রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা যুক্তরাষ্ট্রের

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রোহিঙ্গা মানবিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশের উদার ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নুয়েরট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ যেভাবে সহায়তা দিচ্ছে সেটি প্রশংসারযোগ্য।’

বিবৃতিতে তিনি বলেন,‘৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত রাখাইনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ তথ্যে যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সহিংস হামলা ও গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনাও রয়েছে।’

এতে আরও বলা হয়,‘ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিতে আমরা জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনার, রেডক্রস, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাসহ অন্যান্য সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সরকার মিয়ানমার থেকে উচ্ছেদ হয়েছে এমন জনগোষ্ঠীকে ৬৩ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।’

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নিপীড়ন ও সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে এবং মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে এই মানবিক বিপর্যয় বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে একটি প্রস্তাবনা গৃহীত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন প্রভাবশালী সিনেটর ডিক ডারবিন ও জন ম্যাককেইন সিনেটে ওই প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন। এতে কো-স্পন্সর ছিলেন সিনেটর ডিয়ানে ফিনস্টেইন, সিনেটর কোরি বুকার ও সিনেটর বব মেনেনডেজ। এর আগে বুধবার যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েস এক চিঠিতে এই বর্বরতা অব্যাহত থাকলে যুক্তরাষ্ট্র-মিয়ানমার সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

মার্কিন সিনেটের ওই প্রস্তাবনায় কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত রাখাইন পরামর্শক কমিশনের রিপোর্টের পূর্ণ বাস্তবায়ন ও রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। রেজ্যুলেশনটিতে আরও বলা হয়, ‘বার্মিজ মিলিটারি বর্বরভাবে ও অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় হেলিকপ্টার দিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে। পেট্রল বোমা দিয়ে গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের পালাতে বাধা দিয়েছে।’

রেজ্যুলশনে বলা হয়েছে, ‘বার্মার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংস হামলা ও বাস্তুহারা হওয়ার ঘটনায় আমরা নিন্দা জানাই এবং বার্মিজ কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে সব ধরনের শত্রুতামূলক ব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানাই।’

রাখাইনে কী ঘটছে সেটি জানার জন্য জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে মিয়ানমারে কাজ করার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রেজ্যুলেশনে বলা হয় সব বাস্তুহারা ও আহতদের সহায়তা দেওয়ার জন্য সংস্থাগুলোকে কাজ শুরু করার অনুমতি দেওয়া হোক।

রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন বন্ধের ও বিভিন্ন জাতির মধ্যে সংহতি সৃষ্টির জন্য অং সান সু চিকে তার ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানানো হয় ওই রেজ্যুলেশনে।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েস গত বুধবার অং সান সু চিকে লেখা এক চিঠিতে এই বর্বর ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন। রয়েস বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের কারণে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে (যুক্তরাষ্ট্রের) গভীর সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন