদের পূর্বপুরুষরা মিজোরামে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে, সেখান থেকেই তাদের কোনো কোনো দল বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসেছিল। একই সময়ে তাদের স্বগোত্রীয় লোকজন বার্মায়ও গিয়ে পৌঁছে। বাংলাদেশের আদিবাসী: এথনোগ্রাফিয় গবেষণা পুস্তকে লুসাইদের বিষয়ে বলা হয়েছে, লুসাই হিল লুসাই জনগোষ্ঠীর মূল আবাস ভূমি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এককালে লুসাই হিল বর্তমানে মিজোরাম নামে পরিচিত । লুসাইদের পূর্বপুরুষেরা চিনলুং থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয় এবং নিজেদেরকে তারা মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর বংশধর বলেই পরিচয় দেন।

অহমিয়া

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা যথাক্রমে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় অরণ্যময় পরিবেশে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর লোকজন সুদীর্ঘকাল ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে। এই অহমিয়া জনগোষ্ঠীকে স্থায়ীভাবে আসাম হিসেবে বলা হয়ে থাকে। অহমিয়া বা অসমদের মূল জনগোষ্ঠী ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল আসাম রাজ্যে বাস করছে। মূলত অহমিয়া জনগোষ্ঠীর নামে ভারতের উক্ত প্রদেশের নাম আসাম নামকরণ হয়েছে। ব্রিটিশ কর্তৃক আসাম দখলের পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তার শাসনকার্য পারচালনা এবং আরো বেশি বেশি পার্বত্যাঞ্চলে দুর্ধষ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোকে আয়ত্তে আনার লক্ষ্যে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর  অংশ হিসেবে অধীনস্থ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর লোক নিয়ে বিভিন্ন রেজিমেন্ট গঠন করে। তার মধ্যে আসাম রেজিমেন্ট ছিল অন্যতম । এই আসাম রেজিমেন্টের সৈনিক হিসেবে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী অহমিয়া জনগোষ্ঠীর পূর্বসুরিরা এ অঞ্চলে আগমন করে ।

 খিয়াং

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার রাজস্থলি, কাপ্তাই এবং বান্দরবান জেলার সদর, রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় খিয়াং জনগোষ্ঠীর বসবাস। ১৯৮১ এবং ১৯৯১ সালের আদমশুমারী অনুসারে খিয়াং জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা যথাক্রমে ৫৪৫৩ এবং ১৯৫০। দক্ষিণের টেম- চিন  বা উত্তরের ওয়াইল্ড চিন নামে অবহিত আরাকান ইয়োমা উপত্যাকার অববাহিকায় খিয়াংদের আদি নিবাস ছিল বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রথম মতবাদে খিয়াংরা আরাকানের উত্তর ও দক্ষিণের ইয়োমা পর্বত হতে জীবন জীবিকা আরম্ভ করে। বার্মার (বর্তমান মিয়ানমারে) আকিয়াব, ক্যকপু এবং সানডোওয়ে জেলার পশ্চিমে তাদের বসবাস রয়েছে বলে জানা যায়। অন্য মতবাদে জানা যায়, বার্মার চীন হিলসের অধিবাসীদের খিয়াং বলা হয়। বার্মিজরা এদের চিনস আর আরাকানিরা  খিয়াং বলে ডাকে।

গুর্খা

গুর্খা জনগোষ্ঠীর লোকেরা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার অর্ন্তগত মাঝের বস্তি, আসাম বস্তি, জেল রোড , কন্ট্রাক্টর পাড়া প্রভৃতি এলাকায় বাস করে। বান্দরবান জেলায় ও ৪/৫ টি গুর্খা পরিবার রয়েছে। সরকারি আদমশুমারীতে গুর্খা জনগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা আলাদাভাবে উল্লেখ নেই। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে গুর্খাদের সম্ভাব্য জনসংখ্যা ৩০০ থেকে ৫০০ এর মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হয় । পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও বাংলাদেশের ঢাকা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, সিলেট,  খুলনা, পটুয়াখালী প্রভৃতি  জেলায় অনেক গুর্খা বাস করে। গুর্খারা  তাদের  নাম গ্রহণ করে  ৮ম শতাব্দীর আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ গুরু গোরকনাথ থেকে। অতীতে দুর্গম পাহাড়-পর্বতময় জনপদের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্রিটিশরা ছিল অসহায়। এমন অবস্থায় কৌশল হিসেবে তখন বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ নেপাল ও ভারত থেকে ২য় গুর্খা রেজিমেন্টকে লুসাই বিদ্রোহ দমনের জন্য এই এলাকায় নিয়ে আসে। প্রশিক্ষিত গুর্খাদের অসীম সাহস, দুধর্ষ তৎপরতা ও যুদ্ধ কৌশলের সামনে লুসাইরা তাদের অসহায়ত্ব বুঝতে পারে ও বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য হয়। আর ব্রিটিশরাও পরবর্তীতে গুর্খাদের পার্বত্য এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দেয়।

 তঞ্চঙ্গ্যা

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় তঞ্চঙ্গ্যাদের প্রধান বসতিগুলো রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া থানার উত্তর পূর্বাংশে এবং  কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বসতি রয়েছে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রদর্শিত তঞ্চঙ্গ্যা জনসংখ্যা ১৯,২১৭ জন।

 তঞ্চঙ্গ্যাদের বর্তমান বসতি স্থানসমূহের দিকে লক্ষ্য করলে অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে তারা দীর্ঘকাল আগে থেকে তাদের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। বার্মার ইতিহাস, দান্যাওয়াদি আরে তবুং বা আরাকান ইতিহাস (অনেকে লেখেন দেঙ্গ্যাওয়াদি আরেদ ফুং) অনুসারে এবং নৃতাত্ত্বিকদের গবেষণা থেকে এই সিদ্ধান্ত পাওয়া গিয়েছে যে, তঞ্চঙ্গ্যারা দাইনাক পরিচয়ে দান্যাওয়াদির (আরাকান) মূল অধিবাসী ছিল। তারা প্রথমে মাতামুহুরী নদীর উপনদী তৈনছং এ (তৈনছড়ি-মারমাদের  তৈনছং ) প্রথম বসতি স্থাপন করে। সেখান থেকে তারা কালক্রমে মাতামুহুরী অববাহিকা ধরে পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে কিছু দক্ষিণে এবং কিছু পশ্চিমে চট্টগ্রামের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে উত্তর পূর্বদিকে স্থানান্তরিত হয়ে রাঙ্গুনিয়া অঞ্চলে এবং অবশেষে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসে স্থায়ী হয়ে যায়।

 বম

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এবং মিয়ানমারের চীন প্রদেশে বম জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও বান্দরবান সদর উপজেলায় এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় ৭০টি গ্রামে বমরা বাস করে। ২০০৩ সালের বম সোশাল কাউন্সিল বাংলাদেশ কর্তৃক পরিচালিত জরিপ অনুসারে বম আদিবাসীদের মোট সংখ্যা ৯৫০০ জন।

উনবিংশ শতকের পূর্বে এবং বিংশ শতকের বিভিন্ন লেখালেখিসমূহে বমদেরকে চীন জাতির উপশাখা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ফায়েব, লুইন, বার্বি মিলস হাচিনসন গ্রীয়ারসনও অন্যান্য লেখকগণও একই মত পোষণ করেন। বমদের আদি নিবাস নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। বলা হয় চীনের চিনলুং এলাকার এক গুহা থেকে তারা এসেছে। বর্তমান স্থানে বমদের আগমন সপ্তদম শতকে। সবচেয়ে বড় কথা বছর দুয়েক আগে, সাবেক বোমাং রাজা চ্যানেল আই-তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, বাংলাদেশে তারা আদিবাসী নন, তাদের পূর্ব পুরুষ আরাকান থেকে এসেছে।

 একইভাবে ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, সমতলের উপজাতীয় সম্প্রদায় যেমন, সাঁওতাল, গারো, হাজং, মনিপুরী প্রভৃতির বাংলাদেশে আগমনের ইতিহাস তিন-চারশত বছরের বেশি নয়। উত্তরাঞ্চলের প্রাচীন বিভিন্ন ইতিহাস থেকে জানা যায়, সাঁওতাল সম্প্রদায় রেল সম্প্রসারণের কাজে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ভারতের উড়িষ্যা ও বিহার অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে আগমন ঘটে। কাজেই উপর্যুক্ত আলোচনায় প্রমাণিত হয় আভিধানিকভাবে বাংলাদেশের উপজাতীয় জনগোষ্ঠী কোনোভাবেই এখানকার স্বদেশজাত বা ভূমিপুত্র বা আদিবাসী নয়।

 এখন আদিবাসীর আরেকটি সংজ্ঞা, আইএলও কনভেনশন ১০৭ ও ১৬৯ অনুসারে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসমূহ আদিবাসী হিসাবে পরিচিত হতে পারে কিনা তার বিবেচনা বাকি রইল। আগামী পর্বে ইনশাল্লাহ সে আলোচনা করা হবে।

Email: [email protected]

 সৌজন্যে: দৈনিক ইনকিলাব(পরিবর্ধিত আকারে)

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে লেখকের আরো কিছু প্রবন্ধ

পার্বত্য চট্টগ্রাম জাতীয় দৃষ্টির মধ্যে রাখতে হবে

একটি স্থায়ী পার্বত্যনীতি সময়ের দাবী

বাংলাদেশে আদিবাসী বিতর্ক

আদিবাসী বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনের ভুল ব্যাখ্যা ও অপপ্রয়োগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ১

পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ২

পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ৩

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

24 Replies to “বাংলাদেশে আদিবাসী বিতর্ক”

  1. .
    হাসির কান্ডঃ১।

    বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর যে অংশটি নিজেদের হঠাৎ আদিবাসী বলে দাবী করতে শুরু করছে তারা কিন্তু বছর দশেক আগেও নিজেদের এ পরিচয়ে পরিচিত করাতে চায়নি। উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা বা নিজ জাতিরপরিচয়েই তারা পরিচিতহতে চেয়ে দাবী করে আসছিল দীর্ঘ দিন ধরে। এরকম হঠাৎ করে আদিবাসী হয়ে যাওয়ার নজির বিশ্বে আর নেই।

  2. .
    হাসির কান্ডঃ২

    বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কিছু অংশ যারা ১৯৯৭ সালেও নিজেদের উপজাতি বলে জাতীয়ভাবে পরিচিত করিয়েছে তারা হঠাৎ করে সেলফ প্রমোশন নিয়ে একবিংশ শতকের শুরু থেকে নিজেদের আদিবাসী বলে দাবীকরতে শুরু করে। এমনকি দেশের মধ্যে বসবাসকারী যাযাবর ও তফসিলী সম্প্রদায়গুলোকেও তারা আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত করে নিয়েছে। আর এভাবে দাবী করা হচ্ছে বাংলাদেশে ৭৫টি (মতান্তরে ৪৫টি) আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে।

  3. .
    লেখাটির ভিতর হাসির কান্ডঃ৩

    কর্ণফুলীর নদীর তীর বরাবর চাকমাদের বসতি ছিল। চাকমাদের আরো আগের ইতিহাস সম্পর্কে দুটি তাত্ত্বিক অভিমত প্রচলিত। উভয় অভিমতে মনে করা হয়, চাকমারা বাইরে থেকে এসে তাদের বর্তমান আবাসভূমিতে বসতি স্থাপন করে। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তাত্ত্বিক অভিমত অনুযায়ী, চাকমারা মূলত ছিল মধ্য মায়ানমারের আরাকান এলাকার অধিবাসী।

  4. হেঃ হেঃ হেঃ
    হাসিনা মেডামের সরকারকে বুড়ো আন্গুল দেখিয়েছে সন্ত্রাসি দেশদ্রোহী সন্তু আর কিছু দালাল যারা জীবনে কোন দিন পাহাড়ে এসেছে বলে মনে হয়না দালালদের জন্য সাদা চামড়া পাহাড় থেকে রপ্তানী কারা হয়….

  5. .
    লেখাটির ভিতর হাসির কান্ডঃ৪

    ইতিহাসের হিসাব অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের আগমন ৫০০ বছরের বেশি নয়।

    তাহলে এই দখলদারের এখন নিজেদেরকে আদিবাসী দাবি করে কোন অধিকারে ?

  6. .
    লেখাটির ভিতর হাসির কান্ডঃ৫

    চাকমা ঐতিহাসিকদের মতে অরুণ যুগের পতনের পরপরই অর্থাৎ ১৩৩৩ খ্রিষ্টাব্দে চাকমারা বার্মা থেকে চট্টগ্রামে বা পার্বত্য চট্টগ্রামে আগমন করেন ।

    তাহলে এটা বুঝতে আর এত পন্ডিত লোকের প্রয়োজন হবে না যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা এই বাংলাদেশে সেটেলার বা দখলদার কারা, স্বদেশী বাঙ্গালীরা নাকি ভিনদেশী উপজাতিরা ?

  7. লেখাটির ভিতর হাসির কান্ডঃ৬

    ১৮৭২ সালে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মোট সংখ্যা ছিল ১৫,৬৩২ জন যা ১৮৮১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮,৫০৯ জনে।

    বর্তমানে বাংলাদেশে ত্রিপুরাদের জনসংখ্যা অনেকেই মনে করেন দুই লক্ষের কাছাকাছি।
    (তার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রিপুরাদের জনসংখ্যা দেড় লক্ষাধিক।)

    মাত্র ৩০ বছরে১৫হাজার থেকে ২০০০০০!!!

    এতদিন জানতাম বংশবৃদ্ধিতে শুধু পার্বত্য বাঙ্গালীরাই এক্সপার্ট !
    এখনতো দেখছি আপনারাও কম যান না !

  8. লেখাটির ভিতর হাসির কান্ডঃ৭

    মারমা সম্প্রদায়ের অনেকের মতে মগ কোনো সতন্ত্র উপজাতি নয়, আরাকানবাসীর একটি উচ্ছৃঙ্খল দল মাত্র !

    ১৭৮৪ সালে বার্মা কর্তৃক স্বাধীন আরাকান রাজ্যের পতনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে মগদের বসতি গড়ে ওঠে।

    ছেঃ ছেঃ ছেঃ ছেঃ…..
    এরপরও কি বলবেন আপনারা এই বাংলার ভূমিপুত্র ?

  9. .
    লেখাটির ভিতর হাসির কান্ডঃ৮

    বার্মার সাথে আরাকানের সংযুক্তির পর বার্মার রাজা বোদাওপা এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন।

    এর ফলে আরাকানের জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ বাংলার দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে দেশান্তরিত হয়।

    ব্রিটিশ সরকার তাদের পুনর্বাসনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বার্মার এক সাবেক নৌ অফিসার ক্যাপ্টেন এইচ কক্সকে মগ বসতির জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করা হয়।

    প্রমাণ স্বরূপঃ
    তার নামানুসারে বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের নামকরণ করা হয়।

    এরদ্বার প্রমানিত হয় যে, শুধু এই বাংলা আমলে নয়, ব্রিটিশ বলেন পাকিস্তান বলেন সব আমলেই আপনাদেরকে দুধকলা খাইয়ে পোষার ব্যবস্থা ছিল !

    তাই নয় কি ?

  10. .
    লেখাটির ভিতর হাসির কান্ডঃ৯

    দ্বিতীয় দফায় মগদের দেশত্যাগ আরম্ভ হয়, আরাকান থেকে আগত শরণার্থীরা চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণ অঞ্চলে একটাস্থায়ী ঠিকানা খুঁজে নেয়।
    ক্রমে মাতামুহুরী উপত্যকার মধ্য দিয়ে তারা বান্দরবানে ছড়িয়ে পড়ে।

    তৃতীয় দলটি সীতাকুণ্ডু অঞ্চল থেকে খাগড়াছড়িতে প্রবেশ করে।

    চতুর্থ দলটি বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করে বৃহত্তর পটুয়াখালীর দক্ষিণ অঞ্চলেপৌছে এবং সেখানে বসতি গড়ে তোলে।

    এরপরও কি আপনারা এদেশের দখলদার ও সেটেলার (বসতিস্থাপনকারী) নন ?

    তারপরও কেন আপনারা নিজেদের সেটেলার অপবাদকে এদেশের ভূমিপুত্র বাঙ্গালীদের ঘাঁড়ের উপর চাপাতে চাইছেন ?

    কি, অন্য কোন মতলব টতলব নাই তো ?

  11. খুব সুন্দর লিখা। তথ্য সমৃদ্ধ। যে গুলোর কোন জবাব রাজাকার, খুনী, সন্তু কিংবা ভন্ড দেবাশীষের কাছে নেই। আসলে সন্তু দেবাশীষ প্রজন্মের এই চাকমারা একটা বেহায়া লাজ লজ্জাহীন সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছে। ইহুদীদের মতো। অভিশপ্ত। যে পাতে তারা খায় সে পাতেই তারা পায়খানা করে। সবকিছু দিবালোকের মত সত্য জানার পরেও ওরা ঘাড় টেরা। ঐ টেরা ঘাড় সোজা করতে হবে। তার সাথে “সাদা চাকমা চামরাভুক” দালাল কুত্তাদেরও শায়েস্তা করতে হবে।

    1. 2i abar kon cipa doye eli? AARE beta tora tow 11years er meye ke ow dhorson korte paros…. eita kokhon paros je 11 yrs er moto nijer meye/bhon er moto meye ke rap korte, ………….. asole ciron sotto, KUTTAR lex kokhono soja hoi na, hobeo na….eibar dekh, behaia tow tora…… kotek mash aage LONGUDU te yeasin namer 1 kutta 11 yrs 1 meyeke dhorson & khun kore…….

  12. আমার পরিচয় আদিবাসী হোক, বা বাঙ্গালী হোক, বা নিগ্রো হোক এই নামে আমি আমার পরিচয় স্বাস্ছন্দ্যেবোধ করি। কিন্তু আদিবাসীর ‍উপর বাঙ্গালী বা বাঙ্গালীর উপর আদিবাসী শব্দটি ঘাড়ে ছেপে দেওয়া আপনি কে? আদিবাসী শব্দটি শুনতে এত কিসের ভয়?

  13. বাংলাদেশের সকল উপজাতি এবং বাঙ্গালী সমপ্রদায় যাতে সমান নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে পারে এটাই কাম্য ।

  14. সকল বাঙ্গালী যেমন বাংলাদেশী তেমনি উপজাতি সম্প্রদায় যারা কয়েক পুরুষ ধরে বাংলাদেশে আছে তারা ও বর্তমানে বাংলাদেশী । তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে ও তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালীদের বহিরাগত ভাবা যেমন ঠিক নয় । তেমনিভাবে বাংণাদেশের যেসব এলাকায় উপজাতিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় তাদের পূর্ণ অধিকার আছে সকল নাগরিক সেবা ভোগ করার ।

  15. এখানে আদিবাসীদের নিয়ে যারা বাজে কমেন্ট করছে ওরাই হচ্ছে মূর্খ যাতি কারন একজন সু-শিক্ষিত লোক কোন দিনও বোকামির কথা বলে নিজেকে মূর্খতা প্রমাণ করেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন