লক্ষ্মীছড়িতে ইউপিডিএফ’র চাপে প্রচারণায় নামতে পারছে না প্রার্থীরা

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার:

খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে প্রচার প্রচারণা তুঙ্গে থাকার কথা থাকলেও অবস্থা দৃষ্টে এমনটা মনে হচ্ছে না। দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মনোনীত বাঙ্গালী প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও উল্টো চিত্র উপজাতীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে। ইউপিডিএফ’র চাপে মাঠে নেমে কাজ করতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন প্রার্থীরা। তবে এ ক্ষেত্রে নির্বাচনী মাঠ সরগরম করে রেখেছেন সংরক্ষিত নারী আসন ও সাধারণ সদস্য পদের প্রার্থীরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১নং লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়নে বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মো. মকবুল আহমেদ এবং ২নং দুল্যাতলী ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. নুরে আলম অনেকটা নির্ভিগ্নে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটের নানা মেরুকরণে এই দুই প্রার্থী জয়ের স্বপ্ন দেখছেন ভিন্নভাবে।

অন্যদিকে দুল্যাতলী ইউনিয়নে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী পাইচাউ মারমা ইউপিডিএফর চাপে থেকেও নিরবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু উল্টো চিত্র ১নং লক্ষ্মীছড়ি সদর ইউনিয়ন এবং ৩নং বর্মাছড়ি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে সরকার দলীয় প্রার্থীদের। কোনো প্রচার প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে না লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী লেলিন কুমার চাকমা (কালেন্দ্র) এবং বর্মাছড়ি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্র্থী নিলবর্ণ চাকমাকে।

জানা যায়, পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ’র ভয় ভীতি প্রদর্শন এবং প্রানণাশের হুমকির কারণেই এমন চিত্র বলে ধারনা স্থানীয়দের। তবে এ বিষেয় থানা পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে কোনো সরাসরি অভিযোগ করেনি কোনো প্রার্থী।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কি মি দুরে অবস্থিত ৩নং বর্মাছড়ি ইউনিয়নে সম্পূর্ণ উপজাতীয় অধ্যুষিত এলাকাটিতে বরাবরই ইউপিডিএফ’র নিয়ন্ত্রণে এবং তাদের মনোনীত প্রার্থীরাই জয়লাভ করে। দলীয় প্রতীকের বাধ্যবাধকতা থাকায় এই দুর্গে হানা দিতে বসেছে সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নিলবর্ন চাকমা। যদিও তার নির্বাচনী এলাকায় এখনো পর্যন্ত একদিনের জন্য পা রাখতে পারেননি। নিলবর্ণ চাকমাকে জয়ের জন্য লড়তে হবে ভাইয়ের বিরুদ্ধে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হরিমোহন চাকমার সাথে। তবে এই প্রার্থীর দিকে রয়েছে ইউপিডিএফ’র সমর্থন। এই ইউনিয়নে আরো দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থী পাইসুইখই মারমা মটরসাইকেল প্রতীক এবং সাথোয়াই হেডম্যান চশমা প্রতীক নিয়ে লড়াই করার কথা থাকলেও ইউপিডিএফ’র রেড সিগনালে প্রচারণা থেকে সরে গেছেন এই দুই প্রার্থী। লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়নে সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী লেলিন কুমার চাকমা বাড়ির আঙ্গিনা ছেড়ে কোথাও যেতে দেখা যায় নি। তিনি অবশ্য মৌখিকভাবে ইউপিডিএফ’র চাপে থাকার বিষয়টি স্বীকার করলেও লিখিতভাবে প্রশাসনকে কিছুই জানাননি।

এ অবস্থা থাকলে লড়াইটা হবে বিএনপির প্রার্থী মকবুল আহমেদ এবং ইউপিডিএফ’র প্রার্থী আনারস প্রতীক নিয়ে প্রবিল কুমার চাকমার সাথে। ভোটের ব্যবধানে প্রবিল কুমার চাকমা এগিয়ে থাকলেও জয়ের প্রত্যাশা করেন বিএনপির প্রার্থী মো. মকবুল আহমেদ। অপর দিকে

২নং দুল্যাতলী ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী পাইচাউ মারমা চাপে থাকলেও প্রচারণায় রয়েছেন সমানতালে। সরকার দলীয় প্রার্থী নৌকা প্রতীকের মো. নুরে আলম প্রচারণায় অনেকটা এগিয়ে। ইউপিডিএফ প্রথম পর্যায় উচাই প্রু মরামকে সমর্থন দেয়ার কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন চশমা প্রতীকের ত্রিলন চাকমা দয়াধন। এই ইউনিয়নে জয়ের পল্লা কোন দিকে ঝুঁকবে এই মুহুর্তে স্পষ্ট করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ বিএনপির ভোটের হিসেব ছাড়াও আত্মীয়তার হিসেবেটা হচ্ছে বেশ জোড়ে সোঁড়ে। ভোটাররা যোগ্য প্রার্থী বেঁছে নিবে না কমিউনিটি হিসেবে মেলাবে এই নিয়ে চলছে নান বিশ্লেষন। নিজ কমিউনিটি ছাড়াও অন্য কমিউনিটির ভোট যে বেশি টানতে পারবে সেই হবে নির্বাচিত চেয়ারম্যান এমনটা বলা যায়। তবে ভোট যুদ্ধে ৪ প্রাথী টিকে থাকলে খুব কম ভোটের ব্যবধানে জয় পরাজয় হবে বলে ভোটাররা মনে করে। এই প্রসঙ্গে লক্ষ্মীছড়ি থানার অফিসার্স ইনচার্জ আব্দুর রকিব বলেন, প্রার্থীরা চাপে আছেন এ বিষয়গুলো অবশ্য আমরা লিখিত কোনো অভিযোগ পাই নি। যদি ঘটনা সত্য হয় আর যদি কেউ রিখিত অভিযোগ করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন