রামগড়ে সোনাইপুল-সোনাইআগা বেড়িবাঁধ বিলীন হওয়ার পথে

 

রামগড় প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা সদরে সোনাইছড়ি খাল থেকে বালু উত্তোলনের কারণে খালের তীব্র ভাঙ্গনে সোনাইপুল-সোনাইআগা বেড়িবাঁধটি ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। খালের ভাঙ্গনে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এ বেড়িবাঁধের উপর নির্মিত রাস্তাও ধ্বসে যাচ্ছে। বালু উত্তোলন বন্ধ করা এবং খালের ভাঙ্গন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ নেই।

জানাযায়, উপজেলা সদরের সোনাইছড়ি খালের পাড়ে ১৯৬৪-৬৫ সালের দিকে তৎকালীন রামগড় মহকুমার অর্থায়ানে সোনাইপুল-কালাডেবা-সোনাইআগা পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ ভেড়ি বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। বড় পাথার নামে প্রায় দুই হাজার একর ধান্য জমির ফসল বন্যা প্লাবন থেকে রক্ষা করতে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়।

নির্মাণের পর থেকে এ পর্যন্ত বাঁধটির কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। খালের ভাঙ্গনে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধের উপর নির্মিত কালাডেবা- সোনাইআগা ও স্লুইসগেট রাস্তার বিভিন্ন অংশ খালের ভাঙ্গনে ধ্বসে গেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫-৬ একর ধান্য জমি খালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। অব্যাহত ভাঙ্গনে বর্তমানে বেড়িবাঁধের তীরবর্তী সোনাইআগা গ্রামের ২০টি বসতবাড়ি, কালাডেবা এলাকায় ১০টি, ফেনীরকুল কাঁঠালবাড়ি এলাকায় ৩০-৩৫টি পরিবারের বসতবাড়ি হুমকিরমুখে আছে। সোনইপুল গরু বাজার হতে কালাডেবা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানেও ভাঙ্গন অব্যাহত আছে। ভেড়ি বাঁধের উপর নির্মিত এ রাস্তাটিও এখন হুমকিরমুখে।

এদিকে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে যাওয়ায় বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টি হলেই সোনাইছড়ি খাল প্লাবিত হয়ে পার্শ্ববর্তী বিপুল পরিমান ধানের জমি ডুবে যায়। এতে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। রামগড় পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ শাহ জাহান কাজী রিপন বলেন, বেড়িবাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা পৌরসভার মধ্যে। খালের ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করে বিশাল বেড়িবাঁধটি রক্ষা করার এত বড় বাজেট পৌরসভার নেই। এ ব্যাপারে প্রকল্প গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডে চিঠি পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বলে তিনি জানান।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানায়, খালের বিভিন্ন স্থানে পাম্প মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এক সময়ের অপ্রশস্ত সোনাইছড়ি ছড়াটি বালু তোলার কারণে ধীরে ধীরে এখন বড় খালে পরিণত হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে উপজেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সদস্য মো. মোস্তফা খালে মেশিন বসিয়ে বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে অভিযোগ করার পর ডিসি’র নির্দেশে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে রামগড় সহকারী কমিশনার (ভূমি) গত মার্চ মাসে এক বালু উত্তোলনকারীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

এদিকে, খালের উজানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত একটি পরিত্যক্ত স্লুইস গেটও ভাঙ্গনের জন্য দায়ী বলে জানান এলাকাবাসী। আশির দশকে স্লুইস গেইটটি নির্মাণের পর থেকেই পরিত্যক্ত। ক্ষতিকর বালু উত্তোলন বন্ধ করতে কিংবা খালের ভাঙ্গন প্রতিরোধ করে বেড়িবাঁধটি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।

এ ব্যাপারে রামগড় উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো. আল মামুন মিয়া বলেন, খালের ভাঙ্গন প্রতিরোধের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের। বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। তবে বালু উত্তোলনের কারণে খালের ভাঙ্গন বা পরিবেশের কোন ক্ষতি হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখে আগামীতে বালু মহাল ইজারা না দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন