রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের ৭৬ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত

kartai

ফাতেমা জান্নাত মুমু:
বিলুপ্ত হয়ে গেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলধারা ও বাংলাদেশের প্রধান মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র কাপ্তাই হ্রদের প্রায় ৭৬ প্রজাতির মাছ। ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে- সীল, দেশী সরপুঁটি, ঘাউরা, বাঘাইড়, মোহিনী বাটা, দেশী পাঙ্গাস, দেশীয় মহাশোল, মধু পাবদা, পোয়া, ফাইস্যা, তেলে গুলশা, সাদা ঘনিয়া। ক্রম হ্রাসমান মাছের মধ্যে- রুই, কাতলা, মৃগেল, বাঁচা, পাতি গাবদা, বড় চিতল। আরও কয়েক প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। কার্প মাছের তালিকাভ’ক্ত রুই, কাতলা, মৃগেল মাছের আহরণের পরিমাণও আশংকাজনক হারে কমে এসছে। বলে জানান জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা ।

শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাঙামাটি জেলা বিএফডিসির উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

এসময় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটি সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী বেলাল উদ্দিন, উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুর রহমান, হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা মো. ইসহাক প্রমুখ।

রাঙামাটি জেলা বিএফডিসির তথ্য সূত্রে আরও জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদের দেশয়ি প্রজাতির সবচেয়ে সু স্বাদু মাছ শোল প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের কারণে সৃষ্ট দেশের এই বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদটিকে মৎস্য সম্পদের ভাণ্ডারে পরিণত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনকে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হয়। তারপর ১৯৬৪ সাল থেকে হ্রদ থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মৎস্য আহরণ শুরু হয়। ওই সময় আহরিত মাছের মধ্যে ৭৬ প্রজাতির মৎস্য চিহ্নিত করা হয়- যার মধ্যে ৭০ প্রজাতির মাছই ছিল দেশীয় প্রজাতির। কিন্তু বর্তমানে ওইসব দেশীয় প্রজাতির বেশির ভাগ মাছ হ্রদ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী বেলাল উদ্দিন জানান, বর্তমানে মাত্র ৩২ প্রজাতির মাছ হ্রদ থেকে বাণিজ্যিক হারে আহরণ হয়। হ্রদ এলাকায় অবাধে মা মাছ নিধনের কারণে ২০-২৫ বছর আগেই মাছের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক প্রজনন ব্যাহত হয়ে পড়ে। হ্রদে মাছের উৎপাদন বাড়াতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যাপ্ত পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে।

বর্তমানে হ্রদে দেশীয় যেসব প্রজাতির মাছ রয়েছে সেগুলো সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি হ্রদে মাছের সুষ্ঠু ও প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশ বৃদ্ধি এবং উৎপাদন বাড়াতে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে অনির্দিষ্টকালের জন্য সবধরণের মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। একই সঙ্গে হ্রদে অবমুক্ত করা হয় কার্প ও সিলভার কার্প জাতীয় মাছের পোনা। এছাড়া মাছের উৎপাদন বাড়াতে বছরের সব ঋতু ও মৌসুমে ৯ ইঞ্চি সাইজের পর্যন্ত পোনামাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন