২ বছর ধরে জড়াজির্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় আইসিডিপি-সিএইচটির নির্মিত পাড়া কেন্দ্রগুলো
থানচি প্রতিনিধি:
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ইউনিসেফ সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প আইসিডিপি-সিএইচটি। এ প্রকল্পের বান্দরবানে থানচি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে নির্মিত পাড়া কেন্দ্রের অধিকাংশ কাঁচা ঘর প্রবল ভারী বর্ষণে ভেঙ্গে রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে অকেজো, জড়াজির্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় গত ২ বছর ধরে পড়ে রয়েছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পাড়া কেন্দ্রগুলিতে নতুন করে সুপারভাইজার ও কর্মী নিয়োগের ইতিমধ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
প্রকল্পের উপজেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক ওয়াশিম মোহাম্মদ রায়হান বলেন, সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প (আইসিডিপি-সিএইচটি) নাম পরিবর্তন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প নামে পরিচিত হবে।
থানচি উপজেলা আইসিডিপি-সিএইচটি প্রকল্পের আওতায় মোট ১০২টি পাড়া কেন্দ্রের সাড়ে তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি কোমল মতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে দীর্ঘদিন ধরে ব্যহত হচ্ছে। অভিভাবক মহলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি কার্যালয়ের অনুপস্থিত পাড়া কর্মীদের সম্মানি ভাতা না দেয়াসহ গাফিলতিকে দায়ী করেছেন।
মূলত পার্বত্য অঞ্চলে হত দরিদ্র জুমিয়া পরিবারের সাড়ে তিন থেকে পাঁচ বছরে কোমলমতি শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক স্তর শেষ করে প্রাথমিক স্কুলের ভর্তি উপযোগী গড়ে তোলা ও যোগ্যতা নিশ্চিৎ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রকল্পের মূল উদেশ্য ।
১৯৮৩ সালে তিন পার্বত্য জেলায় ও উপজেলাগুলোতে প্রকল্পের যাত্রা শুরু করেন। প্রকল্পের শুরুতে নিজস্ব ভূমি অধিগ্রহণ না থাকায় পাড়া প্রধানদের বাড়িতে কেন্দ্র হিসেবে শিশুদের পাঠদান করছিল। ১৯৯৬ সালে ১০-১২টি পাড়া কেন্দ্র (ঘর) নির্মাণের মধ্য দিয়ে ক্রমন্বয়ে ২০১৩ সালে সকল পাড়া কেন্দ্র নির্মাণ সমাপ্তি ঘটে। প্রতিটি পাড়া কেন্দ্র (ঘর) নির্মাণে ৬৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে বান্দরবান জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২০১৪-১৫ সালে ১০টি পাড়া কেন্দ্র নির্মাণ করে দিয়েছে।
তথ্য সূত্র মতে, থানচি উপজেলা চার ইউনিয়নের ১০২টি পাড়া কেন্দ্রের শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ১০২জন পাড়া কর্মী (শিক্ষক) ও মনিটরিং জন্য ১০ সিনিয়র পাড়াকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। পাড়াকর্মীদের মাসিক সাড়ে তিন হাজার সিনিয়র কর্মীদের ছয় হাজার টাকা সম্মানি ভাতা ধার্য্য করেন। তিন মাস অন্তর বেতন প্রদানে নিয়ম রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাড়া কেন্দ্র ঘুরে চার ইউনিয়নের থানচি হেডম্যান পাড়া, মরিয়ম পাড়া, বড় মদক বাজার পাড়া, বলিপাড়া, সাখয়উ পাড়া, পানেডং পাড়া, চাইথোয়াইহ্লা পাড়া, কামছি খুমী পাড়া, দলিয়াং পাড়া, আময় ম্রো পাড়া, মরিয়ম ত্রিপুরা পাড়াসহ অর্ধশতাধিক পাড়া কেন্দ্রগুলিতে অকেজো, জড়াজির্ণ ও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে।
কথা হলে পাড়াকর্মী মেনলে ম্রো ও ন্যাদুই ম্রো জানান, গত ৭ মাস ধরে আমাদের মাসিক সম্মানি ভাতা দেয়া হয়নি। মাসের সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে সংসার চালাইতে হিমসিম খাচ্ছি ।
জানতে চাইলে ইউনিসেফ আইসিডিপি-সিএইচটি উপজেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক ওয়াশিম মোহাম্মদ রায়হান বলেন, মোট কেন্দ্রের মধ্যে বর্ষায় প্রবল বর্ষণে ভেঙ্গে যাওয়ার ৫২টি পাড়া কেন্দ্রের সাময়িকভাবে শিশুদের পাঠদানে ব্যহত হচ্ছে। ঊর্ধ্বতম কর্তৃপক্ষকে লিখিত আবদেন ও চাহিদা দাখিল করেছেন। বাজেট না হওয়া পাড়া কেন্দ্র (ঘর) নির্মাণ বা সংস্কার করার সম্ভব হয়নি। তবে প্রকল্প নাম পরিবর্তন ও কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া চলতি মাসের মধ্যে শেষ হবে। কর্মী নিয়োগ হওয়া পর ধীরে ধীরে রক্ষনাবেক্ষণ অভাবে অকেজো, জড়াজির্ণ ও পরিত্যক্ত স্কুল ঘর গুলো নির্মাণ করার প্রক্রিয়া রয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা বলেন, আমি কর্মকর্তাদের নিয়মিত উপস্থিতির বিষয়ের অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। ভেঙ্গে যাওয়া পাড়া কেন্দ্রগুলি জরুরী ভিক্তিতে সংস্কারে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ বীর বাহাদুরের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।