রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টিউবওয়েল এবং ল্যাট্রিন স্থাপনে কারচুপি ও অনিয়মের ঘটনায় তদন্তে নেমেছে ব্র্যাকের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি

 

উখিয়া প্রতিনিধি:

মিয়ানমারের বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন কর্মসূচি বাস্তবায়নে টিউবওয়েল এবং ল্যাট্রিন স্থাপনে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের ঘটনায় তদন্তে নেমেছেন এনজিও সংস্থা ব্র্যাকের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। গত কয়েকদিন ধরে ওই তদন্ত কমিটি উখিয়ার ৭টি ও টেকনাফের ৫টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওই তদন্ত কমিটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে নির্ভযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানা গেছে স্যানেটারি ল্যাট্রিন ও টিওয়েবেল স্থাপনের নামে এনজিও সংস্থা এবং তাদের পরিচিত ঠিকাদারদের যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে। আন্তর্জাতিক কয়েকটি দাতা সংস্থার অর্থায়নে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ফটোসেশনের মাধ্যমে লোক দেখানো টিউবওয়েল এবং ল্যাট্রিন স্থাপনের নামে বেশ কয়েকটি এনজিও সংস্থা লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাট করেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণ ও পুর্নবাসন কাজে দায়িত্ব নিয়োজিত সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে ব্র্যাক এনজিওকে সতর্ক করে দিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর একটি তদারিক দল উখিয়ার কুতুপালং বালুখালী সহ কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে বসানো ল্যাট্রিনের কাজে অনিয়ম ও ব্যাপক কারচুপির প্রমাণ পেয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এমনকি খোদ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সোহরাব হোসেন ব্র্যাক কর্তৃক টিউবওয়েল ও ল্যাট্রিন স্থাপন নিয়ে চরম আপত্তি তুলেছেন।

জানা যায়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন, অত্যাচার, ধর্ষণ, হত্যা ও বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ এবং নানামুখী হুমকির শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে। তাদেরকে মানবিক সহায়তা দিতে দেশি-বিদেশি এনজিওরা আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসে।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ব্র্যাক ইতিমধ্যে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬ হাজার ৩৬৬টি ল্যাট্রিন ও ১ হাজার ৪০টি টিউবওয়েল স্থাপন করেছেন। সচেতন নাগরিক সমাজ অভিযোগ করে বলেছেন ব্র্যাক কর্তৃক শুধু মাত্র ২টি রিং দিয়ে ল্যাট্রিন স্থাপন নিরাপদ নয়। এ ছাড়াও ৩০/৪০ ফুট গভীরের টিউবওয়েল স্থাপন করলেও অধিকাংশ টিউবওয়েল থেকে পানি আসে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, ব্র্যাক ওয়াশ কর্মসূচির উখিয়া উপজেলা ম্যানেজার ফারহান জানান, প্রতিটি ল্যাট্রিনে ব্যয় হয়েছে ৩ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা এবং টিউবওয়েলে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ থেকে সাড়ে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। জরুরী মুহর্তে সংস্থার নিয়ম অনুসারে সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে অনিয়মের সুযোগ আছে বলে আমার সন্দেহ রয়েছে।

বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও ক্যাম্পে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৗশলী মো. সোহরাব হোসেন বলেন, ব্র্যাক সংস্থা যেসব টিউবওয়েল ও ল্যাট্রিন স্থাপন করেছেন তা ভয়ানক ও অনিরাপদ। দুই রিংয়ের ল্যাট্রিন খুবই বিপদ জনক। ল্যাট্রিনের পাশে ৫/১০ ফুটের মধ্যে টিউবওয়েল স্থাপন স্বাস্থ্যে জন্য ক্ষতিকর। তিনি এক প্রশ্নে জবাবে বলেন, পাশাপাশি জায়গায় ল্যাট্রিন ও টিউবওয়েল স্থাপন করলে ল্যাট্রিনের জমানো মল থেকে ফিকেল কলিফরম নামক এক প্রকার জীবাণু পানির সাথে সংমিশ্রনের আশঙ্কা থাকে। ফলে ওই সব টিউবওয়েলের পানি পান করলে মারাত্মক পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি।

দায়িত্বশীল সূত্রে মতে, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ইউনিসেফ, ডব্লিউএফপি, গ্লোবাল ফান্ডের আর্থিক সহযোগিতায় প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ব্র্যাক এ কর্মসূচি বাস্থবায়ন করলেও কাজের মান নিয়ে  প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে টিউবওয়েল এবং ল্যাট্রিন স্থাপনে অদক্ষ ঠিকাদারের সাথে অনৈতিক গোপন চুক্তির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাট হয়েছে।

এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লোক দেখানো এসব প্রকল্প সরজমিন তদন্ত করলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে বলে এমন দাবি সচেতন মহলের। এদিকে উপজেলা ম্যানেজার ফারহান বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ল্যাট্রিন ও টিউবওয়েল স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে সত্যতা স্বীকার করলেও ব্র্র্যাকের জেলা প্রতিনিধি অজিত কুমার নন্দী তা অস্বীকার করে কর্মসূচি চালু রয়েছে বলে জানান। এনিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন