পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ২

মেহেদী হাসান পলাশ, mehadi Hassan Palash

মেহেদী হাসান পলাশ
গত ১৬ জুন পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধনী-২০১৩ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা। বিলটি উপস্থাপনের আগে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বিলের উপর আপত্তি দিয়ে বিলটি সংসদে উপস্থাপন না করার জন্য স্পিকারকে অনুরোধ করেন। সংসদ সদস্যের আপত্তির মুখে স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী বিলটি কণ্ঠ ভোটে দেন। বিলটিতে সরকার দলীয় সংসদীয় সদস্যরা হ্যাঁ ভোট ও বিরোধী দলীয় জোট সদস্যরা না ভোট দিলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতায় হ্যাঁ ভোট জয়যুক্ত হলে বিলটি সংসদে উপস্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী।

বিলটি উপস্থাপনের পর বিলটি পরীক্ষা নীরিক্ষা করে ৭দিন পর সংসদে উপস্থাপনের জন্য  ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরনের জন্য স্পিকার কণ্ঠভোটে দেন। বিরোধী দলীয় সদস্যরা না ভোট দিলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিলটি ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিতে প্রেরিত হয়। সে হিসাবে আগামী ২৩ জুন সংসদে পরীক্ষিত বিলটি চুড়ান্তভাবে পাশের জন্য উপস্থাপিত হওয়ার কথা।

১৭৫৭ সালের এই ২৩ জুনে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার ভাগ্য বিপর্যয় ঘটেছিল। ২৫৫ বছর পর আরেক ২৩ জুনে পার্বত্য বাঙালীর ভাগ্য নির্ধারিত হতে পারে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে। শুধু বাঙালীর নয় বাংলাদেশের ভাগ্যও হয়তো এ দিনেই লেখা হতে পারে। কারণ এই সংশোধনী প্রস্তাবে এমন কিছু ধারা রয়েছে যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।

পার্বত্য চুক্তির ঘ খন্ডের ৪ নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল চলিবেনা’। অন্যদিকে ভূমি কমিশন আইনের ১৬ নং ধারায় বলা হয়েছে,‘ উক্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোন আদালত বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল বা রিভিশন দায়ের বা উহার বৈধতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।’ এখানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও এখতিয়ারকে খর্ব করা হয়েছে এবং একই সাথে তা সংবিধান বিরোধী। কারণ বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকার খণ্ডে ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী।’ কিন্তু পার্বত্য চুক্তি ও ভূমি কমিশন আইনের ফলে সেখানকার অধিবাসীরা কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীল করতে পারবেন না। কমিশন ও এর আইন উপজাতি ঘেঁষা হওয়ায় সেখানে বৈষম্যের শিকার হবেন পার্বত্য বাঙালীরা।
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী ও পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেনা।’ কিন্তু কমিশনে সদস্য, সচিব ও কর্মচারী নিয়োগের বেলায় এই বৈষম্য প্রকটাকারে পরিদৃষ্ট।

এখানে কেউ কেউ হয়তো সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদ, ২৯(৩)(ক) ধারা উল্লেখ করে ‘নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশের’ জন্য সংবিধানের উল্লিখিত ধারার বিশেষ রেয়াতের সুবিধা নিতে চাইবেন। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশের’ মধ্যে ৮৭% শিক্ষিত চাকমারা পড়েন কিনা তা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের ভেবে দেখতে হবে। একই সাথে যুগ যুগ ধরে বৈষম্যের শিকার পার্বত্য বাঙালীরা কোন বিবেচনায় ‘অগ্রসর’ জনগোষ্ঠীভুক্ত হলেন তাও রাষ্ট্রকে তদন্ত করে দেখতে হবে। কারণ, শিক্ষাদীক্ষা, চাকুরী ও অবস্থানগত সুবিধার কারণে শুধু বাঙালী নয় উপজাতীয় অন্যসকল গোত্র শোষিত হচ্ছে চাকমাদের দ্বারা। পার্বত্যাঞ্চলের জন্য রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাকিতভাবে বরাদ্দকৃত কোটাসহ সকল প্রদত্ত সুবিধা ভোগ করছে চাকমা জনগোষ্ঠী। পারফেক্টলি বললে বলতে হয়, চাকমা সমাজের কয়েকটি গোত্র মাত্র। অন্যসকল উপজাতি এ সুবিধার সামান্যই ভোগ করতে পারে।

একইভাবে পার্বত্য চুক্তি ও ভূমি কমিশনের উল্লিখিত ধারা বাংলাদেশ হাইকোর্ট ও সুপ্রীম কোর্টের এখতিয়ারকে খর্ব করে। সংবিধানের ১০১, ১০২(২) এর উপধারা (অ), (আ), ও ১০৯ ধারার সাথে তা সরাসরি সাংঘর্ষিক।

শান্তিচুক্তির ঘ খণ্ডে ৪ নং ধারায় কেবলমাত্র ‘ পুনর্বাসিত শরণার্থীদের জমিজমা বিষয়ক বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি’র কথা বলা হয়েছে। একইভাবে ভূমি কমিশন আইনের ৬(ক) ধারায়ও ‘পুনর্বাসিত শরণার্থীদের ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন ও রীতি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা’র কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ চুক্তি ও আইন অনুযায়ী কেবল পুনর্বাসিত শরণার্থীদের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করাই এ কমিশনের দায়িত্ব। এখানে পার্বত্য অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাঙালীদের ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ নেই। কাজেই বাঙালীদের কোনো কোনো সংগঠন তাদের দাবীতে ভূমি কমিশনে সমানুপাতিক হারে বাঙালী সদস্য রাখার যে দাবী তুলছে তা, হয় আইন না জানা কিংবা না বোঝার ফল অথবা আপসকামিতার দৃষ্টান্ত। ভূমি কমিশনে সমানুপাতিক হারে কেন, সকল সদস্যই বাঙালী হলেও তাতে বাঙালীদের উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই যদি বিদ্যমান আইন বহাল থাকে। অর্থাৎ কমিশন সদস্যরা বিচার করবেন যে আইনে, সে আইন যতক্ষণ পর্যন্ত বাঙালী ও দেশের স্বার্থের অনুকূল না হবে, সে পর্যন্ত এই কমিশন বাঙালীর স্বার্থ বিরোধী হয়েই থাকবে। অন্য কথায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন’ উপজাতীয়দের ‘ঐতিহ্য’ ‘রীতি’ ও ‘পদ্ধতি’ অনুযায়ী বিচার পরিচালিত হলে কমিশনের সদস্য বাঙালী হলেও তাদের কিছুই করার থাকবে না। কারণ বিচার আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে।  

চুক্তির ৬(খ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কমিশন ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন’, ‘রীতি’ ও ‘পদ্ধতি’ অনুযায়ী বিরোধ নিষ্পত্তি করিবেন’। আবার কমিশন আইনের ৬(গ) ধারায় বলা হয়েছে,  ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত আইন বহির্ভুতভাবে কোন ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হইয়া থাকিলে উহা বাতিলকরণ এবং উক্ত বন্দোবস্তজনিত কারণে কোন বৈধ মালিক ভূমি হইতে বেদখল হইয়া থাকিলে তাহার দখল পুনর্বহাল।’ সংশোধনীর ধারা ৬(১)(গ) তে বলা হয়েছে, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি বহির্ভুতভাবে ফ্রীঞ্জল্যান্ড (জলেভাসা জমি)সহ কোন ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান এবং বন্দোবস্তজনিত কারণে কোন বৈধ মালিক ভূমি হইতে বেদখল হইয়া থাকিলে তাহার দখল পুনর্বহাল শব্দাবলী প্রতিস্থাপন করা’।

অর্থাৎ এই ভূমি কমিশন কাজ করবে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন অনুযায়ী। বাংলাদেশর আইন অনুযায়ী নয়। এর সাথে স্থানীয় ‘রীতি’ ও ‘পদ্ধতি’ শব্দটিও যুক্ত করা হয়েছে। এখানে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন’, ‘রীতি’ ও ‘পদ্ধতি’ শব্দগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতা, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সংবিধান, সরকারের কৃর্তৃত্ব ও বাঙালীর অস্তিত্বের স্বার্থে খুবই গুরুত্বপুর্ণ।
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন বলতে পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের ২(ছ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রচলিত আইন বলিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে এই আইন বলবৎ হইবার পূর্বে যে সমস্ত আইন, ঐতিহ্য, বিধি, প্রজ্ঞাপন প্রচলিত ছিল কেবলমাত্র সেইগুলিকে বুঝাইবে।’অর্থাৎ ২০০১ সালের পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত আইন বোঝাবে।

এখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন বলতে আমরা কয়েকটি আইনের অস্তিত্ব দেখতে পাই। এর মধ্যে ১৯০০ সালে ব্রিটিশ সরকার প্রণীত পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি- পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বপ্রথম আইন। দুটি বিশেষ কারণে ব্রিটিশ সরকার এই আইন করেছিল বলে মনে করা হয়। ১. পার্বত্য জনগোষ্ঠীর বিশেষ প্রবণতার প্রতি লক্ষ্য করে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও ২. কর আদায়।
প্রথম কারণে বিট্রিশ সরকার এ আইনে বিপুল ক্ষমতা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সুপারিন্টেন্ডেট নামে একটি পদ সৃষ্টি করে-যা পরে ডেপুটি কমিশনার নামে পরিচিত হয়। দ্বিতীয় কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনটি সার্কেল প্রধান বা রাজার অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়া হয়। যদিও সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদটি  এসেছে ১৮৬০ সালের আইন থেকে, ১৮৮১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্ত পুলিশ বিধি প্রণয়েনের মাধ্যমে পাহাড়ীদের মধ্য থেকে একটি পুলিশ বাহিনী গঠনের ক্ষমতা দেয়া হয়।
এ সব মিলেই ১৯০০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি প্রণয়ন করা হয। মূলত কর আদায়ের সুবিধার্থে সেখানে রাষ্ট্রিয় কাঠামোর মধ্যে কারবারী আদালত, হেডম্যান আদালত ও সার্কেল চীফ আদালত গঠন করা হয়। কর, ভূমি ও সামাজিক সমস্যা নিরসনে পার্বত্য বাসিন্দারা প্রথম কারবারী আদালতে বিচার প্রার্থনা করবে, কারবারী আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হেডম্যান আদালতে এবং হেডম্যান আদালতের বিরুদ্ধে সার্কেল চীফের আদালতে আপীল করার ব্যবস্থা রয়েছে। আবার সার্কেল চীফের রায়ের বিরুদ্ধে ডেপুটি কমিশনারের কাছে আপীল করা যাবে। তবে ডেপুটি কমিশনারকে পার্বত্য রীতি, ঐতিহ্য ও পদ্ধতি সম্পর্কে সার্কেল চীফের পরামর্শ গ্রহণ করার বিধান রাখা হয়। তবে ব্রিটিশদের এই আইনে পার্বত্য চট্টগ্রামে হেডম্যানের অনুমতি ছাড়া অস্থানীয় কাউকে ভূমি বরাদ্দ বা ভূমি অধিগ্রহণ করার সুযোগ রাখা হয়নি।

ব্রিটিশদের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল একটি বহির্ভূত রাজ্য এলাকা। কর আদায়ই ছিল তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য। ফলে ১৯০০ সালে প্রণীত পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রবিধানে তার প্রভাব পড়ে। ব্রিটিশ আইনটি পাহাড়ী জনগোষ্ঠী জন্য কোনো অনুকূল আইন ছিলনা। কারণ এই আইনের মাধ্যমেই পাহাড়ের ভূমি পাহাড়ীদের হাত থেকে দলিল ও বন্দোবস্তির নামে সরকারের হাতে চলে যায়। অর্থাৎ পাহাড়ের মালিকানা পাহাড়িদের পরিবর্তে সরকারের হাতে চলে যায়। কিন্তু রাজা হিসাবে সার্কেল চীফরা বহাল থাকায় তারা এই আইনের প্রতিবাদ করেনি। এটি ছিল ব্রিটিশের ডিভাইড এ- রুল পলিসির অংশ বিশেষ। 

প্রতিকূল আইন হওয়া সত্ত্বেও আজ পাহাড়ীরা ১৯০০ সালের ব্রিটিশ প্রবিধানকে ধন্য ধন্য করছেন তার একমাত্র কারণ এই আইনে পাহাড়ে বাইরের লোকদের পাহাড়ে পুনর্বাসন ও জমির বন্দোবস্তি পাহাড়ীদের হাতে ছিল বলে। এ ছাড়া এই আইনে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন স্বীকার করে নেয়া হয়।
অন্যদিকে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এটি যখন রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত হয় তখন এই আইন তাদের পক্ষে আত্মিকরণ করা সম্ভব ছিলনা। বিশেষ করে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট যখন ভারত ভাগ হয় এবং পার্বত্য প্রভাবশালী জনগোষ্ঠী রাঙামাটিতে ভারতীয় পতাকা ও  বান্দরবানে বার্মার পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সে পতাকা বেশ কিছুদিন যাবত পাকিস্তানে উড়েছিল।

১৭ আগস্ট র‌্যাডক্লিফ রায় প্রকাশিত হবার পর ২১ আগস্ট পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেই পতাকা নামিয়ে ফেলে। ১৭ আগস্ট রায়ের পরও পাহাড়ীরা প্রতিবাদ জানিয়েছিল রায়ের বিরুদ্ধে। এ প্রেক্ষিতে পাকিস্তান সরকার ১৯০০ সালে প্রণীত পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রবিধানমালা- পাকিস্তানের রাষ্ট্রিয় কাঠামোতে অনুমোদন দেননি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্বশাসনকে মেনে নেননি। বরং ১৯৫৮ সালে ভূমি অধিগ্রহণের নিমিত্তে আরেকটি নতুন প্রজ্ঞাপন জারী করেন। এই প্রজ্ঞাপনের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ করে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরী করা হয়। এটিও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন।   

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বেশ কিছু উপজাতীয় সদস্য অংশগ্রহণ করলেও বর্তমান চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়ের পিতা ত্রিদিব রায় ও বোমাং রাজার এক ভাই পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলেন। ত্রিদিব রায় আজীবন পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য পোষণ করে গত বছর পাকিস্তানেই মারা গেছেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানেও পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্বশাসন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি- ১৯০০ কে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তবে এরশাদ সরকারের শাসনামলে ১৯৮৯ সালে ব্রিটিশ বিধি অনুসরণে জেলা পরিষদ আইন সৃষ্টি করা হয়। এ আইনে জমি বন্দোবস্তি হেডম্যানদের হাত থেকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের হাতে অপর্ণ করা হয়। তবে আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদ চেয়াম্যান অবশ্যই একজন উপজাতীয় হবেন।

তবে অনেকেই  এখন ১৯০০ সালে প্রণীত পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন বলে প্রচার করতে চাইছেন। কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোতে এই বিধি গ্রহণের সুযোগ নেই। প্রথমত, এই বিধি একটি উপনিবেশিক ধারণা সঞ্জাত আইন। দ্বিতীয়ত, এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্বশাসনকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। সেকারণে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোতে এই বিধিকে গ্রহণ করা হয়নি। এখন যদি এই বিধি অনুসরণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান করা হয় তাহলে আইনগতভাবেই পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বায়ত্বশাসনের পথে এগিয়ে যাবে। কারণ এ বিধির উৎস ও পরিণতি সন্ধান করলেই এ কথা পরিস্কার বোঝা যাবে। এ বিষয়ে তথ্য প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। তবে এ লেখায় সেই দীর্ঘ আলোচনার সুযোগ নেই।

এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত ‘রীতি’, ‘পদ্ধতি’ ও ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত ‘রীতি’, ‘পদ্ধতি’ ও ‘ঐতিহ্য’ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও লিখিত কোনো দলিল পাওয়া যায়না। মূলত এটি কতকগুলো ধারণা ও আচারের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত রীতি, পদ্ধতি ও ‘ঐতিহ্য’ বলতে উপজাতীয়দের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতি, পদ্ধতি ও ঐতিহ্যকে বোঝায়। ভূমির ক্ষেত্রে এই রীতি, ঐতিহ্য ও পদ্ধতি হচ্ছে: পাহাড়ীরা ভূমির ক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকানা, দলিল দস্তাবেজে বিশ্বাসী নয়। তাদের কাছে ভূমি সামষ্টিক অধিকার। পাহাড়ের জমি হচ্ছে সর্বসাধারণের সম্পত্তি। যার মালিক হচ্ছে জনগোষ্ঠী, জ্ঞাতিগোষ্ঠী এমনকি তাদের প্রেত লোকের সদস্যরাও। একক পরিবারগুলো জমি ব্যবহারের অধিকার ভোগ করে থাকে মাত্র। ফলে পাহাড়ীরা মনে করে জমি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এর মালিক তারাই।

জুম চাষের জন্য তারা প্রত্যেক বছর এক স্থান থেকে অন্য স্থনে বসতি স্থানান্তর করে থাকে। কাজেই বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে যেখানে তারা জুম চাষ করেছে, বসতি গড়েছে সে জমি তাদের, আগামীতেও যে সকল জমি তাদের চাষের আওতায় আসতে পারে সে সকল জমিও তাদের। পাহাড়ের রীতি অনুযায়ী যে জমিতে তারা চাষাবাদ করেছে/করবে, যে জমি/পাহাড়/বন থেকে তারা আহার সংগ্রহ করেছে, করে বা করবে। যে জমিতে তারা বসতি স্থাপন করেছিল/করেছে/করতে পারে, যে জমি দিয়ে তারা চলাচলের জন্য ব্যবহার করে থাকে, যে জমি থেকে তাদের পোষা প্রাণী খাবার সংগ্রহ করে থাকে, যে জমি তার দৃষ্টি সীমায়, স্বপ্ন ও কল্পনায় তা তাদের সকলের। এখানে নির্দিষ্ট মালিকানা বা দলিলের অস্তিত্ব নেই।
কাজেই এই রীতি বা ঐতিহ্য বা পদ্ধতি অনুযায়ী যদি ভূমি কমিশন বিচার করে সে ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালীর অস্তিত্ব ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে বাধ্য।

আইনের ১৬ নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘বর্ণিত কোন বিষয়ে দাখিলকৃত আবেদনের উপর কমিশন প্রদত্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ানী আদালতের ডিক্রী বলিয়া গণ্য হইবে।’ দেওয়ানী আদালত একটি সাংবিধানিক আদালত। এর বিচারপতিগণ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও সংবিধান রক্ষায় শপথবদ্ধ থাকেন। অন্যদিকে কমিশনের প্রধান ও অন্যান্য সদস্যরা কেউই শপথবদ্ধ নন। চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হওয়ায় তিনিও শপথবদ্ধ নন, আবার বাকি সদস্যরা সাধারণ উপজাতীয় যারা হয়তো চুক্তির আগে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন এমন কেউ হতে পারে। বিশেষ করে জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদ থেকে যাদের নাম আসবে তাদের ক্ষেত্রে সাবেক শান্তিবাহিনীর সদস্য আসা স্বাভাবিক অথচ তারা শপথবদ্ধ নন। হতে পারে তারা ইউপিডিএফ ও জেএসএস এর সামরিক শাখার গোপন সদস্য।

এছাড়াও অতীতে কোনো মামলা যদি দেওয়ানী আদালতে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে, বা দেওয়ানী আদালতে চলমান কোনো মামলা যদি এই কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয় তাহলে কমিশনের ভূমিকা কি হবে তা স্পষ্ট নয়। কিম্বা একই মামলা একপক্ষ কমিশনে এবং অন্যপক্ষ দেওয়ানী আদালতে বিচার প্রার্থনা করলে কমিশনের ভূমিকা কি হবে তাও স্পষ্ট নয়। দেওয়ানী আদালত ও কমিশনের মধ্যে কার অবস্থান ঊর্ধ্বে তাও পরিষ্কার নয়। সাংবিধানিক আদালতকে অসাংবিধানিক চুক্তির আওতায় গঠিত কমিশনের ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া যায় কিনা সে প্রশ্নটিও বিশাল।
 
তাহলে সরকার কি করবে? শান্তিচুক্তির মধ্যে কিছু অসাংবিধানিক ধারা যে বিদ্যমান তা উচ্চ আদালতের রায় দ্বারা স্বীকৃত। যদিও সে রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত অবস্থায় রয়েছে। তবে উপরিউক্ত আলোচনায় এ কথা প্রমাণিত যে, ভূমি কমিশন তেমনি একটি ধারা বা আইন। বিষয়টি উচ্চ আদালতের দৃষ্টিতে নিলে তা বাতিল হতে বাধ্য বলে অনেক আইনজ্ঞ মনে করেন। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যা মোকাবেলায় সরকারের করণীয় হলো, শান্তিচুক্তির ভূমি কমিশন সংক্রান্ত ধারা ও ভূমি কমিশন আইন বাতিল করে দেশের প্রচলিত দেওয়ানী আদালতে এ সমস্যার সমাধান করা। মামলা দ্রুততর করা ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে সরকার একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ঘোষণা করতে পারে। তবে তার আগে অবশ্যই ভূমি জরীপের মাধ্যমে ভূমির সীমানা ও মালিকানা নির্ধারণ করতে হবে। নিরাপত্তার অজুহাতে যদি ভূমি জরীপ না করা হয়, বা করা সম্ভব না হয় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তার জন্য বিশাল আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

মনে রাখা প্রয়োজন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অংশ। এখানে যা কিছু করা হবে তা দেশের প্রচলিত সংবিধান ও আইন মেনেই করতে হবে।

♦ Email: [email protected]

সৌজন্যে: দৈনিক ইনকিলাব

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে লেখকের আরো কিছু প্রবন্ধ

পার্বত্য চট্টগ্রাম জাতীয় দৃষ্টির মধ্যে রাখতে হবে

একটি স্থায়ী পার্বত্যনীতি সময়ের দাবী

বাংলাদেশে আদিবাসী বিতর্ক

আদিবাসী বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনের ভুল ব্যাখ্যা ও অপপ্রয়োগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ১

পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ২

পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ৩

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী
Facebook Comment

18 Replies to “পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ২”

  1. Dear মেহেদী হাসান পলাশ Dada,

    This is not argument but sharing with you. May I asked you the same question, Adivasi ra কি মানুষ নন? You must be knowing much more better, the history of CHT n how the bengali settler came in CHT. Everyone of us are citizen of this country, so every citizen must be treated same but why adivasi are treated different?, why we r discriminated?, why our land is grabbed? why settler are rehabilitated in adivasi land? why we r not recognize as adivasi? My last question to you is If someone grab your land what would be your reaction? You r not victim so you don’t understand it. Hope you r well educated and have sense to observe and evaluate any situation. Please get clear idea on CHT than start doing anything you like.

    1. সুকান দাদা, আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। বিশেষ করে আপনার প্রশ্নগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তার কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। আপনার প্রথম প্রশ্ন আদিবাসীরা কি মানুষ নন?
      তারা শুধু মানুষ নয় মহা মানব। আজকের এই সভ্যতা তাদের হাত ধরেই এসেছে। তারাই মানব জাতির বা আমাদের পূর্বপুরুষ। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
      আপনি বলেছেন, বাঙালীরা কেন সিএইচটি তে এসেছে?
      আমার ধারণা ইতিহাস সম্পর্কে আপনার ভাল জ্ঞান আছে। সিএইচটি বলে আগে কিছু ছিল কিনা আপনি জানেন। আপনি জানেন, সিএইচটির বর্তমান জন্ম এরশাদের আমলে। তবে ব্রিটিশ আমলেও এমন একটি ধারণা দেখতে পাই। সিএইচটি কখনো চট্টগ্রামের সাথে কখনো বার্মার সাথে অধীভূক্ত ছিল। আর সেই ভূখণ্ডে বাঙালীরা ছিল অনেক আগে থেকেই । নিশ্চিত করে ‘আদিবাসীদের’ আগে থেকেই। এই ভূখণ্ডে সবচেয়ে প্রাচীন ‘আদিবাসী’ আগমন ত্রিপুরা ও কুকিদের ৭০০- ৯০০ বছর আগের। আপনি জানেন, বাংলাদেশ তো বটেই চট্টগ্রামে মানুষের বসতি আরো বহু পুর্বে থেকে।
      আসলে আপনার প্রশ্নগুলো খুব ছোট কিন্তু উত্তর গুলো এতো দীর্ঘ যে তা সম্পূর্ণ দিতে গেলে একটা বড় বই হয়ে যাবে। তবু আপনার প্রশ্নগুলোকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু উত্তর দিতে চাই।
      আপনি লিখেছেন ‘স্যাটেলার’ রা কেন আদিবাসীদের ভূখণ্ডে বসতি গড়ছে?
      আপনি যখন সিএইচটির বাইরে স্যাটেল করছেন তখনকি আপনাকে কেউ ‘স্যাটেলার’ বলে? আমাদের আদি সংবিধানে আপনার জাতিসত্বার স্বীকৃতি দেয়া হয়নি বলে আপনি ৪০ বছর ধরে সংগ্রাম করছেন। আমি আপনার এই সংগ্রামের গণতান্ত্রিক রূপকে শ্রদ্ধা জানাই ও সমর্থন করি। কারণ সব মানুষেরই নিজস্ব পরিচয়ে বাঁচবার অধিকার আছে। কিন্তু আপনি শুধু নিজেরটা বোঝেন, অন্যের প্রতি প্রবল অশ্রদ্ধা। আপনি যেমন উপজাতি নন, চাকমা জাতি, মারমা জাতি। তেমননি আপনার ‘স্যাটেলারদের’ দের কিন্তু একটা পরিচিতি আছে, তারা ‘বাঙালি’। আপনাকে কেউ উপজাতি বললে যতখানি বুকে বাঁধে, বাঙালীদের ‘স্যাটেলার’ বললে তার চেয়ে কম বাধেনা। কারণ হাজার বছর ধরে তারা এই পরিচিতির জন্য সংগ্রাম করে আসছে। অথচ শান্তি চুক্তির মাধ্যমে আপনি তাদের পরিচয় কেড়ে নিয়ে বলেছেন, ‘অউপজাতি’আর নিজেকে বানিয়েছেন ‘উপজাতি’।
      আমি জানি এখন আপনি জাতিসংঘের সংঙ্গার কথা বলবেন। এ অনেক দীর্ঘ আলোচনা। আপনি জানেন এটা তাদের নতুন সংজ্ঞা। এর আগেরও তাদের আরো সংজ্ঞা ছিল। আগামী দিনেও এটা পরিবর্তন হবে না তার গ্যারান্টি নেই। আগের সংজ্ঞাগুলোতে আপনারা ‘আদিবাসী’ পর্যায়ে পড়তেন না বলে নতুন এই সংজ্ঞা করা হয়েছে। কিন্তু ভবিষতের সংজ্ঞায় যদি আপনারা বাদ পড়েন- মানবেন? জাতিসংঘ উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো কাজ করে না। ভবিষ্যতে তার সংজ্ঞায় হয়তো অন্য কোনো অঞ্চলের লোকেরাও আদিবাসী হিসাবে জন্ম লাভ করবেন।
      ভবিষ্যতের কথা থাক। খুব সংক্ষেপে বর্তমান সংজ্ঞার কথা বলি। আদিবাসী হতে হলে নিজস্ব ধর্ম, সংস্কৃতি ও জীবনপদ্ধতি ঐ সংজ্ঞায় গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানিনা আপনি কোন জাতি? কোনো চাকমা যদি মুসলিম হয় তাকে কি আপনারা আদিবাসী বলে মানবেন? মানবেন না কারণ সে তার আদি ধর্ম, সংস্কৃতি পরিবর্তন করেছে। আপনি বলবেন কি বাংলাদেশের চাকমাদের আদি ধর্ম কি? তারা বৌদ্ধ কতদিন থেকে? তার আগে তারা কি কি ধর্মে ছিল? যেসব ‘আদিবাসী’ তাদের আদি ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে তাদের কে কি আদিবাসী বলা যায়? কারণ এই ধর্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের জীবনপদ্ধতি ও সংসকৃতিতের বিভিন্ন মাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। নাকি শুধু ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রেই এই সংজ্ঞা প্রযোজ্য! যারা জুম চাষ ছেড়ে নাগরিক হয়েছে, রবিবারে গির্জায় যায়, ব্রাণ্ডের পোষাকে আলমিরা ভর্তি তাদেরকে কি এই সংজ্ঞায় ফেলা যায় শুধু বৈসাবী, আদিবাসী দিবস বা এমন দুএকটি দিনে ট্রাডিশনাল পোশাক পরার কারণে। বৈসাবিও তো মাইগ্রেটেড। কারণ পহেলা বৈশাখের জন্ম বেশিদিনের নয়। শেষ কথা আপনি যেমন কোনো ‘আদিবাসী’ মুসলমান হলে তাকে আদিবাসী বলেন না, আমিও তেমনি সঞ্জিব দ্রং মাইকেল সঞ্জিব দ্রং হলে আদিবাসী নেতা মনে করিনা।
      অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা আমার লেখাটি পড়ার ও প্রশ্ন করার জন্য।

  2. পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে এই প্রবন্ধ টি লেখার জন্য মেহেদি হাসান পলাশ ভাইকে আন্তরিক অভিনন্দন। আশাকরি এর মাধ্যমে সরকারের অন্ধ চোখ খুলে যাবে।

    1. শাহাব উদ্দিন ভাই, সরকারের চোখ কিন্তু দুটোই খোলা। বরং আপনি একটা চোখ বন্ধ করে রেখেছেন তাই দেখতে পাচেছন না। আপনিও দুটো চোখ দিয়ে ভালো করে দেখুন সব দেখতে পাবেন। মনে রাখবেন আওয়ামীলীগ সরকার নিজের ক্ষতি করে কাউকে উপকার করেনা। উস্কানিমূলক বক্তব্য না দিয়ে সরকার কি করছে দেখুন। পাহাড়ীদের কি অবস্থা বানায়।

  3. পার্বত্যঞ্চলের বর্তমান প্রেক্ষাপটকে পুঙ্খানুপুঙ্খুভাবে বিশ্লেষন করে অভূতপূর্ব এই বিশ্লেষণধর্মী মূল্যবান লেখাটি লেখার জন্য লেখককে পার্বত্য বাঙ্গালী তথা সারা বাংলার সমস্ত বাঙ্গালীর পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও অশেষ কৃতজ্ঞতা ।

  4. পলাশ ভাই, আপনার প্রবন্ধটি পড়ে যতটুকু পেলাম তা হচ্ছে- উগ্রতা, সাম্প্রদায়িকা ও উস্কানিমূলক বক্তব্য বেশি উঠে এসেছে। আপনার লেখাটা বাঙ্গালীজাতীর জন্য একটা মারত্মক সুন্দর লেখা হয়েছে এটা ঠিক। সেজন্য আপনাকে আমিও ধন্যবাদ দিচ্ছি। কিন্তু একজন প্রাবন্ধিক হিসাবে আপনার এক পক্ষের লেখাটা মানানসই হয়নি। আপনার নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে আদিবাসী কিংবা পাহাড়ী বা বাঙ্গালী ও অন্য কোন গোষ্ঠির পক্ষ না নিয়ে লেখলে আরো বেশী সমাদৃত হতেন। আপনার বক্তব্য অনুযায়ী ২৩ জুন ২০১৩ তারিখে বাঙ্গালী জাতি পরাজয়ের তারিখ মনে করছেন। কোন দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার ‍এই করা, আমি ঠিক জানি না। শুধুমাত্র সামান্য একটু উদাহরণ দিতে চাই ১৯৯৭ সালের শান্তিচুক্তি। তখনও কিন্তু বাঙ্গালীরা কালোচুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে কালো পতাকা টাঙ্গিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে। কিন্তু এখন সেটা কোন পযার্য়ে? সুস্থ মষ্তিষ্কে চিন্তা করলে ক্ষতি কার বেশী হয়েছে? একটু ভেবে দেখবেন? ভুমি কমিশনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার কথা বলছেন- বেশীর ভাগ পাহাড়ী সদস্য। সুতরাং পাহাড়ীদের দাবীই কাযর্কর হবে। সাদাসিদে চিন্তা করলে তাই হয়। কিন্তু না? সরকারের আজ্ঞাবাহকদের(নাম বলবনা) দিয়ে যদি কমিশন গঠন করা হয়, এই কমিশনে ১০০ জন পাহাড়ী সদস্য হলেও সমস্যা নেই। আমার মতে (সরকার যাদেরকে নিয়ে এসেছে তাদেরকে বৈধ বলবো)বৈধভাবে যে বাঙ্গালী এসেছে তাদেরকে সঠিকভাবে পুনর্বাসন করলে সমস্যা থাকবেনা। বিভিন্ন সময়ে অনেকের আত্মীয় সুত্রধরে,ব্যবসার উদ্দেশ্যে পার্বত্যচট্টগ্রামে এসেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে এদের জন্যও পরবর্তীতে একটা ব্যবস্থা করলে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। পলাশ ভাই আপনি বলেন, পার্বত্য জেলাগুলোতে বিভিন্ন আনাচে কানাচে অনেক বাঙ্গালী পরিবার রয়েছে। আপনি গিয়ে দেখুন তাদের কি মিল। বরং বাইরে থেকে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে এদেরকেও বিপযর্স্ত করছে। ভাই আমার পরামর্শ হচ্ছে, কাউকে উসকিয়ে না দিয়ে শান্ত ও সুস্থ মষ্তিষ্কে চিন্তা করুন এবং লিখুন, সব পাবেন। খাগড়াছড়ি কোর্টে একটু গিয়ে দেখুনতো? পাহাড়ী-বাঙ্গালী মামলা কয়টা? বাঙ্গালী-বাঙ্গালী মামলা কয়টা? পাহাড়ী-পাহাড়ী মামলা কয়টা? আপনি একজন লেখক হিসেবে এগুলো আপনাকে দেখতে হবে। অনেক লেখলাম। ভুল হলে, সরি–সরি–সরি।

    1. ৥জাকির সাহেব, আপনি যেহেতু লেখার শেষে বলেছেন, ‘ভুল হলে, সরি–সরি–সরি।’ সে কারণে আপনার লেখার খুব বেশী উত্তর দিতে চাইনা। কারণ, আপনার বক্তব্য নিয়ে আপনার নিজেরই কনফিউশন আছে। শুধু একটা কথা বলি, খুব সাদাসিধে ভাবে, খুব সরলভাবে আপনি বিষয়টি নিয়ে চিন্তুা করেন। আমার লেখাটাও সেভাবেই পড়েছেন। না হলে আপনার অনেক প্রশ্নের উত্তর এর মধ্যে আছে। যাই হোক, আপনাকে আরো পড়তে বলবো। বিশেষ করে প্রথম পার্টটা পড়বেন আশা করি।

  5. মোঃ শাহাব উদ্দিন, পানছড়ি, খাগড়াছড়ি। says:

    প্রিয় জাকির ভাই, আপনি বলেছেন আওয়ামীলীগ নিজের ক্ষতি করে অন্যের উপকার করেনা। আমি বিভিন্ন জায়গায় দেওয়াল লিখন দেখলাম উপজাতীয়রা লিখেছে ‘আওয়ামীগ-বিএনপি হতে সাবধান’। এতে কি আপনি বলবে যে, আওয়ামীলীগের কোন ক্ষতি হবেনা? আর যেহেতু সরকার তাদের অধিনে সব কিছুই বাস্তবায়ন করে দিচ্ছে তাই তাদের শক্তিটাও বেশি থাকবে আর তখন সরকার (‘আওয়ামীগ-বিএনপি হতে সাবধান’ এই লেখার ভিত্তিতে বলছি) অত্র এলাকার সংসদীয় আসন ও হারাতে পারে। এর পরও কি আপনি বলবেন যে আওয়ামীলীগের কোন ক্ষতি হবেনা?
    [বিঃদ্রঃ ভুল হলে ছোট ভাই হিসেবে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ]

    1. Someone is trying to use my name and my tribes name for their own personal profit. We love Bangladesh as much as anybody else. Please keep your eyes and ear open. Look for the truth behind it.

  6. খুব সুন্দর একটি সাজানো গোছানো তথ্য সমৃদ্ধ লিখা। তবে শিরোনামটা ঠিক হয় নি। পুরো লিখাটার প্রায় সবকিছু কোট (উদ্ধৃতি)করার মত। তবে একটা কথা বলি—– চাকমারা কোন দিকে যাচ্ছে তা আমরা সবা্ই কিন্তু বুঝতে পারি। যারা বুঝেন না ভাব দেখান তারাও বুঝেন—-কিন্তু মাথা বিক্রি, সাদা চামড়া, লাল পানি,দালালির কারণে কিংবা অতি উদারতা দেখাতে গিয়ে তারাও এমন ভাব দেখান যে—- চলুক না শান্তি চূক্তির ধারাবাহিকতায় এবং চাকমাদের দাবী অনুযায়ী সবকিছু। —– কাশ্মীর এর মত একটা রাজ্য ভারত দখল করে নিল সবার চোখের সামনে। কত প্রাণ গেল। কত দাবী আন্দোলন কোন কিছুতেই কিছু হলো না। আর আমাদের রক্ত দিয়ে কেনা এ দেশকে চাকমাদের কাছে বিক্রি করার কত আয়োজন। কিসের বালের চুক্তি আর ভূমি কমিশন আইন। চূক্তি তো অবৈধ। এ চূক্তির জন্য শেখ হাসিনার একদিন বিচার হবে। ভূমির আবার প্রথাগত মালিকানা কি? আজব ব্যাপার। প্রথাগত আবার কি? প্রত্যেকটা পাহাড়ী পরিবারকে ১৯৭৬- ২০০০ সন পর্যন্ত ৫.০ একর করে ভূমি বন বিভাগের মাধ্যমে (ঝুমিয়া পূনর্বাসন প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দোবস্তী দেওয়া হয়েছে। ) সে খবর বা আলোচনা সম্ভবত: বর্তমানের জেলা প্রশাসন সমূহ ও আর্মি কেউ জানে না। বন বিভাগ ও উন্নয়ন বোর্ডের কাছে তথ্য চান। নাম তালিকা সহ পাবেন। এছাড়া অন্যান্য প্রকল্পেও তাদেরকে ভূমি বন্দোবস্তী দেয়া হয়েছে। শুধু ভূমি নয় বন বিভাগ তাদের বাড়ী ঘর করে দিয়েছে। ফল বাগান করে দিয়েছে। শুকর, মুরগী কিনে দিয়েছে। বান্দরবানের শ্যারণ পাড়া, আলুটিলার ত্রিপুরা পাড়া সহ অসংখ্য চাকমা পাড়া এভাবে পূনর্বাসিত করা হয়েছিল। আজকে যে আনারস আসে হিল থেকে তা বন বিভাগের অবদান। বন বিভাগ সেখানে তাদেরকে চারা সরবরাহ করে আনারস বাগান করে দিয়েছিল। সেই দিনের পাহাড়ীরা আজো বেঁচে আছে জিজ্ঞাসা করলে জানা যাবে। আমি অনেকের সাথে আলাপ করে তা জেনেছি। সরেজমিন দেখেছি। কাজেই প্রত্যেকের জমির কাগজ আছে। তাই কাগজপত্র নাই অথচ কল্পনা করে ভূমির মালিক পৃথিবীর কোন আইনে নাই। সম্ভবও নয়। এইরূপ কল্পনার মালিকানা চা্ইলে তারা বাংগালীদের সব বৈধ জমি জায়গা তাদের বলে দাবী করবে। তখন কি করবে বালের কমিশন? বন্ধ করো এসব ফাজলামো। ছিড়ে ফেল বালের চুক্তি। বাংগালীরা ঐক্যবদ্ধ হও। চারিদিতে ষড়যন্ত্র। ”এ তুফান ভারী দিতে হবে পাড়ি হাকিছে ভবিষ্যত……….”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন