রোহিঙ্গা শিশুরাও প্রাণ খুলে হাসতে চায়

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রোহিঙ্গা শিশু খাইরুল আমিনের কাটা ঠোঁট ও ফাটা তালু  নিয়ে জন্ম। এখন বয়স ১২। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর সিকদার পাড়া থেকে এক মাস আগে আশ্রয়ের জন্য পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। ঠাঁই হয়েছে উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডি-১ ব্লকে। সেখানেই মা ও ভাই-বোনের সঙ্গে থাকে খাইরুল।

বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে ঠোঁট কাটা ও ফাটা তালু শিশুদের ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পে খাইরুলের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। কক্সবাজার মা ও শিশু হাসপাতালে স্মাইল ট্রেন বাংলাদেশ এই আয়োজন করে।

খাইরুল বলেন, ‘আল্লাহর মর্জি আমাকে মায়ের পেটে এভাবে জন্ম দিয়েছে। জীবনে কখনও ভালোভাবে হাসতে পারিনি। পারিনি নিজের চেহারাটি সমাজে দেখাতে। নিজেকে খুব খারাপ লাগে। ঠোঁট কাটা হওয়ায় বন্ধু-বান্ধবদের তিরষ্কার, সমাজের নানা কথা শুনতে হয়েছে। এভাবেই বেড়ে ওঠা আমার। মিয়ানমারের রাখাইনে ঠোঁট কাটা তো দূরের কথা এমনিতেই কোনও চিকিৎসা নেই। কোনও রোগীকে চিকিৎসা নিতে হলে বাংলাদেশ ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। বিশেষ করে ঠোঁট কাটা রোগের চিকিৎসা করতে হলে আকিয়াব অথবা রাজধানী রেঙ্গুন যেতে হয়। এটি অনেকটা ব্যয় বহুল। যার কারণে কোনও রোহিঙ্গা নাগরিকের পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় না।’

খাইরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝিদের (সর্দার) সহযোগিতায় কক্সবাজার শহরে চিকিৎসা নিতে আসলাম। জীবনে কখনও কক্সবাজার শহর দেখিনি। এখানকার ডাক্তার ও মানুষরা খুব ভালো। আমার বিশ্বাস অপারেশনের পর ভাল হয়ে যাবো। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে প্রাণ খুলে হাসবো, সমাজে ভাল করে চলাফেরা করতে পারবো। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম, জীবনে যেন একটি বারের মতো আমার ঠোঁট কাটা রোগটি ভাল করে দেয়। এই স্বপ্নটি নিয়েই বেঁচে আছি। আজ  আমার স্বপ্ন পূরণের দিন।’

শুধু খাইরুল আমিনই নয়, তার মতো সানাউল্লাহ, নাছিমা ও রুজিনাসহ রয়েছে ৩৫জন ঠোঁট কাটা ও ফাটা তালু শিশু। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রয়েছে আরও ছয় শতাধিক শিশু। যাদের প্রত্যেকে কমবেশি ঠোঁট কাটা ও ফাটা তালু (টাক্রা) রোগে আক্রান্ত। এরা প্রত্যেকেই একের পর এক অপারেশনের পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।

স্মাইল ট্রেন বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার অংশ হিসাবে আমাদের এই আয়োজন। এনজিও ব্যুরোর অনুমোদন নিয়ে হোপ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ঠোঁট কাটা রোহিঙ্গা ফ্রি অপারেশন করা হবে। এসব শিশুদের দুই দিন ধরে ফ্রি খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

অপারেশনের এক সপ্তাহের মধ্যে ঠোঁট কাটা রোগী সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শিশু-কিশোর প্লাস্টিক ও লেজার সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর ডা. বিকে দাশ বলেন, ‘ঠোঁট কাটা কোনও শিশুর অপারেশনের সময় শিশুর বয়স ৯ মাস এবং ওজন ৫ কেজি কিনা খেয়াল রাখতে হয়। বিশেষ করে ছোট বয়সে অপারেশন করা হলে ভাল ফল আসে। এতে করে অপারেশনের দাগ থাকে না।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন