হাইকোর্টের রায়ের পরও রাঙামাটিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধীর নাম বহাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: হাইকোর্টের রায়ের পরও রাঙামাটিতে যুদ্ধাপরাধীর নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এলাকার নাম বহাল রয়েছে। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে সচেতন মহলে। তারই বহিপ্রকাশ ঘটেছে রবিবার অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সভায়। বৈঠক সূত্রে জানাগেছে,  হাইকোর্টের রায়ের পরও স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী রাজাকার ত্রিদিব রায়ের নামে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এলাকার নামকরণ এখনো বহাল থাকায় বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ।

গত বছরের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দেশের বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ সবস্থাপনা থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম মুছে ফেলার নির্দেশ দিলেও অদ্যাবদি রাঙামাটি শহরে অবস্থিত রাজা ত্রিদিব নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামটি পরিবর্তন না করায় সভায় উপস্থিত জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়েন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। এসময় হাইকোর্টের দেওয়া রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন কমিটির সদস্যরা।

সভায় উপস্থিত মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভার উপদেষ্টা পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, কেউ আইনের উর্দ্ধে নয়। আইন সবার জন্যে সমান। হাইকোর্টের দেওয়া রায় মানতে আমরা সকলেই বাধ্য। এরই আলোকে অতি দ্রুততম সময়ে উক্ত রায় বাস্তবায়নের অনুরোধও করেন জেলা প্রশাসনকে। রায়ের এতো মাস পরও রাঙামাটিতে তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় তিনি সভায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন।

এদিকে, সভায় জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োজিত একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে তাকে সংযুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে কোনোভাবেই ত্রিদিব রায়ের নাম পরিবর্তন করা যাবে না মর্মে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করে বক্তব্য রাখেন রাজা ত্রিদিব নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মায়াধন চাকমা।

কে রাজাকার বা কি ছিলো সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়, ত্রিদিব রায় একজন গুণি ব্যক্তি, সন্মানিত ব্যক্তি এবং চাকমা সমাজের প্রতীক উল্লেখ করে মায়াধন চাকমা বলেন, তিনি রাজাকার হলে আমরা আমাদের রেজুলেশনে নিয়ে আসতাম। তার নামে বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়েছে স্থানীয় জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে।

এটি কোনো ব্যক্তির নাম নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা একটি প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারি সকল প্রকার শর্তাবলী মেনেই নামকরণ করা হয়েছে। এই নামেই বিদ্যালয়টির নামকরণ ছিলো, আছে এবং থাকবে এটাই আমাদের দাবি এবং এটাতেই আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তার এই বক্তব্যে আইনশৃঙ্খলা সভায় কিছুটা সরগরম হয়ে উঠে।

এসময় রাঙামাটিতে সরকার নিযুক্ত প্রধান কৌসুলী সিনিয়র আইনজীবি এ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম দাড়িয়ে মায়াধন চাকমার বক্তব্যের ব্যাখ্যায় বলেন, হাইকোর্টের রায়ে ষ্পষ্টভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাজাকারদের নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থাপনাসহ কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে নামকরণ সম্বলিত সাইনবোর্ড, নামফলক রাখা যাবে না। সুতরাং ত্রিদিব রায় একজন চিহ্নিত ব্যক্তি তার নামে একটি সরকারি বিদ্যালয়ের নামকরণ রাখা যায় না। এটা আইনত অপরাধ।

এদিকে সভায় উপস্থিত রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে’সহ উপস্থিত অনেকেই হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় বিষয়টি অবিলম্বে সুরাহাপূর্বক রায় বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অনুরোধ করেন সভার সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সিনিয়র সচিব প্রকাশ কান্তি চৌধুরী।

রোববার বেলা এগারোটার সময় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী’র সভাপতিত্বে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির এই সভায় বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার শহিদ উল্ল্যাহ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহাদাৎ হোসাইন, এনএসআই’য়ের উপপরিচালক ছানোয়ার হোসেন, জেলা পরিষদ সদস্য ত্রিদিব কান্তি দাশ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. সুমনী আক্তার, রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য মনিরুজ্জামান মহসিন রানা, স্কাউট কমিশনার নুরুল আবছার, হারুন মাতব্বর প্রমূখ। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানগণ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ, সরকারি বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা, প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন