রোহিঙ্গা সংকট: বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা না করলে উজাড় হবে বন

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয় ও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে রান্না করতে জ্বালানির ব্যবস্থা করা হয়নি। সেই জ্বালানির চাহিদা মেটাতে আশপাশের বন থেকে কাটা পড়ছে গাছ। বর্তমানে নতুন-পুরনো মিলিয়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আছে বিভিন্ন ক্যাম্পে। তাদের তিন বেলা রান্না করতে দৈনিক ২৫ হাজার মণের বেশির লাকড়ির প্রয়োজন। এ লাকড়ির জন্য তারা ক্যাম্পের আশেপাশের বন থেকে গাছ কাটছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে গাছ কাটা চললে এবং খুব শিগগিরই বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা না করলে অচিরেই ওই এলাকার হাজার হাজার একর বনভূমি পরিণত হবে বিরানভূমিতে।

বনভূমির ক্ষয়ক্ষতি এখানেই শেষ নয়, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বসতির জন্যও প্রতিদিন বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। বনভূমি উজাড় করে বালুখালী ও কুতুপালং এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে অসংখ্য ঘর।

বন সংরক্ষক (চট্টগ্রাম অঞ্চল) জগলুল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বালুখালী ও কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা বনভূমি থেকেই জ্বালানি সংগ্রহ করছে। খুব শিগগিরই বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা না করলে অচিরেই শত শত একর বনভূমি বিরানভূমিতে পরিণত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করার কথা বলে আসছি আমরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই কাজের জন্য কোনও এনজিও বা বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে আসেনি।’ তবে দেরিতে হলেও বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করতে সরকার কাজ শুরু করেছে বলে তিনি জানান।

রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় ক্যাম্প উখিয়ার বালুখালীতে। ২৮ অক্টোবর বালুখালী ক্যাম্প-১-এর এফ-১৯ ব্লকে গিয়ে দেখা যায়, বসতি গড়ে তুলতে চলছে পাহাড় কাটা। আর রান্নার লাকড়ি জন্য কাটা হচ্ছে গাছ। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে এ প্রতিবেদক কমপক্ষে ১০ জনকে বন থেকে লাকড়ি কেটে আনতে দেখেছেন।

ওই রোহিঙ্গারা জানান, বালুখালী ক্যাম্পেরপেছনের দিকে থাকা পাহাড়ের বনভূমি থেকে তারা কাঠগুলো সংগ্রহ করেছেন।

উখিয়ার রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়নে মূলত গড়ে তোলা হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। রাজাপালংয়ের কুতুপালং ক্যাম্পটি স্থায়ী। অনেক আগে থেকেই এখানে রয়েছেন রোহিঙ্গারা। নতুন আসা রোহিঙ্গারাও এই ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে সেটি সংখ্যায় কম। সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগকেই আশ্রয় দেওয়া হয়েছে পালংখালীর বালুখালী ক্যাম্পে। এসব এলাকায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে কী পরিমাণ বনভূমি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট কোনও হিসাব এখন পর্যন্ত ঠিক করা যায়নি। রোহিঙ্গাদের আসা বন্ধ না হওয়ায় বনভূমির ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করতে পারছেন না বন সংরক্ষণ বিভাগ।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২ অক্টোবর পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে প্রায় আড়াই হাজার একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। প্রতিদিনই নতুন রোহিঙ্গা আসছে, তারাও পাহাড়ে বনভূমি কেটে বসতি গড়ছেন। তাই এখনও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না, রোহিঙ্গা বসতির কারণে কী পরিমাণ বনভূমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রোহিঙ্গা আসা না থামা পর্যন্ত এটি নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।’

তবে পরিবেশ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার একর বনভূমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৬৪৫ একর জমিতে রয়েছে সামাজিক বনায়ন। এর জন্য সরকারকে খরচ করতে হয়েছে কমপক্ষে ২৯ লাখ টাকা।

বন কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কোথাও বেশি টাকা খরচ হয়,আবার কোথাও কম। তবে গড়ে প্রতি একর জায়গা সামাজিক বনায়নের আওতায় আনতে সরকারকে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। সেই হিসাবে রোহিঙ্গা বসতির কারণে ধ্বংস হওয়া সামাজিক বনায়নের অংশেই প্রায় ২৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য এখন পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকার বনভূমির ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত ১০ অক্টোবর কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ আরও জানান, প্রাকৃতিক পরিবেশের সার্বিক ক্ষতির পরিমাণ এর চেয়ে অনেকগুণ বেশি।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন