শান্তিচুক্তি-পরবর্তী পার্বত্য পরিস্থিতি ও করণীয়

শান্তিচুক্তি
আব্বাস তরফদার 

২ ডিসেম্বর ২০১৪ ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ১৭ বছর পূর্তি হয়েছে। ১৯৯৭ সালের এই দিনে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য উপজাতি তথা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-এর মধ্যে। তখন সবাই আশা করেছিল, এই চুক্তির পর পাহাড়ি এলাকায় পার্বত্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিনের সশস্ত্র সংগ্রামের ইতি ঘটিয়ে তারা দেশের মূলস্রোতে ফিরে আসবে, পাহাড়ে বাঙালি-নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীরা মিলেমিশে বসবাস করবে, বইবে কাক্সিক্ষত শান্তির সুবাতাস। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সেদিনের সে আশা এখনও পূরণ হয়নি।
ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধুনা বন্ধ হয়ে যাওয়া ফেসবুক পেজ CHT-Jummaland থেকে দুটি উদ্ধৃতি দেওয়া হলো-
‘সেটেলারদের সাথে যুদ্ধ বাঁধিয়ে ফেলাই উত্তম কাজ হবে। কারণ, …(৫টি কারণ)… বাংলাদেশ সরকারের অনেক টালবাহানা সহ্য করেছি, অতএব আর নই! সেটেলারদের সাথে যুদ্ধ করে হয় জীবন দেবো, না হয় পার্বত্য চট্টগ্রামকে সেটেলারমুক্ত অঞ্চলে পরিণত করবো!’

‘এত সুন্দর সুন্দর পর্যটন বানানোর দরকারটা কি? কয়েকদিন পরেইতো সকল দখলকৃত পাহাড়িদের জমির সাথে পর্যটনকেন্দ্রগুলো ফিরিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনী ও সেটেলার বাঙ্গালীদের সমতলমুখী হতে হবে। পাহাড়ে পাহাড়িদের জন্য স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। সমতল থেকে পাহাড়ে আসতে চাইলে পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে পাহাড়ে আসতে হবে। আর সেই ভিসা যে সহজে সেটেলার ও সেনাবাহিনীকে দেয়া হবে না তা নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে।’
উপরে দেওয়া দুটি উদ্ধৃতি কোন বিচ্ছিন্ন স্ট্যাটাস নয়, পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। পাহাড়ি নৃগোষ্ঠীগুলো ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে সরকার, পাহাড়ি বাঙালি ও সেনাবাহিনী তথা দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে এক প্রকার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে যা কোনভাবেই কাম্য ছিল না। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০-এ সামহোয়্যারইন ব্লগে ব্লগার ফিউশন ফাইভ ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম : ওয়েবে আমার বাংলাদেশ যেভাবে ধর্ষিত হচ্ছে প্রতিদিন’ শিরোনামে এক অসাধারণ গবেষণামূলক পোস্ট দিয়ে দেখিয়েছিলেন তাদের বাংলাদেশবিদ্বেষী প্রচারণার বিবরণ। তখন ফেসবুক এত জনপ্রিয় ছিল না, এখন ফেসবুক ও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় এই ঘৃণা ও কুৎসাপিডিয়ার দৌরাত্ম্য আরও অনেক বেড়েছে। তাদের এই দৌরাত্ম সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য এক নজর চোখ বুলানো যেতে পারে জুম্মো ব্লগ, আদিবাসী নিউজ, Kapaeeng Foundation, CHTBDBLOG, VOICE OF JUMMALAND, Jumma Net, Jummapeoples, Jumma Peoples Network UK, Genocide in Chittagong Hill Tracts, UNREPRESENTED NATIONS AND PEOPLES ORGANIZATION (UNPO), Human Rights Congress for Bangladesh Minorities (HRCBM), Asian Centre For Human Rights (ACHR) Gi Asian Centre For Human Rights, Present Jummaland এবং বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর লোকদের ফেসবুকের ব্যক্তিগতসহ পেজগুলোতে। পার্বত্য উপজাতি তথা নৃগোষ্ঠীর কতিপয় ব্যক্তির লেখালেখি বা ভাষ্যে তারা ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি’কে বলছে বলছে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’। খুব সচেতনভাবেই তারা ‘শান্তি’ শব্দটাকে বিলোপ করে দিয়েছে, স্পষ্টতই শান্তি শব্দটাকে তারা কখনও তাদের মনমানসিকতায় স্থান দিতে পারেনি বা হয়তো তারা শান্তি চায়ওনি!
সরকারের ভাষ্য মতে, ভূমিবিরোধ ছাড়া চুক্তির প্রায় সকল ধারা বাস্তবায়ন করার পরও পাহাড়িদের পৌনঃপুনিক অভিযোগ ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। এই ভূমিবিরোধের মূলে আছে পাহাড়ি গোষ্ঠীর আদিম ভূমি-ব্যবস্থা, যা বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত নয়, সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণও নয়। তারা জমি দাবি করে, কিন্তু তার স্বপক্ষে দখলদারিত্বের প্রমাণ দেখাতে পারে না, দলিলতো নয়ই।

স্মর্তব্য যে, ১৯৬৫ সালে ঈঐঞ জবমঁষধঃরড়হ ড়ভ ১৯০০-এর ৩৪ ধারা রহিত করা হয়, ফলে ১৫ বছরের অধিককাল ধরে বসবাসরত উপজাতিদের জমির মালিকানার অনুমতি দেওয়া হয়- বাঙালিদের তাই অধিকাংশের রয়েছে মালিকানার সরকারি দলিল। অন্যদিকে পাহাড়ি নৃগোষ্ঠীর লোকদের মালিকানার হাওয়াই দাবি করতে গিয়ে নানা স্থানে বনবিভাগের জমি দাবি করে বসছে, কোথাওবা খাস জমি, কোথাও-বা অন্য বাঙালির জমি। কখনও-বা ভুলে, কখনও-বা মিথ্যা লোভে। পাশাপাশি তারা কাজ করে যাচ্ছে বাঙালি খেদানোর বিদ্বেষী এজেন্ডা এবং এরই আলোকে হঠাৎ উদ্ভাবিত ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের স্বীকৃতির পাঁয়তারা। মূলত নৃগোষ্ঠীগুলোর বিরোধিতার কারণেই বারংবার ভূমিবিরোধের সুরাহা করা যায়নি। এইখানে বাঙালি-নৃগোষ্ঠী সকলকে সাংবিধানিক নিয়মের আওতায় আসতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সকলের সমতাভিত্তিক সততা ও ত্যাগের মনোভাব, সর্বোপরি-শান্তি প্রতিষ্ঠার আন্তরিক ইচ্ছা। এই সমস্যার সমাধানে বাঙালি-নৃগোষ্ঠী সকলকে নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পকে জলাঞ্জলি দিতে হবে। পাহাড়ি নৃগোষ্ঠীকে বুঝতে হবে, অনেক বিরোধিতা সত্ত্বেও শান্তিচুক্তিতে তাদের সকল ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার মেনে নিয়ে তৎকালীন সরকার সাহসের সাথে চুক্তি করেছিল পাহাড়ের প্রায় অর্ধেক বাঙালি জনগোষ্ঠী তথা ‘জাতীয় স্বার্থ বিসর্জনের অভিযোগ’ তুচ্ছ করে শুধুমাত্র শান্তি আনার লক্ষ্যেই (২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ তারিখে বিবিসির সংবাদদাতা ফ্রান্সেস হ্যারিসনের রিপোর্ট দ্রষ্টব্য) এবং উপজাতীয় সংস্কৃতির স্বীকৃতির মাধ্যমে সংবিধানে প্রতিফলিত হয়েছিল এমএন লারমার স্বপ্ন।

শান্তিচুক্তির পরও সেখানে রয়েছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি, বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ রয়েছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কাছে। বেড়েছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীর গোষ্ঠীর সংখ্যা আর তাদের তৎপরতা হয়েছে আরও অবাধ। চাঁদাবাজির ব্যাপ্তি বেড়েছে বহুগুণে। বছরে সেখানে চাঁদাবাজির পরিমাণ প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা বলে অনুমান করা হয়। বাঙালিরা এখনও তাদের জমিতে দল না বেঁধে যেতে পারে না, অনেক স্থানেই তারা গুচ্ছগ্রামে বন্দি হয়ে মানবেতর ও নিগৃহীত জীবন কাটান। তারা চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছে অথবা অপহৃত হচ্ছে অথবা আহত-নিহত হচ্ছে, উৎখাত হচ্ছে ঘরবাড়ি ও জমিজিরাত থেকে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৮ জন নিহত হয়েছে, ১২৬ জন আহত হয়েছে, ৮৭ জন অপহৃত হয়েছে, ৪৪টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে-যার প্রায় সবগুলোর দায়দায়িত্ব পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর। শান্তিচুক্তির শর্ত স্পষ্টতই লঙ্ঘিত হয়েছে, হচ্ছে। শান্তিচুক্তিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো অস্ত্র সংবরণ ও সন্ত্রাস বন্ধের ওয়াদা করেছিল-সেই অস্ত্র সংযত না হলে, সন্ত্রাস বন্ধ না হলে এই শান্তিচুক্তি অর্থহীন ও অকার্যকর। কেননা, কোন চুক্তিই কখনও একপক্ষীয়ভাবে পালিত হয় না, চুক্তি মানার সব দায় সরকারের না-পার্বত্য জাতিগোষ্ঠীগুলোকেও চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, নিজেদের করণীয়ের দায় নিতে হবে। দৃশ্যত শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য পার্বত্য নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে সন্তু লারমা উপযুক্ত একক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না-পার্বত্য নৃগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের সময় থেকে অদ্যাবধি শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে এসেছে ও করছে এবং সর্বশক্তি দিয়ে শান্তি স্থাপন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। এমনকি, বর্তমানে সেই বিরোধিতা আরও দল ও মতে বিখণ্ডিত হয়েছে; পাহাড়ে আগে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, চাঁদা আদায়, হত্যাকারী ছিল শুধুমাত্র একটি আঞ্চলিক দল, আর এখন তা দাঁড়িয়েছে তিন গ্রুপে-সন্তু লারমার অবস্থান আরও দুর্বল হয়েছে। এই সন্ত্রাসের শিকার সবাই পাহাড়ের নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালি।

পার্বত্যাঞ্চলে সেনাক্যাম্পগুলো ক্রমাগত কমে এসেছে এবং অনেক পরিত্যক্ত ক্যাম্পেই ঠাঁই নিয়েছে সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। আধিপত্যকামী পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো চাঁদার মাধ্যমে এবং বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী মহলের অনুদানের অর্থে নিয়মিত ভারত ও মিয়ানমারের রুট দিয়ে অস্ত্র নিয়ে আসছে। বস্তুত বিজিবি ক্যাম্পবিহীন অরক্ষিত ৪৫ কিমি দীর্ঘ পার্বত্য সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আনা তেমন কোন কঠিন বিষয় নয়। গত বছর বিষয়টি নজরে আসে কতিপয় চাকমা সন্ত্রাসী কর্তৃক এমনই এক অস্ত্রের চালান ভারতের আসাম রাইফেলস ও মিজোরাম পুলিশ কর্তৃক আটকে দিয়ে চারজন বাংলাদেশী চাকমাকে গ্রেফতার করার মধ্যদিয়ে (আসাম ট্রিবিউন-এ ১৩ জুলাই ২০১৩ তারিখে আর দত্ত চৌধুরী লিখিত ঝসঁমমষরহম ড়ভ বিধঢ়ড়হং ভৎড়স গুধহসধৎ ড়িৎৎরবং ধঁঃযড়ৎরঃরবং রিপোর্ট দ্রষ্টব্য)। এ ব্যাপারে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমন একটি ব্যাপক নৈরাজ্যময় সশস্ত্র কার্যক্রমের পরও পাহাড়ের সব সেনাক্যাম্প সরিয়ে নেওয়ার দাবি কতটা যৌক্তিক, তা পাহাড়ি নৃগোষ্ঠীগুলোকেই সুবিবেচনা করে দেখতে হবে। এটি একটি ধারাবাহিক কার্যক্রম, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো তাদের অস্ত্র, গোলাগুলি, সশস্ত্র ক্যাম্প স্থাপন, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন-জখম ইত্যাদি বন্ধ না করলে সব সেনাক্যাম্প কোন যুক্তিতেই গুটিয়ে নেওয়া যায় না। পার্বত্যাঞ্চলে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় তিন যুগ ধরে ঘাম ও রক্তের বিনিময়ে সেনাবাহিনীর অর্জিত সাফল্য কিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসীর দাবির কাছে বিলিয়ে দেওয়া য়ায় না-এটি নিশ্চিতভাবেই দেশবাসী তথা সরকারের ঐকান্তিক ইচ্ছা।

পার্বত্যাঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা খুবই শক্তিশালী, তাদের রয়েছে নিরঙ্কুশ আধিপত্য, বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব সেখানে নিতান্ত সংখ্যালঘু-এই ক্ষমতাকে অনেক সময় তারা পরিণত করেছে বাঙালি দলন-নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে। গোষ্ঠী ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষতাড়িত হয়ে তারা যখন বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ বা স্কুল প্রতিষ্ঠাকে পদে পদে আটকে দেন কিংবা বাঙালি পাড়া বা সেনাক্যাম্পে বিদ্যুতের লাইন দেওয়ার বিরোধিতা করেন, সেটা ভুক্তভোগীদের নাগরিক অধিকারকে খর্বই শুধু করে না, বরং শান্তিচুক্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয়।

শান্তিচুক্তির পরে সরকার পাহাড়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। সড়ক যোগাযোগ ও অন্যান্য অবকাঠামো, স্কুল, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন, পর্যটন এবং চাকরির সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন করেছে তা বাংলাদেশের অন্য যে কোন স্থানের উন্নয়নের হারের চেয়ে অনেক বেশি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক বাস্তবায়তি উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রায় ৯৫ শতাংশই নৃগোষ্ঠীদের উন্নয়নের জন্য পরিচালিত। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রতিটি উপজাতীয় এলাকায় নির্মিত হয়েছে স্কুল-কলেজ, কিয়াংঘর, উপজাতীয় ছাত্রাবাস, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নৃগোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ইত্যাদি। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে নৃগোষ্ঠী জনসংখ্যা ৬,৯৯,১৯৪ এবং বাঙালি জনসংখ্যা ৬,৪৫,১০৯ জন, অর্থাৎ উভয় জনগোষ্ঠী প্রায় সমান সমান। কিন্তু এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, পার্বত্যাঞ্চলে জ্ঞাত ১০৯টি এনজিওর কার্যক্রমের মধ্যে শুধুমাত্র বাঙালি জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে উন্নয়ন কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে মাত্র ৩টির, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য হয়েছে ৪৫টি এবং বাকি ৬১টি যেগুলো উভয় গোষ্ঠীর জন্য হয়েছে, সে সবের বাস্তব আওতা মূলত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করেই। অন্যদিকে শিক্ষা ও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ করে উপজাতি কোটা ভোগ করছে এই ১ শতাংশেরও কম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, যার বড় অংশ ভোগ করে এককভাবে চাকমারা। ফলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, বিশেষ করে চাকমারা শিক্ষাদীক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন ধরে সুযোগ-সুবিধাভোগী হয়ে সবক্ষেত্রে অগ্রসর জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি করে উপরোক্ত সকল একপক্ষীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলেও জেএসএস নেতা সন্তু লারমা এখনও দাবি তুলছেন- ১. সাড়ে তিন লক্ষ বাঙালি অধিবাসীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নেয়ার, ২. পার্বত্য বাঙালিদেরকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার, ৩. সমস্ত নিরাপত্তা ক্যাম্প তুলে নেওয়ার, ৪. সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সেনা-অভিযান পরিচালনা না করা ইত্যাদি। অন্যদিকে আছে বাঙালিদের জন্য স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার নানা অবমাননাকর নিষেধাজ্ঞা ও বিড়ম্বনা।

বাঙালিরা এখন আওয়াজ তুলছে যে, নিজ বাসভূমে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে পড়ার যে আশঙ্কা তারা শান্তিচুক্তিকালে করেছিল তা সত্য হতে চলেছে। শান্তিচুক্তির শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘…গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখ-তার প্রতি পূর্ণ ও অবিচল আনুগত্য রাখিয়া… চুক্তিতে উপনীত হইলেন’। পার্বত্য নৃগোষ্ঠীরা চুক্তির বাস্তবায়নের দাবি আদায় করতে গিয়ে নিজেদের করণীয়ই শুধু ভুলে যায়নি, বরং সংবিধানের আওতার প্রতি পূর্ণ ও অবিচল আনুগত্য রাখার ব্যাপারটিও সচেতনভাবে ভুলে থাকেন। তাদের সাংঘর্ষিক দাবি মেটাতে গিয়ে পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালিদের ক্ষেত্রে সংবিধানের ১৯ নম্বর (সুযোগের সমতা), ২৭ নম্বর (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ২৮ নম্বর (ধর্ম প্রভৃতি কারণে বৈষম্য) অনুচ্ছেদ লংঘন করতে হচ্ছে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নের যে কোন সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে ‘সংবিধানের আওতা’র কাছে প্রত্যাবর্তনই আইনের শেষ কথা-সংবিধানের সার্বভৌমত্বের প্রতি এই আনুগত্য স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সকল নাগরিকের অঙ্গীকার।

দেশের একটি প্রধান কর্পোরেট প্রিন্ট মিডিয়া ও চিটাগং হিল ট্রাক্টস কমিশন (সিএইটি কমিশন)-এর সহযোগিতায় উপজাতি শব্দটি নিয়ে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা সাম্প্রতিক সময়ে আপত্তি জানাচ্ছে ‘উপ’ প্রত্যয়টি তাদের জাতিগত তুচ্ছতার প্রকাশ বলে (যদিও ইংরেজিতে ট্রাইব বললে ‘উপ’ প্রত্যয়ের বিষয়টি থাকে না)। তাদের এই আপত্তি মেনেই সরকার তাদের জাতিগত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে স্বীকৃতি দিয়েছে-সরকারের এই অবস্থান খুবই যথাযথ। রাজা ব্যারিস্টার দেবাশিষ রায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের ক্ষুদ্র জনসংখ্যার জনগোষ্ঠীসমূহকে কেন আদিবাসী হিসাবে অভিহিত করা উচিত’ জাতীয় নানা ভাষায় প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে যাচ্ছেন মূলত গত দুই দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সরকারি প্রজ্ঞাপন ও নথিতে কিছু ‘আদিবাসী’ শব্দের উল্লেখের বরাত দিয়ে। তিনি ভালো করেই জানেন যে- উপজাতি, আদিবাসী, নৃগোষ্ঠী ইত্যাদি শব্দগুলো ইংরেজি প্রতিশব্দের হুবহু অর্থবহ অনুবাদ নয় এবং এতদিন এগুলোর সার্বজনীন, সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞাও ছিল না, বরং কখনও কখনও একটিকে অন্যটি দিয়ে উল্লেখ করা হতো। এই শব্দগুলোর আইন-সচেতন ব্যবহার খুবই সাম্প্রতিক ঘটনা।

জাতিসংঘের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর ওহফরমবহড়ঁং ধহফ ঞৎরনধষ চবড়ঢ়ষবং ঈড়হাবহঃরড়হ, ১৯৮৯ (ঘড়. ১৬৯)-এর আর্টিকল ১-এর (ধ) অনুসারে ‘একটি দেশের মূল জনগোষ্ঠী থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ভিন্নতর যারা যাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও আইন দ্বারা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে পরিচালিত, তারা হল উপজাতি’। এখন আইএলও’র এই সংজ্ঞার আলোকে যদি আমরা বাংলাদেশের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও অন্যদের সাথে বিচার করি তাহলে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, এরা উপজাতি। অন্যদিকে, ঐ কনভেনশনের আর্টিকেল ১-এর (ন) অনুসারে ‘যারা একটি নির্দিষ্ট রাষ্ট্রে বংশানুক্রমে বসবাস করছে বা অধিকৃত হওয়া ও উপনিবেশ সৃষ্টির পূর্ব থেকে বসবাস করছে এবং যারা তাদের কিছু বা সকল নিজস্ব সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত অধিকার ও প্রতিষ্ঠানসমূহ ধরে রাখে’। অর্থাৎ, কোন জনগোষ্ঠী যদি মানুষের জ্ঞাত ইতিহাসপূর্ব অর্থাৎ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে কোন এলাকায় বংশপরস্পরায় বসবাস করে থাকে এবং তা অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ইতিহাসে লিপিবদ্ধ সময়কালে তাদের আগমন ও বসতি স্থাপনের পূর্বে বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদেরকে ঐ এলাকার আদিবাসী হিসেবে গণ্য করা হবে।
জাতিসংঘের আদিবাসীর সংজ্ঞায় বাংলাদেশের পার্বত্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা কোনও অজুহাতে নিজেদের ‘আদিবাসী’ দাবি করতে পারে না, এর ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক কোন সত্যতা এবং বাস্তবতা নেই। এই জনপদে হাজার বছর ধরে বাঙালিরা ছিল, আছে-বাঙালিরাই এ মাটির ভূমিপুত্র। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আগমনের আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম সুবে বাংলার অর্থাৎ বাংলাদেশের তথা ৯৯ শতাংশ বাঙালির অধীনে ছিল। এ ব্যাপারে বিশিষ্ট সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক, বর্তমানে ডেইলি সান পত্রিকার সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন লিখেছেন, ‘বেশিরভাগ উপজাতি জনগোষ্ঠী এই এলাকায় মায়ানমার (সাবেক বার্মা) থেকে ১৫শতক থেকে মধ্য-১৯শতকে এসেছে। এই উপজাতিরা কুকি গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত যারা প্রথমদিকের বসতি স্থাপনকারী এবং চাকমারা এসেছে আরও পরে’ (ওয়ার এন্ড পিস ইন দ্য চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস, পৃষ্ঠা ৫, প্রকাশক- আগামী প্রকাশনী, ১৯৯৯)। সতেরো শতকেই আদি বাঙালিরা চাষাবাদ ও বসবাসের উদ্দেশ্যে পাহাড়ে যেতে শুরু করেছে। পাহাড়ি এলাকায় বাঙালিদের জনবসতি অবশ্য সমতলের মতো ঘনবসতিপূর্ণ ছিল না। এমনকি, বাস্তবে কোনও বাঙালি বসতি না থাকলেও এই সুবে বাংলাভুক্ত এলাকা বাঙালিদেরই। বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর পাহাড়ি এলাকার জমিজিরাত অনাবাদি পড়ে থাকলেও বাঙালির মালিকানা খারিজ হয়ে যায় না।

বহু শতাব্দী ধরে বাঙালির মালিকানার বিষয়টি বাদ দিলেও জাতিসংঘের আদিবাসী সংজ্ঞার ‘প্রাগৈতিহাসিক কাল’র শর্তই তারা পূরণ করতে পারে না। আর চাকমারা বার্মার অজ্ঞাত চম্পকনগর থেকে তাড়া খেয়ে কয়েক শতাব্দী আগে এই পার্বত্য এলাকায় এসে এই ভূখণ্ডে বসতিস্থাপন করায় তারা বাংলাদেশের নাগরিকত্বের দাবিদার বটে, কিন্তু কোনও যুক্তিতে তারা ‘আদিবাসী’ বলে দাবি করতে পারে না। চাকমারা এই জনপদে বাঙালি উচ্ছেদ করে সেটেলার হয়নি বরং বাঙালিদের অনাবাদি জমিতে বসতি গড়েছে-একথা যেমন সত্য, একইভাবে বাঙালিরাও এই জনপদে হাজার বছর ধরে বসবাসের ইতিহাস রয়েছে এবং পাশাপাশি ৮০’র দশকে চাকমাদের উচ্ছেদ করেও সেটেলার হয়নি বরং সরকারি খাস জমিতে বসতি গড়েছে-সেটাও সমান সত্য। পৃথিবীর সবচে ঘনবসতিপূর্ণ ও নদীভাঙন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ এই বাংলাদেশে প্রতিবছর যেখানে হাজারো মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে, যেখানে এতটুকু আশ্রয়ের খোঁজে জীবন বাজি রেখে নৌকায় পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে ক্রীতদাসের জীবন বেছে নিতে কসুর করছে না, সেখানে এইসব ছিন্নমূল মানুষকে সামান্য ঠাঁই করে দেওয়ার জন্য সরকার খাস জমিতে বন্দোবস্ত দেবে-এই বিষয়টি অতি মানবিক ও যৌক্তিক। বাংলাদেশের মোট দশ ভাগের এক ভাগ আয়তনের এই পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংখ্যা যেখানে মাত্র এক শতাংশ, সেখানে খাস জমি যে বেশি, সে তো বলাই বাহুল্য।

যারা সাদাসিধাভাবে চিন্তা করেন, তারা ভাবতে পারেন যে, না হোক ভুঁয়া, জাল দাবি, তারা যখন এত করে চাইছে, ‘আদিবাসী’ ডাকলে এমন ক্ষতি কী? জাতিসংঘের উবপষধৎধঃরড়হ ড়হ ঃযব জরমযঃং ড়ভ ওহফরমবহড়ঁং চবড়ঢ়ষবং তথা আইএলও কনভেনশন ১৬৯ মোতাবেক ‘আদিবাসী’ হতে পারার সুবিধা হলো- ‘আদিবাসীর ভূমি অধিকার সংরক্ষণ’র আইন! আদিবাসীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য জাতিসংঘ যে কোনও সময় আদিবাসীদের, মানবাধিকার সংগঠনের ডাকে বা আহ্বানে নিরপেক্ষ (জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে) প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে তাদের স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতা ঘোষণা দিতে পারে। যেমন করেছে কসোভোতে, ইস্ট তিমুর ও দক্ষিণ সুদানে। আমাদের পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরাও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের সহযোগিতায় ‘আদিবাসী’ হয়ে সেই সুযোগ নিয়ে সমতলবাসীদের উচ্ছেদ করতে চায়।

সিএইচটি কমিশনের সাথে মিলে ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির নামে ক্রমাগত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে তারা। কিছু উচ্ছিষ্টভোগী বুদ্ধিজীবীকে অর্থের বিনিময়ে কিনে নিয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এতদিন বিষোদ্গার করিয়েছে খুব, এখন বিজিবিকেও এর লক্ষ্য বানিয়েছে। বিজিবির ক্যাম্প স্থাপনের বিরুদ্ধে মিথ্যার বেসাতি ছড়িয়ে কিছু উঠতি বুদ্ধিজীবীকে পোষ্য মিডিয়াসহ নিয়ে গিয়ে প্রতিবাদের মহড়া ভিডিও করিয়ে এনেছে, দু-চার লাইন লিখিয়েও নিয়েছে।

কিন্তু পার্বত্যাঞ্চলে অরক্ষিত দীর্ঘ সীমান্ত দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ, বিশেষ করে বর্তমানে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)-এর শক্তিবৃদ্ধি ও সীমান্তজুড়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর সরকারের জন্য বিজিবির শক্তিবৃদ্ধি অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে, যা দেশবাসীর জানা খুব প্রয়োজন। এই নাজুক পরিস্থিতিতে অস্ত্র কিনে এনে সশস্ত্র সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের আয়োজন করছে পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো। এই গোষ্ঠীগুলোর এতো ক্ষোভের মূল কারণ হলো, সীমান্তজুড়ে ক্যাম্প স্থাপিত হলে তাদের সশস্ত্র চলাচল, ক্যাম্প স্থাপন ও চাঁদাবাজির পথ রুদ্ধ হবে, সুগম হবে শান্তিস্থাপনের পথ-বাস্তবে এরা এর কোনটাই প্রত্যাশা করে না। পাহাড় থেকে বাঙালিদের উচ্ছেদ ও উৎখাত করার এক অসম্ভব ও অন্যায় সুখস্বপ্নে বিভোর তারা। বিদেশে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে রেপিস্ট, ধর্মান্তরকারী, ক্ষমতালোভী ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করছে, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করছে, নানা সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে ধর্ণা দিচ্ছে, সর্বোপরি সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বিদ্বেষী প্রচারণা ছড়িয়ে দিচ্ছে ইন্টারনেটে। পর্যটন কেন্দ্র এমন কি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের মতো বিষয়ের বিরুদ্ধেও অযৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তারা। পাহাড়ের উন্নয়ন যেন তাদের চক্ষুশূল!

শান্তিচুক্তি-পরবর্তীকালে দেড় যুগের অভিজ্ঞতার আলোকে সকল প্রকার সশস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও ষড়যন্ত্র বন্ধ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতিস্থাপন ও ভূমি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কালাকানুন ও ব্রিটিশ আমলের হিলট্র্যাক্টস ম্যানুয়েল ১৯০০-কে সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে শান্তিস্থাপনের পথে হাঁটার বিকল্প নেই। নৃগোষ্ঠী-বাঙালি ভেদাভেদ দূর করে সকলের সম-অধিকারভিত্তিক শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দময় সহাবস্থান নিশ্চিত করা জাতীয় স্বার্থের জন্য অতীব জরুরি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল বৈষম্য, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অবিচার দূর করার লক্ষ্যে বিচার বিভাগীয় ও সংসদীয় কমিটি দ্বারা পার্বত্য পরিস্থিতি ও চুক্তির মূল্যায়ন করে সুবিচার প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেওয়া জাতীয় স্বার্থেই অত্যাবশ্যক।
লেখক : পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন