রোয়াংছড়িতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অফিসে তালা
রোয়াংছড়ি প্রতিনিধি:
রোয়াংছড়ি উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী বিল ভাউচার ও গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিয়ে পালানোর চেষ্টাকালে স্থানীয় জনতা ক্ষুদ্ধ হয়ে ইঞ্জিনিয়ারের অফিস তালা বন্ধ করে দেয়। প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকার ভুয়া ভাউচার করে পালানোর চেষ্টা করায় অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। বুধবার বিকাল প্রায় সাড়ে তিন টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগে জানা যায়, ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধিদের কাজের বিল করার ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ঘুষ চাওয়া হয়। ঘুষ না দিলে বিল ভাউচার করা হয় না। গোপনে টেন্ডার করাসহ নানা অনিয়ম চলছে বলেও জানা গেছে।
গত বছরের এডিপির বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে উপজেলা কমপ্লেক্সে ৪টি টিন শেড এবং ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ডরমেটরি ভবন মেরামত কাজের জন্য ৩৪ লাখ টাকা অনুমোদন পাওয়া যায়। তার মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান না করে কোন রকমে নামে মাত্র কোটেশন দিয়ে কাজ ভাগ-বাটোয়ারা করে দেওয়া হয়।
অফিস সূত্রে জানা যায়, গোলাম মো. মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে এলজিইডি চট্টগ্রাম অঞ্চল ও চট্টগ্রাম তত্ত্বাবধায়ক কার্যালয় অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুতালেব, বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন চাকমা, বান্দরবানে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. হোসেন ও জিল্লুর রহমানকে নিয়ে গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ এর প্রমাণ পায়।
ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলীও গত ২৭ এপ্রিল ২০১৭ রোয়াংছড়িতে এসে তদন্ত করেছিলেন। তদন্তে হাতেনাতে ধরা পড়ে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ বিষয়টি।
তাছাড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলার সোয়ানলু পাড়া ও আলেক্ষ্যং লাংগে পাড়াসহ ১২টি সরকারি প্রাইমারী স্কুলের চলমান নির্মাণ কাজে সম্পূর্ণ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে এসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের জীবন বিপন্ন হওয়া আশঙ্কা করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি সেই অবস্থায় তা প্রত্যক্ষ করলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় অফিস থেকে মহিদ্দিন চৌধুরীকে শোকজও করা হয়।
তবে নাম না বলার শর্তে ক’জন স্থানীয় জনতা ও রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য ক্যনুমং মারমা অভিযোগ করে বলেন, তিনি রোয়াংছড়িতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তদরে যোগদানের পর থেকে মাসে ৪-৫ দিনের অধিক অফিস করেন না। অফিসে এলেও তিনি মাত্র ঘন্টা খানেক অফিস করেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বিশেষভাবে রোয়াংছড়ির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এসব সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও তিনি বেপরোয়াভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকার জনগণ।
এলজিইডি অফিস কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম মো. মহিউদ্দিন চৌধুরীর চলতি দায়িত্ব থাকায় ভয়ে সকল সহকারী কর্মকর্তারা মুখ খুলতে নারাজ।
এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনে প্রতি মাসে মিটিং এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের সময় অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও গোলাম মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী অনুপস্থিত থাকেন। ফলে সচেতন জনগণের প্রতিনিধিরা জাতীয় দিবসে পালন না করে অবমাননা মনে করেন। উন্নয়নের স্বার্থে বেশি প্রয়োজনে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, আমার কথা বলার সময় নেই, আমি গণভবনে, সংসদ ভবনে, মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ব্যস্ত আছি বলে মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন। নিজ দায়িত্ব অবহেলা, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, উন্নয়নমূলক কাজে অসযোগিতা সরকারি অর্থ বন্টনে লুকোচুরিসহ নানা অভিযোগে রোয়াংছড়ি থেকে অপসারণে দাবি এবং লুটপাটকৃত অর্থ উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন এলাকাবাসী।
উপসহকারী প্রকৌশলী সাজেদুল বলেন, উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম মো. মহিউদ্দীন চৌধুরী আমার সাথে একই পদের একজন কর্মকর্তা কিন্তু তাকে উপজেলার চলতি দায়িত্ব দেওয়ায় তিনি ক্ষমতার অপব্যহার করেছেন। মহিদ্দিন চৌধুরীর ব্যাপক অনিয়মের প্রতিবাদ করায় আমাকে কাজের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অফিসে এসে বসে থাকার ছাড়া কোন কাজ নেই। ঠিকাদাররা আমাকে দেখলে সরে যায়। আফিসে না আসলে অনুপস্থিত হিসেবে গণ্য করেন মহিদ্দিন চৌধুরী। মহিদ্দিনকে উপজেলাতে দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে প্রত্যকটি প্রকল্পের কাজে দুর্নীতি ও ব্যাপক অনিয়ম করে চলেছেন। সোয়ানলু পাড়ার একটি প্রকল্পের কাজ, চতুর্দিকে ড্রেন করার বাজেট ছিল কিন্তু তা নিয়ম নীতি না মেনে সামান্য কাজ করে টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে ।
এদিকে গোলাম মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী ঢাকায় রাজধানীতে বসুন্ধরা ভিআইপি এলাকার এ্পোলো হাসপাতালের পাশে বহু দামের বিলাস বহুল ৬তলায় ফ্ল্যাট বাড়ি কিনছে বলে জানা গেছে।
সমাজ সেবক দিপক ভট্টাচার্য আক্ষেপ করে বলেন, এক সময় গোলাম মো. মহিউদ্দিন চৌধুরীকে উন্নয়নের কাজের খবর জানতে চাওয়ায় তার সাথে অসাদাচরণ ব্যবহার করা হচ্ছে এমন অভিযোগও করেন।
উপসহকারি প্রকৌশলী গোলাম মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী সাথে এব্যাপারে কথা বলতে চাইলে তিনি কোন কথা বলেননি ।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাউসাং মারমা ও নির্বাহী অফিসার মো. দাউদ হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কিছু জানেন না বলে জানান।