রোহিঙ্গা দ্বারা ধর্ষণের স্বীকার রোহিঙ্গা শিশু রুবিনা

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

চুলের জন্য শ্যাম্পু, পরিষ্কার জামা, গোসলের সাবান, অতি পছন্দের হাতের চুড়ি বা একজন উঠতি তরুণীর যেসব চাওয়া আর না পাওয়ার অসুবিধা সেগুলোর বাইরে হলো রুবিনা। তার মূল চাওয়া তার নিরাপত্তা। রাতে ঘুমানোর জন্য একটি নিরাপদ জায়গার। রাত করে ল্যাট্রিন ব্যবহারের নিরাপত্তা এমনকি দিনের বেলাতেও খাবার পানি সংগ্রহের নিরাপত্তা। তবে রাতে ঘুমানোর নিরাপত্তাটাই সকল কিছুর উর্ধ্বে।

দোভাষীর সহায়তায় রুবিনার সাথে আলাপের এক পর্যায়ে রুবিনা বিডিমর্নিংকে জানায়, ‘তিনবেলা ত্রানের জন্য লাইনে দাঁড়াবো না, কিন্তু আমার রাতে ঘুমানোর জন্য জায়গার ব্যবস্থা করুন, একটি আলাদা ঘর করে দিন। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই’।

তবে এমন কি হয়ে থাকে সেই রাতগুলোতে? এমন অদ্ভুত প্রশ্নের উত্তর খানিকক্ষণের মধ্যেই পেয়ে গেলাম। রুবিনা বাংলাদেশে এসেছে প্রায় দু মাস হয়েছে। পালানোর সময় মা সাথে থাকলেও এপাড়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে মাকে আর খুঁজে পায়নি। বালুখালি ক্যাম্পে অন্য একটি পরিবারের সাথে সে থাকে। একটি ঘরে তারা ৮ জন গাদাগাদি করে ঘুমান। সেই সুযোগ নিয়ে সেই পরিবারের পুরুষ লোকটি তাকে যৌন হয়রানি করে। প্রতি রাতেই তিনি রুবিনার সাথে অনৈতিক কাজ করেন। কাউকে কিছু বললে তাকে থাকতে দিবেনা, মেরে ফেলবে এমনসব চাপা ভয় দেখায়।

কথার এক পর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে সে বলে, ‘শুধু রাতেই আমার শরীরের উপর অত্যাচার করেন তাই নয়, এরি মধ্যে একদিন রাতে ল্যাট্রিনে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। সেখান থেকে ঘরে ঢুকার সময় তিনি জোর করে আমাকে ধর্ষণও করেন’।

ক্যাম্পে অবস্থিত অন্যান্যদের অবস্থার কথা জানিয়ে সে আরো বলে, ‘এই ক্যাম্পে আমি দুই মাস ধরে আছি। আমার বয়সী আরো অনেক কিশোরীর সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে। তাদের মধ্যেও অনেকেই এমন সমস্যায় ভুগে। আমাদের নিরাপত্তা নেই। আমরা একটু ঘুমাতে চাই’।

কিশোরীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে জানতে চাইলে বালুখালি ক্যাম্পে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর সদস্য আনোয়ার ওসমান বলেন, ‘আমরা এখানে মূলত নিবন্ধনের কাজটি করে থাকি, সেই সাথে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার বজায় রাখার দায়িত্ব নিয়ে থাকি, তবে এমন সব অভিযোগ প্রায়ই আসে, তাতে না শোনার ভাণ করে থাকতে হয়’।

শরণার্থী শিবিরগুলোতে নারী-পুরুষ একসঙ্গে গাদাগাদি করে থাকার ফলে নারীদের প্রায়ই যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। ল্যাট্রিন ব্যবহারের প্রয়োজনে নারীরা রাতের অন্ধকারে বাইরে বের হয়। আর এ পরিস্থিতির সুযোগ নেয় পুরুষেরা।

এ ধরনের দুর্যোগের সময় যৌন হয়রানি, নির্যাতন ও ধর্ষণ খুবই সাধারণ ঘটনা। এমনকি খাওয়ার পানি আনতে গেলেও নারীদের প্রায়ই একই ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। রুবিনার মতোই এমন বহু রুবিনার চিত্র হয়তো দেখা মিলবে খোঁজ নিলে। ত্রানের সাথে সাথে কিশোরীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও সমান গুরুত্বের। তার জন্য চাই স্থায়ী সমাধান।

 

সূত্র: bdmorning

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন