রাঙামাটি থেকে ম্রো গাইডসহ দুই পর্যটককে অপহরণ করেছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা

fec-image

অপহরণ

স্টাফ রিপোর্টার:

রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার সিদ্ধুপাড়া থেকে উপজাতীয় গাইডসহ দুই পর্যটককে অপহরণ করেছে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। গতকাল রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে তাঁদের অপহরণ করা হয়। স্থানীয় সূত্রগুলো আরাকান লিবারেশন পার্টি (এ্নএলপি) নামের মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপকে এই অপহরণের জন্য দায়ী বলে সন্দেহ করছে।

অপহৃত ব্যক্তিরা হলেন বান্দরবানের রুমা উপজেলার ট্যুরিস্ট গাইড প্রাচিংহাই ম্রো এবং ঢাকা থেকে বেড়াতে যাওয়া পর্যটক জোবায়ের ও মুন্না। এ সময় অপহরণকারীরা পথ দেখিয়ে দিতে দুই স্থানীয় যুবককে জিম্মি করে নিয়ে গেলেও ভারতীয় সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কাছাকাছি গিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেয়।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই পর্যটক দলটি গত ২৯ সেপ্টেম্বর বান্দরবান যায়। রুমা, কেউক্রাডং প্রভৃতি এলাকা ঘুরে রাঙামাটি প্রবেশ করলে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়তলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিদ্ধুপাড়া এলাকা থেকে ১০/১২ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদের অপহরণ করে। এসময় অপহরণকারীদের কাছে অনেক ভারী অস্ত্রশস্ত্র ছিল গেছে বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, যে জায়গা থেকে তাদের অপহরণ করা হয়েছে তা মিয়ানমানের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ এএলপি অধ্যুষিত এবং অত্যন্ত দূর্গম। এর পাশের আরাকান আর্মির অবস্থান। এটি বাংলাদেশ-ভারত- মিয়ানমার সংযোগ সীমা রেখার খুব কাছাকাছি।  ফলে অপহৃতদের অবস্থান নিশ্চিত করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, বান্দরবানের রুমা থেকে গাইড প্রাচিংহাই ম্রোকে নিয়ে রাইক্ষ্যংপুকুর লেক দেখতে যান ঢাকার দুজন পর্যটক। তাঁরা রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়তলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিদ্ধুপাড়া এলাকায় গেলে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের সদস্যরা তাঁদের অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে।

এ বিষয়ে রাঙামাটির বড়তলী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আতমং মারমা ওই দুই যুবকের বরাত দিয়ে জানান, বড়তলী ইউনিয়নের সিদ্ধুপাড়া থেকে অস্ত্রের মুখে গতকাল দুপুরে একজন গাইড এবং দুজন পর্যটককে অপহরণ করে নিয়ে গেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের সদস্যরা। অপহরণকারীরা ভারত সীমান্তের রাস্তা দেখিয়ে দিতে সিদ্ধুপাড়া থেকে স্থানীয় দুই যুবককেও ধরে নিয়ে যায়। ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কাছাকাছি নিয়ে গিয়ে স্থানীয় দুজন যুবককে ছেড়ে দেয় তারা।

অপহরণকারী সন্ত্রাসীরা মিয়ানমারের রাখাইন ভাষায় কথা বলেছে বলেও জানান এ জনপ্রতিনিধি।

নিরাপত্তাবাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অপহৃতদের উদ্ধারে নিরাপত্তা বাহিনী ভারত-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে।

এদিকে, অপহরণকারীদের মুক্তির দাবিতে আজ সোমবার সকালে বান্দরবানের রুমায় পাহাড়িরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

স্থানীয়দের মতে, সম্প্রতি আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনীর কঠোর অবস্থানের সাথে এই অপহরণের যোগসূত্র থাকতে পারে। কেননা, একই দিন দুপুর ২টায় কেওক্রাডং যাবার পথে আনন্দপাড়াসংলগ্ন নির্জন জঙ্গলে ব্যারিকেড দিয়ে সন্ত্রাসীরা আট পর্যটককে আটক করে। পরে তাদের কাছ থেকে ক্যামেরা, টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেয়। তবে লুণ্ঠিত মালামাল পরিবহনের জন্যে লালজিং বম নামের একজন গাইডকে সন্ত্রাসীরা অজ্ঞাত স্থানের উদ্দেশে নিয়ে যায়। ঘটনার দুই দিন পরও লালজিং বম ফিরে আসেনি। এ ঘটনাটিও আরাকান আর্মি ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে সরকার এরই মধ্যে বান্দরবানের থানচি উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

উল্লেখ্য গতকাল রবিবার সকাল আটটায় বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার মাতামুহুরী রিজার্ভের কচ্ছপঝিরি এলাকা থেকে দুই কলা ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছে সন্ত্রাসীরা। এমএনপি’র একটি অংশ এই অপহরণের সাথে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন