রামুতে বিএনপি প্রার্থীর মিছিলে বিদ্রোহী প্রার্থীর গুলি ও হামলা: আহত ৩৫

ramu pic rasidnagar 26.05.16 (1)

নিজস্ব প্রতিনিধি:

রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নে বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের গুলি ও বেপরোয়া হামলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার বিকাল পাঁচটায় রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের কাহাতিয়া পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল করিমও আহত হয়েছেন। নির্বাচনের মাত্র দুই দিন আগে বড় ধরনের এ সহিংস ঘটনায় পুরো রামুতে উত্তেজনা ও আতংক বিরাজ করছে।

হামলার শিকার রশিদনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল করিম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে তার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ওই এলাকায় গণসংযোগ ও মিছিল করছিলো। ১নং ওয়ার্ড থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি ২নং ওয়ার্ডে গেলে ওই এলাকার বাসিন্দা চেয়ারম্যান প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল জনতা অস্ত্র, দা, রড় ও লোটিসোটা নিয়ে তাদের উপর পিছন থেকে অতর্কিতভাবে হামলা শুরু করে। হামলায় প্রায় অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছে। আহতদের প্রায় ২০জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। হামলায়র পর রামু হাসপাতালে আহতদের নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খান। এ সময় আহত ব্যক্তিদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ আবদুল মালেকে ছেলে শেফাক, গোলাম হোছেনের ছেলে সাইফুল, ফরিদুল আলমের ছেলে রবিউল ও আবদুর রহিম, জুনু মিয়ার ছেলে নুরুল আলম, নাছির আহমদের ছেলে লুতু মিয়া, হামিদুল হক দফাদারের ছেলে ছৈয়দুল হক, রহমত আলীর ছেলে শাহজাহান, ফরিদুল আলমের ছেলে মোজাম্মেল, ফজল করিমের ছেলে মঞ্জুর আলম, মৃত নুর আহমদের ছেলে বদিউল আলম, মোছন আলীর ছেলে ছুরুত আলম, মনো মিয়ার ছেলে মো. ইসলাম, বশির আহমদের ছেলে ছলিম উল্লাহ, নুরুল হকের ছেলে ছিদ্দিক মিয়া, বছর আলীর ছেলে ফরিদুল আলম, নুরুল ইসলামের ছেলে মো. হোছন, মোহাম্মদ হোছনের ছেলে রবি উল্লাহ, পরিচয় পাওয়া গেছে। এদের অনেক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অনেককে দা দিয়ে এবং লাটি-সোটা দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আহত ছলিম উল্লাহ, ছৈয়দুল হক ও লুতু মিয়া জানিয়েছেন, তারা চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল করিমের নেতৃত্বে ধানের শীষ প্রতীকের মিছিল নিয়ে নতুন বাজার হয়ে কাহাতিয়া যাচ্ছিলেন। মিছিলটি কাহাতিয়াপাড়া গেলে প্রতিদ্বন্ধি চেয়ারম্যান প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের একটি মিছিল মুখোমুখি হয়। মিছিলটি অতিক্রম করার সময় আবদুল করিমের সমর্থকদের পেছন থেকে গুলি চালাতে শুরু করে সিরাজুল ইসলামের লোকজন। এসময় মিছিলে থাকা লোকজন ছত্রভঙ্গ হলেও সিরাজুল ইসলামের সমর্থকরা আবদুল করিমের সমর্থকদের ব্যাপকভাবে মারধর চালাতে থাকে। এমনকি অনেককে মারধর করে পার্শ্ববর্তী একটি খালে ফেলে দেয়া হয়।

চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল করিম জানান, হামলাকারিরা তাকেও মারধর করে এবং অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। হামলার সময় অনেক লোকজন বাঁচার উদ্দেশ্রে পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে আশ্রয় নিয়ে তাদেরও ঘেরাও করে রাখে সিরাজুল ইসলামের লোকজন। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা জানা সম্ভব হয়নি।

রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্মরত মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম রাসেল জানিয়েছেন, প্রচুর আহত মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। আহতদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ রয়েছেন। গুরুতর আহতদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিনা কাজী জানিয়েছেন, বিএনপি প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মিছিল মুখোমুখি হলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ-বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রামু হাসপাতালে একজন গুলিবিদ্ধ সহ ২১ জনকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। গুরুতর আহত আরো ৪ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল বলে জানান তিনি।

রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রভাষ চন্দ্র ধর জানিয়েছেন, হামলার বিষয়টি জেনেছি। বিএনপি প্রার্থী ও বিদ্রোহীদের মুখোমুখি মিছিলে বাকবিতন্ডা থেকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন