শীতকালে হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়

লাইফস্টাইল ডেস্ক:

শীতকালে হৃদরোগে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটাই মতামত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ‘কার্ডিওভাস্কুলার’ অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের জন্য শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপামাত্রা কমে যাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক।

কারণ, শীতের সংস্পর্শে আসলে বুক ব্যথা শুরু হতে পারে। হৃদরোগের আক্রান্ত কিংবা আগে হৃদরোগের চিকিৎসা করিয়েছেন এমন প্রতিটি মানুষের জন্য শীতকাল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সময়।

চিকিৎসকদের মতে শীতকালে বুকে যে কোনো ধরনের অস্বস্তি, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, ঘাড়, বাহু, চোয়াল ও কাঁধে ব্যথা হওয়া এবং দম নিতে অসুবিধা হওয়াকে মোটেও হেলাফেলা করা যাবে না।

কারণ এগুলো হল হৃদযন্ত্রের কার্য সম্পাদনে ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ।

নয়া দিল্লির দয়ার্কাতে অবস্থিত ভেঙ্কাটেশ্বর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অনিল ধাল বলেন, “শীতকালে হৃদযন্ত্রের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে রক্তচাপ বৃদ্ধি। শীতল আবহাওয়ায় ধমনী সংকুচিত হয়ে থাকার কারণে তা দিয়ে রক্ত সরবরাহ করতে হৃদযন্ত্রকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। শীতকালে রক্তে নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিনের মাত্রাও বেড়ে যায়, ফলে ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।”

“শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক মাত্রা কমে যাওয়াকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় ‘হাইপোথামিয়া’ যা অনেক হার্ট অ্যাটাকের কারণ।”

তিনি আরও বলেন, “আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে বাতাসের বিভিন্ন দূষিত উপাদান। শীতকালে এই দূষিত উপাদানগুলো মাটিতে জমে থাকে যা থেকে হতে পারে বুকের প্রদাহ এবং তা থেকে বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি। অপরদিকে, শীতকালে মানুষ বেশি অলস হয়ে পড়ে, ফলে মানুষর মধ্যে হতাশাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। ডাক্তারি ভাষায় এই পরিস্থিতিতে বলা হয় ‘সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজওর্ডার (এসএডি)।”

“এই অলসতা এবং হতাশাগ্রস্ততা দুই মিলে হৃদযন্ত্রের পরিস্থিতি আরও খারাপ করে ফেলে।”

বৃদ্ধ এবং যাদের হৃদযন্ত্রে সমস্যা আছে তাদের হৃদযন্ত্রের পক্ষে এই বাড়তি চাপ সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা।

এছাড়াও, শীতকালে কোলেস্টেরলের মাত্রা অতিরিক্ত ওঠানামা করে। যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

হার্ট কেয়ার ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া (এইচসিএফআই)’য়ের সভাপতি ডা. কে.কে. আগারওয়াল বলেন, “প্রত্যেক হৃদরোগীর উচিত শীতকালে হৃদযন্ত্র এবং মানসিক চাপ বিষয়ক পরীক্ষা করানো। খাওয়ায় অনিয়ম, রাত জাগা, সময়মতো ওষুধ সেবন না করা এবং ধূপমান বা মদ্যপানের কারণেই হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে এই ঋতুতে।”

এর থেকে বাঁচতে করণীয়:

* শরীরচর্চা স্বাস্থ্যের জন্য সবসময়ই ভালো, আর হৃদরোগীদের জন্য তা অবশ্য কর্তব্য। তবে শীতের সকালে তীব্র ঠাণ্ডায় হাঁটতে না যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বরং বিকালে কিংবা সন্ধ্যায় সূর্যের আলো ফুরিয়ে যাওয়া আগে হাঁটতে যাওয়া ভালো।

* শরীরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখতে ঘরের ভেতরে বেশি সময় পার করা উচিত। অন্যান্য শীতের কাপড়ের পাশাপাশি হাত ও পায়ে মোজা পরতে হবে। গোসল করতে হবে গরম পানি দিয়ে।

* একবারে ভারী আহার সব বয়সেই হৃদযন্ত্রের উপর বাড়তি চাপ ফেলে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবারও কম পরিমাণে নিয়ে কয়েকবারে খেতে হবে। পানি ও লবণ গ্রহণের মাত্রার উপর নজর রাখতে হবে।

* যেকোনো বিপদ-আপদের জন্য পুরো পরিবারকে প্রস্তুত থাকতে হবে। বুকে অস্বস্তি, ঘাম, হাঁসফাস অনুভুতি, ঘাড়, কাঁধ কিংবা চোয়ালে ব্যথা, পায়ের তলায় ঘাম ইত্যাদি সমস্যাকে অবহেলা করা যাবে না। একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *