রাঙামাটিতে কোন গোষ্ঠী পর্যটকদের অপহরণের দায় স্বীকার করেনি

অপহরণ

স্টাফ রিপোর্টার:
রাঙামাটিতে দু’পর্যটককে কারা অপহরণ করেছে এ বিষয়ে কোন তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি প্রশাসন। টানা ১০দিন উদ্ধার অভিযান ও স্থানীয়দের উদ্ধারের সাথে সম্পর্কিত করেও কোন সফলতা না আসায় ঘটনা নাটকীয়ভাবে অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বাহিনী। এছাড়া কোন দেশী-বিদেশী স্বসস্ত্র দল অপহরণের দায় স্বীকার করেনি।

সূত্র জানায়, গত শুক্রবার পাসিং পাড়ার কার্বারি (পাড়া প্রধান) পাসিং এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যর একটি দল ভারতের মিজোরাম এলাকায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান লিবারেশন পার্টির (এএলপি) কমান্ডারের সাথে নিষ্ফল আলোচনা শেষে সোমবার ফিরে আসার পর নাটকীয়তা অন্যদিকে মোড় নিয়েছে।

পাসিং কার্বারী জানান, তাকে এএলপি কমান্ডার জানিয়েছেন তারা পর্যটকদের অপহরণ করেননি। অন্যকোন গোষ্ঠী অপহরণ করতে পারে। অপহরণের চারদিন পর পাসিং কার্বারী এএলপি পর্যটকসহ তিনজনকে অপহরণ করেছে এবং মুক্তিপণ বাবাদ ৫০ লক্ষ টাকা দাবী করেন বলে নিরাপত্তা বাহিনীকে জানিয়ে ছিলেন। তার কথা অনুযায়ী ছয় সদস্যের দল ভারতের মিজোরামে এলপি কমান্ডারের সাথে বৈঠক করতে যায়।

স্থানীয় গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সীমান্তবর্তী রাঙ্গামাটির সেপ্রু পাড়ার নতুন পুকুর এলাকা স্বসস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী পর্যটকসহ তিন জনকে অপহরণের খবর জানিয়েছিল এবং এ এলপি মুক্তিপণ বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা দাবী করেছে বলে জানিয়েছিল পাসিং কার্বরী। সব কিছু মিলিয়ে এখন সন্দেহের তীর সাচিং কার্বারীর দিকে। এবিষয়ে জানতে সোমবার তাকে রুমা নিরাপত্তা বাহীনির কার্যালয়ে আনা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নতুন তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বাহিনী। এর আগে রবিবার রুমার হোটেল ব্যবসায়ী জয়পাল বড়ুয়াকে নিরাপত্তাবাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, সেপ্রু পাড়া এলাকাটি এ এলপি ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) অধ্যুষিত এলাকা। স্থানীয় ম্রো ন্যাশনাল পার্টি (এমএনপি) সদস্যরা ঐ এলাকা দিয়ে ভারতের মিজোরামে অস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য যাতায়ত রয়েছে। এছাড়া পাসিং কার্বরী জেএসএস সমর্থিত। তার তার আরেক ভাই এ এলপির সদস্য। অপহৃত গাইড মাংসাই ম্রো পাসিং কার্বারীর ছোট ভাই।

বান্দরবান রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নকিব আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, পাসিং কার্বারীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যর দল মিজোরাম থেকে নিষ্ফল আলোচনা শেষে ফিরে আশায় অপহরণের নাটকিয়তা ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে। যৌথ বাহিনী পর্যটকদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।

বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল. ওয়ালিয়র রহমান বলেন, অপহরণকারীরা বিদেশী স্বসস্ত্র দল না দেশীয় আঞ্চলিক দল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া সেপ্রু পাড়ায় একটি অস্থায়ী বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ঐ এলাকায় দেশী-বিদেশী সন্ত্রাসী দলের যাতায়ত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিলাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আতুমং জানান, পাসিং কার্বারী ফিরে আসার পর থেকে পর্যটকদের উদ্ধার অভিযান নিয়ে সংসয় সৃষ্টি হয়েছে। তাদেরকে কারা অপহরণ করেছে নাকি নিখোঁজ হয়েছে তদন্তে তা বেরিয়ে আসতে পারে বলে তিনি জানান।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, পর্যটক জাকির হোসেন মুন্না ও আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের সাথে মাংসাই ম্রোর সাথে দীর্ঘ দিনের সখ্যতা রয়েছে । গত দশ বছরে ২৫ বারের উপরে এ দু-পর্যটক সেপ্রু পাড়া ভ্রমন করেছে। গত কোরবানির ঈদে মুন্নার বাসায় অবস্থান করে মাংসাই ম্রো। ২৮ সেপ্টেম্বর মাংসাই ম্রোর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যর দল সেপ্রু পাড়া ভ্রমনে যায়।

প্রসঙ্গত, গত রোববার রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়তলী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নতুন পুকুর এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের সন্ত্রাসীরা পর্যটক জাকির হোসেন মুন্না (৩০), আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের (৩২) এবং স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড মাংসাই ম্রোসহ(২৮) তিন জনকে অপহরণ করে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন