যে কারণে মুসলমান হলেন তামিল রকস্টার শঙ্কর

sankar raja
বিনোদন ডেস্ক :

বর্তমান তামিল সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক জীবন শঙ্কর রাজা। মাত্র ১৫ বছরে তিনি ১শ’র বেশি সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এ শিল্পীর নেশা সব সময় সৃজননশীল কিছু করা। ফোক, আরঅ্যান্ডবি, টেকনো, হেভি মেটাল, ওয়েস্টার্ন মিউজিক, হিপ হিপ হপসহ বহু ধারার গানে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন তিনি। তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি। তাই তাকে ‘রকস্টার’ বলা হয়। ‘ইয়ুথ আইকন অব তামিল ফিল্ম মিউজিক’ নামেও পরিচিত তিনি।

চরম কুসংস্কারচ্ছন্ন এক হিন্দু পরিবারে জন্ম তার। জীবন শঙ্করের ভাষায়- ‘একটি গ্লাস ভেঙে গেলেও তার বাবা পুরোহিতদের ডাকতেন। এমন এক পরিবারে জন্ম নিয়ে কী কারণে মুসলমান হলেন তিনি? সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সে উত্তর দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, আমার বাবা একজন একনিষ্ঠ হিন্দু। তিনি এতটাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন যে, একটি গ্লাস ভেঙে গেলেও তিনি পুরোহিত ডাকবেন। মা-বাবা দু’জনই ধর্মীয় রীতি-নীতি কঠোরভাবে মেনে চলেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমার মনে হতো- কোনো এক সর্বশক্তিমান পুরো বিশ্বকে চালাচ্ছেন। আমার মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খেত যে, সেই প্রভুর আবার প্রতিকৃতি হয় কিভাবে?

এরপর আমার মায়ের হঠাৎ মৃত্যু আমার জীনবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। কিছু কাজে আমি মুম্বাই এসেছিলাম। সেখান থেকে চেন্নাই ফেরার পর আমার মায়ের ভয়ানকভাবে কাশতে থাকেন। দ্রুত আমি ও আমার বোন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বের হই। আমি গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে পৌঁছলাম। এরপর মায়ের হাত ধরে বসি। অল্প সময় পরই তিনি মারা যান এবং তার একটি হাত নিচের দিকে পড়ে যায়।
এ অবস্থায় আমি কাঁদছিলাম কিন্তু আশ্চর্য হলাম এই ভেবে যে, সেকেন্ডের মধ্যে মায়ের আত্মা কোথায় গেল? এ ভাবনার মধ্যেই আমি সরাসরি আল্লাহর ডাক শুনতে পেলাম। সেটা ছিল এক আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা।

এরই মধ্যে আমার এক বন্ধু মক্কা থেকে এসেছে। সে বললো- তুমি খুব ভেঙে পড়েছ। তোমার শক্ত হওয়া উচিত। সে আমাকে একটি জায়নামাজ দিয়ে বললো- এটি আমি মক্কায় ব্যবহার করেছি। এটা মক্কার স্পর্শ পেয়েছে। তোমার মন খুব খারাপ লাগলে এটাতে বসবে।

এরপর আমি সেটি নিয়ে আমার রুমের এক কোনায় রেখে দিলাম। ঘটনাক্রমে আমি সেটির কথা ভুলে গেলাম। কয়েক মাস পর আমি আমার মায়ের ব্যাপারে একজনের সাথে কথা বলছিলাম। এতে আমার মন প্রচণ্ড ভারি হয়ে উঠলো। আমি আমার রুমে ঢুকলাম। ঘটনাক্রমে জায়নামাজটি আমার চোখে পড়লো। যেভাবে রেখেছিলাম সেভাবেই আছে। আমি সেটি প্রথমবার বিছিয়ে বসলাম এবং বলতে শুরু করলাম- ‘হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও’।

এটা ছিল ২০১২ সালের কথা। এরপর আমি অর্থসহ কোরআন পড়তে শুরু করলাম। এটা কেমন যেন দ্রুত আমার সাথে সংযুক্ত হয়ে গেল। আমি ইসলাম মানতে শুরু করলাম। জানতে শুরু করলাম কিভাবে প্রার্থনা করতে হয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে আমি ইসলামে দীক্ষিত হলাম। যদিও আমি আমার নাম এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবর্তন করিনি। পরবর্তী সময়ে সেটা করবো ভাবছি।

আমি আমার বাবকে বলেছিলাম- আমি কুরআন পড়তে শুরু করেছি এবং সেটা আমাকে পরম শান্তি দিচ্ছে। বাবা বললেন- ‘তোমাকে মুসলিম হতে দেখা আমার জন্য সুখকর নয়’। তবে আমার ভাই ও ভাবি আমকে বেশ সহযোগিতা করেছেন।

এটা অদ্ভুত যে, আমি একটি আধ্যাত্মিক অনুভূতি পেয়েছিলাম আমার মায়ের কাছ থেকে। তিনি আমার হাতের ওপর মারা গেলেন। আর বললেন ‘জীবন, তুমি বড় একা। আমি চাই তুমি ইসলাম নামক গাছটির ছায়ায় আশ্রয় দাড়াও।

জীবন শঙ্করের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
ভারতের খ্যাতিমান সঙ্গীত রচয়িতা ইলাইয়া রাজার কনিষ্ঠ ছেলে জীবন শঙ্কর রাজা। ১৯৭৯ সালের ৩১ আগস্ট জন্ম নেন তিনি।
১৯৯৬ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে সঙ্গীতে ক্যারিয়ার শুরু। পাঁচ বছর তাকে ব্যাপক লড়াই করতে হয়। ২০০১ সালে ‘থুলুভাধো ইলামাই’ গানের মাধ্যমে তিনি পৌঁছান খ্যাতির শীর্ষে।

শঙ্কর রাজা ইতোমধ্যেই দুটি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে ২০০৪ সালে ‘সেভেন জি রেইনভো কলোনি’ নাটকের জন্য তিনি সেরা সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার পান। তার চেয়ে কম বয়সে আর কেউ এই পুরস্কার জিততে পারেননি।

তিনি ছয়বার ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে জন্য মনোনীত হয়েছেন। ২০০৬ সালে মনোনীত হন তামিল নাড়– স্টেট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডের জন্য। ২০০৬ সালে রাম সিনেমার সংগীত পরিচালনার জন্য তিনি সাইপ্রাস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল অ্যাওয়ার্ড জয় করেন। আর কোনো ভারতীয় এই পুরস্কার পাননি।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন