লবণ আমদানি বন্ধের দাবিতে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রানালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা

চকরিয়া প্রতিনিধি:

লবণ শিল্পের সুদিন রক্ষা এবং শিল্পের সঙ্গে জড়িত অন্তত লক্ষাধিক মানুষের জীবিকার পথ উন্মুখ রাখতে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি বন্ধের দাবিতে আবারও মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ লবণ চাষী সমিতি ও প্রান্তিক লবণ চাষীরা।

সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি বন্ধের আবেদন জানিয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সংগঠনের পক্ষে স্বারকলিপি তুলে দেন বাংলাদেশ লবণ চাষী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এইচ এম শহীদ উল্লাহ চৌধুরী।

স্বারকলিপিতে তুলে ধরা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি তথ্যমতে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দেশে লবণের চাহিদা নির্ধারণ করা হয় ১৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন এবং লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ২০১৬-১৭ সালে দেশে চাহিদার তুলনায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন কম থাকলেও একই বছর লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হয় ৩ লাখ মেট্রিক টন। সেই হিসেবে আমদানি করা লবণ ঘাটতির তুলনায় ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত আমদানি করা হয়।

স্বারক লিপিতে বলা হয়েছে, ২০১৭-১৮ সালে ১৬ লাখ ২৯ হাজার মেট্রিক টন লবণ চাহিদা নির্ধারণ করা হলেও উৎপাদন হয় ১৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিন টন। ঘাটতি হিসেব করলে ১ লাখ এক হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৭-১৮ সালে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ঘাটতি হিসেব করলে ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ দুই বছরে চাহিদার তুলনায় ঘাটতি দেখা যায়।

অপরদিকে ২০১৬-১৭ সালে আমদানি করা ৩ লাখ মেট্রিক টন (যা ৩ লাখ মেট্রিক টন থেকে আগের ঘাটতি ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন বাদ দিলে) আরও ৯০ হাজার মেট্রিক টন লবণ উদ্বৃত্ত থাকে।

স্বারকলিপিতে জানানো হয়েছে, ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে এসে এতদাঞ্চলের লবণ চাষী, ব্যবসায়ী, প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন তৎকালীণ সরকারের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি।

তিনি ওই সভায় বলেছিলেন, দেশীয় লবণ শিল্প রক্ষা এবং শিল্পের সঙ্গে জড়িত অন্তত ৫ লক্ষাধিক মানুষের জীবনমানের নিশ্চয়তাকল্পে সরকার বিদেশ থেকে লবণ আমদানির মতো আত্মঘাতী সিদ্বান্তে যাবে না। মন্ত্রীর এমন আশ্বাসে সভায় উপস্থিত সকলের মাঝে নতুন করে আশার সঞ্চার ঘটে।

অবশ্য ওই সভায় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু কক্সবাজার বিসিকের কাছে জানতে চান বর্তমানে কত পরিমাণ লবণ চাষীর মোকামে আছে তা নিশ্চিত করতে। এই জন্য মন্ত্রীর নির্দেশে পাঁচ সদস্যদের একটি কমিটিও গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি মাঠ পর্যায়ে জরিপ শেষে শিল্প মন্ত্রানালয়ে প্রতিবেদনও জমা দেন।

গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি কক্সবাজার অঞ্চলের লবণ উৎপাদন এলাকার মাঠ পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে বর্তমানে তিন লাখ মেট্রিক টন লবণ মজুদ থাকার তথ্য পেয়েছেন।

ইতোমধ্যে গঠিত কমিটি জরিপ শেষে মাঠ পর্যায়ে তিন লাখ মেট্রিক টন লবণ মজুদ থাকার বিষয়টি লিখিতভাবে শিল্প মন্ত্রানালয়ে জমা দেন।

তৎকালীন সরকারের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি নির্দেশের পর মাঠ পর্যাপ্ত পরিমাণ লবণ উদ্বৃত্ত থাকার পরও বর্তমানে কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে কতিপয় সিন্ডিকেট চক্র ফের ঘাটতি দেখিয়ে ভারত ও চীন থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণের আদলে বিদেশ লবণ আমদানির চেষ্ঠা শুরু করেছেন।

বাংলাদেশ লবণ চাষী সমিতির কর্মকর্তারা অভিযোগ তুলেছেন, দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নেই, বর্তমানে নতুন মৌসুমে লবণ উৎপাদনও শুরু হয়েছে। তারপরও অসাধু মিল মালিক মাঠ পর্যায়ে তদারকি না করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন এবং বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রনালয়ে ভুল তথ্য দিয়ে ঘাটতি দেখিয়ে লবণ আমদানির অপচেষ্ঠা করছে।

তাঁরা অভিযোগ তুলেছেন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রিক একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা প্রতিবছর এ রকম ষড়যন্ত্র করে লবণ আমদানি করার পাঁয়তারা করে। ওই সিন্ডিকেট আবার সব পারমিট ভাগিয়ে নিতেও অপতৎপরতা শুরু করেছে। লবণ আমদানির খবর শুনে চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

স্বারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য আলহাজ আবু তৈয়ব, বাংলাদেশ লবণ চাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.শহিদুল ইসলাম, সংগঠনের নেতা নাজেম উদ্দিন সওদাগর, সিরাজুল মোস্তাফা মেম্বার, শাহাব উদ্দিন, সরওয়ার আলম, সামসুল আলম, জাফর আলম, ছাবের আহমদ, হারুনর রশিদ, মোহাম্মদ এহেছান, নুরুন নবী, রফিকুল ইসলাম, মকছুদ আহমদ কোম্পানী, জমির হোসেন, আলী হোসেন, ইয়াকুব সওদাগর ও মহিউদ্দিন প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন