শিশু নিহতের প্রতিবাদে সাজেকে শনিবার সকাল সন্ধা সড়ক অবরোধের ডাক

তততততত

সাজেক প্রতিনিধি :

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের শিজকছড়া পানির পয়েন্ট নামক স্থানে শিশু নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল ১০.৩০ সাজেকের মাচালং বাজারে রাস্তায় আগুন দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে উপজাতীয়রা।বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রিপন চাকম, সুমন চাকমা,চিক্য চাকমা, রিকো চাকমা, সাগরিকা চাকমা,মরধছ চাকমামা সহ প্রমুখ।

এসময় বক্তারা সরকারের প্রতি কয়েকটি দাবী তুলে ধরেণ কর্মসূচি ঘোষনা করেন। কর্মসূচি গুলো হচ্ছে: (ক) শিশু নিহতের প্রতিবাদে সাজেকে শনিবার সকাল সন্ধা সড়ক অবরোধ। (খ) রবিবার সাজেকে সরকারি বেসরকারী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শোক পালন ও কালো বেইচ ধারণ। (গ) রবিবারের মধ্যে সমস্যা সমাধান না হলে সোমবার থেকে অর্নিদিষ্টকালের জন্য সাজেকে সড়ক অবরোধ চলবে।

দাবী: (ক) নিহত শিশুর ক্ষতিপূরণ বাভত ১০লক্ষ টাকা প্রদান করতে হবে। (খ) দ্রুত গতিতে পর্যটকের গাড়ী চলাচল বন্ধকরতে হবে (গ) বিদ্যালয় ও দোকানের সামনে স্পিড ব্রেকার এবং প্রতিটি মোড়ে সাংক্ষেতিক চিহ্ন দিতে হবে।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে মাচালং বাজারে সাজেক সড়কে টায়ারে আগুন দিয়ে পর্যটকদের গাড়ী চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষুদ্ধ উপজাতী জনতা। এসময় সেখানে শতাধিক পর্যটকের গাড়ী আটকা পরে, খবর পেয়ে বাঘাইহাট জোনের অধিনায়ক লে.ক আলী হায়দার সিদ্দিকি ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন আনেন এবং আটকে পরা পর্যটকদের সাজেকে যাওয়ার ব্যাবস্থা করেন।

এনিয়ে শুক্রবার সন্ধায় সাজেক থানায় সমন্বয় বৈটক হয় এতে উপস্থিত ছিলেন ওসি নুরুল আনোয়ার, সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা, মাইক্রোবাসের মালিক পক্ষ, নিহত শিশুর বাবা দয়াম্বর চাকমা সহ এলাকার কার্বারী বৃন্ধ। এসময় নিহত শিশুর পিতা ক্ষতিপূরণ বাবত দশ লক্ষ টাকা দাবী করে এবং মালিক পক্ষ থেকে তা দিতে অসিকৃতি জানায় তাদের পক্ষে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে পারবে বলে জানান মালিক পক্ষ আর না হলে আইন অনুযায়ী মামলা করতে বলেন মালিক পক্ষ তাই উভয় পক্ষে মাঝে সমজোতা না হওয়ায় আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় আবারও বৈটকের কথা বলা হয়।

উল্লেখ্য গতকাল বৃহসপ্রতিবার শিজকছড়া পানির পয়েন্ট নামক স্থানে এক পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসের ধাক্কায় ১ শিশু নিহত হয়। এ সময় মাইক্রোবাসটি রাস্তা থেকে ৭০ফুট নিচে খাদে পড়ে গেলে ১১ জন মারাত্মক আহত হয়। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুর নাম ছায়া রাণী(৮)। আহতরা খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে মাচালং বাজারের উপজাতিরা সিজক ছড়ায় শিশু নিহতের খবর পেয়ে মাচালং বাজারে পর্যটকদের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। আহতদের উদ্ধার করে আনা পিকআপ গাড়ীটিকে মাচালং বাজারে গতিরোধ করে। গাড়িতে থাকা আহত উপজাতি শিশুটিকে বের করে অন্য একটি জীপ গাড়িতে তুলে খাগড়াছড়ির দিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ সময় আহত পর্যটকবাহী পিকআপ গাড়ির চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয় উপজাতি বিক্ষুদ্ধরা। ফলে গাড়িতে আটকা পড়া আহত পর্যটকরা গাড়িতে কাতরাতে থাকলেও উপজাতিদের মধ্যে কোনো দয়া সৃষ্টি করতে পারেনি।

এই ঘটনার সময় পার্বত্যনিউজের সাজেক প্রতিনিধি মো. জুয়েল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করলে উপজাতি নারী-পুরুষেরা সাংবাদিক জুয়েলের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেয় এবং তার উপর চড়াও হয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এসে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, সাজেক ভ্রমণকারী পর্যটকের গাড়ি দেখে দোকান থেকে রাস্তায় দৌড়ে এসে উপজাতি শিশু ২টি হাত নেড়ে টাটা দেয় এবং চকলেট নেওয়ার জন্য দ্রুত গাড়ির সামনে চলে আসলে মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের চাপা দেয়। এ সময় ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয় এবং মাইক্রোবাসটি রাস্তা থেকে ৭০ফুটের মত পাহাড়ের নিচে পড়ে যায়।

এ ঘটনার খবর পেয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুফিদুল আলম দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। তিনি নিহত ছায়া রাণীর পিতা দয়াম্বর চাকমা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে কথা বলেন এবং নিহত শিশুর সৎকার করার খরচ উপজেলা প্রশাসন থেকে দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং এ দূর্ঘটনার ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে আগামী রবিবার মালিক পক্ষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বসে এই সমস্যা সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি।

তাৎক্ষনিক সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোনের পক্ষ থেকে নিহত শিশুর বাবার হাতে নগদ দশহাজার টাকা তুলে দেন মেজর এইস,এম সেরিসুজ্জান।

রাত ৮টার দিকে যৌথবাহিনীর সহযোগিতায় রাস্তা থেকে গাড়ি সড়িয়ে নেয় অবরোধকারীরা।

উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ি সাজেক সড়কে রাস্তার পাশে রিজার্ভ ফরেস্টে জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিপদজনক বসতি ও দোকানপাটগুলো সড়ক দূর্ঘটনার কারণ হতে পারে তা পার্বত্যনিউজের একাধিক রিপোর্টে ইতোপূর্বেই প্রকাশিত হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন