মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা রোহিঙ্গা যুবকের কথা

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

‘সেদিন সেনাবাহিনী বাড়ি থেকে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। বিভিন্ন গ্রাম থেকে আরও ৩০ জনের মতো যুবককেও ধরে নিয়ে যায় তারা। একটি খোলা মাঠে নিয়ে সবার হাত পেছনে রশি দিয়ে বেঁধে পরনের কাপড় খুলে নেয়। এরপর সবাইকে রড ও বাঁশ দিয়ে মারতে থাকে। সেনা সদস্যদের সঙ্গে যোগ দেয় উগ্রপন্থী মগরাও। বিরতিহীন বর্বর নির্যাতনের এক পর্যায়ে অনেকে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর তাদের গুলি চালিয়ে হত্যা করে সেনা সদস্যরা।’ এভাবেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বর্ণনা দেন রোহিঙ্গা যুবক রহিম মিয়া।

 মিয়ানমার সেনা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার যুবকদের মধ্যে একমাত্র রহিম মিয়াই প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন। এরপর গুলির দগদগে ঘা নিয়ে গত সপ্তাহে পালিয়ে আসেন কক্সবাজারে। গত ২১ অক্টোবর উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রহিম মিয়ার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

রহিম মিয়া জানালেন, রাখাইন রাজ্যের বুথিদংয়ের একটু দক্ষিণে ও মংডু টাউনশিপের কাছাকাছি এলাকায় তার বাড়ি। বাবা আবুল কালাম মারা গেছেন দুই বছর আগে। চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে রহিম সবার বড়। সংসার চলত তারই উপার্জনে। ভাই-বোন সবাই মিলে সুখেই ছিলেন তারা।

সেদিনের ভয়ঙ্কর স্মৃতি হাতড়ে রহিম মিয়া বলেন, ‘যারা জ্ঞান হারায়নি, সেনারা তাদের হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে দৌড়ে পালাতে বলে। কিন্তু দৌড়ানো দূরের কথা, কেউ ভালোভাবে হাঁটতেও পারছিল না। এরপরও সবাই যার যার মতো করে চেষ্টা করে পালিয়ে আসার। কিন্তু সেই সুযোগও দেয়নি সেনারা। পেছন থেকে গুলি করে তারা। গুলি লাগলে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারাই। পরে জ্ঞান ফিরে দেখতে পাই, আমার সঙ্গের সবাই মাটিতে পড়ে রয়েছে। তাদের কেউই বেঁচে নেই। কিছু দূরে সেনাবাহিনী ও মগরা বিশ্রাম নিচ্ছিল। তারা গল্প করছে, হাসছে আর হৈ-হুল্লোড় করছে। কোনও উপায় না দেখে আমি মরার মতো পড়ে থাকি। সন্ধ্যা হয়ে গেলে সেনারা চলে যায়।’

 রহিম মিয়া জানান, সেনা সদস্যরা চলে যাওয়ার পর পাহাড়ের জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা গ্রামের অন্যরা এসে তাকে উদ্ধার করে। সেদিন রাতেই অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। এ সময় তিনি হাঁটতে পারছিলেন না। পালাক্রমে অন্য রোহিঙ্গাদের কাঁধে ভর করে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তে পৌঁছান তিনি।
রহিম মিয়া বলেন, ‘সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে এলে বিজিবির সহায়তা উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছাই। আমি জানি না, আমার ভাই-বোনরা বেঁচে আছে না মারা গেছে। যদি বেঁচে থাকে, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে কোথাও না কোথাও দেখা হবে।’

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন