যে বিদ্যালয়ে নেই কোন মুসলিম শিক্ষক: ৮ বছর ‘ইসলাম শিক্ষা’র পাঠদান চলছে হিন্দু শিক্ষক দিয়ে

IMG_20160723_154632 copy

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা উপজেলাধীন ৩নং কবাখালী ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ‘হাচিন সন পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’-এ দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ হিন্দু অথবা বড়ুয়া শিক্ষক কর্তৃক ইসলাম ধর্মের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার পাঠদানের অভিযোগ উঠেছে।

এলাকাবাসী জানায়, দীঘিনালা উপজেলায় হাচিন সন পুর একটি সুপরিচিত এলাকার নাম। এই এলাকাটি একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। এখানকার মানুষজন খুবই শান্তপ্রিয় ও অত্যন্ত ধর্মভিরু বলেও স্থানীয়ভাবে পরিচিত।

তারা আরো জানায়, দীর্ঘদিন যাবৎ হাচিন সন পুর এলাকাবাসী বার বার একটি অভিযোগ করে আসছে যে, হাচিন সন পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৮ বছর যাবৎ ইসলাম ধর্মীয় কোন শিক্ষক নেই। হিন্দু ও বৌদ্ধ শিক্ষক দিয়ে ইসলাম ধর্মের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে ভেসে উঠেছে এই স্কুলের বাস্তব চিত্র।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টিতে মোট ৩৪৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৯ জন শিক্ষার্থী ইসলাম ধর্মের অনুসারী আর বাকি ৮৪ জন শিক্ষার্থী হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণীতে ৭৮ জনের মধ্যে ৬৩ জন, চতুর্থ শ্রেণীতে ৫৪ জনের মধ্যে ৪২ জন, পঞ্চম শ্রেণীতে ৭১ জনের মধ্যে ৪৮ জন শিক্ষার্থীই মুসলিম।

সূত্রে জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার পাঠদান করাতেন বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক পংকজ কুমার চৌধুরী ।  বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বে আছেন। এদিকে চতুর্থ শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার পাঠদান করান বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শান্তিময় ত্রিপুরা এবং তৃতীয় শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার পাঠদান করান ঝর্ণা বড়ুয়া।

ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা মুসলিম শিক্ষক কর্তৃক নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন হাচিন সন পুর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওঃ ইয়াকুব আলী।

তিনি আরো বলেন, “একজন অমুসলিম শিক্ষক কখনো ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ঈমানী জ্ঞান রাখেনা। ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইটিতে অনেক আরবী লেখা রয়েছে যার বাংলায় উচ্চারণ দেওয়া নেই, অমুসলিম হিন্দু বা বৌদ্ধ শিক্ষক তা শিক্ষার্থীদের পাঠ করে শুনাতে পারেনা। এখানে ৫টি ঈমানী কালেমা রয়েছে, সূরা-কেরাত রয়েছে অমুসলিম হিন্দু-বৌদ্ধ শিক্ষকরা তা সঠিক উচ্চারনে পড়াতে পারবেনা। যার ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভুল-ভ্রান্তিতে পরে যায়। তাই ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা পাঠদানে মুসলিম শিক্ষকের বিকল্প নেই”। তিনি হাচিন সন পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ারও দাবি জানান।

এব্যাপারে জানতে চাইলে হাচিন সন পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা ক্লাস নেয়া  সাবেক প্রধান শিক্ষক পংকজ কুমার এই প্রতিবেদককে জানান, ” শিক্ষার্থী সংখ্যা অনুপাতে অত্র বিদ্যালয়ে ৩ জন মুসলিম শিক্ষক দরকার। অথচ ১জন মুসলিম শিক্ষকও নেই, এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়। মুসলিম শিক্ষক নেই বিদায় আমরা বাধ্য হয়েই ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার পাঠদান দিয়ে থাকি। আমি চাই বিদ্যালয়ে মুসলিম শিক্ষক আসুক”।

এই সম্পর্কে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষক থাকবেনা এটি খুবই দুঃখজনক। যেহেতু বিদ্যালয়ে ৮০% এরও বেশি শিক্ষার্থী মুসলিম তাই কম করে হলেও এখানে ৩ (তিন) জন মুসলিম শিক্ষক দরকার। তিনি আরো বলেন, আমরা এখানে মুসলিম শিক্ষক চেয়ে কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করে আসছি, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ বরাবর আবেদনও করা হয়েছে কিন্তু আমরা এর কোন জবাব পাইনি”।

দিঘীনালা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ঝর্না চাকমা বলেন, “শিক্ষক শিক্ষকই সে যেকোন বিষয় পড়াতে পারবে। একজন হিন্দু/বৌদ্ধ শিক্ষক ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা পড়াতে পারবে এতে কোন সমস্যা নেই। তিনি আরো বলেন এগুলো দেখা আমার বিষয় নয়, আমি আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত।

দিঘীনালা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. শহীদ হোসেন চৌধুরী এই সম্পর্কে বলেন, ” এ বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক, তবে শিক্ষক সমস্যা সমাধানের বিষয়টি আমার হাতে নেই। এটি পার্বত্য জেলা পরিষদে ন্যস্ত করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ এই সমস্যার সমাধান দিতে পারবে”।

একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার বিদ্যালয়ে মুসলিম শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু তা না হয়ে এখানে ৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছে যাদের সবাই হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। যার দরুন বাধ্য হয়েই হিন্দু বৌদ্ধ শিক্ষক কর্তৃক ইসলাম ধর্মের পাঠদান করতে হয়। তাই এখানে মুসলিম শিক্ষক নিয়োগে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকাবাসী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন