বৌদ্ধ ভান্তের মিয়ানমারে পাচার করা ১১ তরুণী উদ্ধার, আটক-২

 ততততত

স্টাফ রিপোর্টার:
বৌদ্ধ ভান্তে কর্তৃক বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থেকে মিয়ানমারে পাচার হওয়া পাহাড়ী ১১ কন্যাকে উদ্ধার করে দেশে ফেরৎ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় বৌদ্ধ ভিক্ষু উসরী ও নাইক্ষ্যংছড়ির সোনাইছড়ি এলাকার বাসিন্দা উসি থোয়াইকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মাসে রোয়াংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ১৩ কিশোরীকে একটি আশ্রমে রেখে বিনা খরচে লেখা পড়ার কথা বলে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার মিতিংঙ্গ্যা ছড়ি বৌদ্ধ বিহারে নিয়ে যায় বৌদ্ধ ভিক্ষু উসিরি। পরে ভিক্ষু’সহ সংঘবদ্ধ একটি চক্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা বলে কিশোরীদের মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরতলীতে পাচার করে। সেখানে নেইছাদং এলাকায় একটি বৌদ্ধ আশ্রমে তাদের রাখা হয়।

উদ্ধার হওয়া শিশুরা হলেন- চিং থেউ (৯), উক্রেঞো মারমা (১২), নুক্রাই উ (১৩), হ্লামেই প্রু (১১), পাইনুচিং মারমা (১৪), মেম্যাচিং (১৩), লুজা মারমা (১১), মেচিং মারমা (১০), চানুচিং মারমা (১১), মাইক্যচিং (১২), মেথুই চিং (১২), তবে এখনো ২ তরুণীর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

Bandarban pic-2, 19.3

ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম জানায়, বান্দরবানের বোয়াংছড়ির বিভিন্ন এলাকা থেকে একটি চক্র ১৩ মারমা কিশোরীকে মায়ানমারে পাচার করে। পরে তাদের অভিভাকরা রোয়াংছড়ি থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ পাচার কাজে জড়িত উসরি ভিক্ষুকে আটক করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিয়ানমারের মংডু এলাকার নেছাদং থেকে তাদের উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে অপর দুই শিশুকে উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে।

তবে উদ্ধারকৃত কিশোরীরা জানায়, তারা স্বেচ্ছায় মায়ানমারে গিয়েছিল। তাদের কয়েকদিনের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে নেয়া হবে বলে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা আশ্বাসও দেয়। এর বেশি প্রকাশ্যে তারা আর কিছু বলতে চায়নি।

তবে গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকজন মেয়ে স্বীকার করেছে, বাংলাদেশে থাকতে তারা ভান্তেদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। একইভাবে মিয়ানমারে থাকতেও তারা ভান্তেদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। সেখানে একেক জন ভান্তের কাছে প্রতিরাতে দুইজন মেয়েকে থাকতে হতো বলো আরো জানিয়েছে তারা।

অভিযানে সমন্বয়কারী কেপিএম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ হেমানন্দ ভিক্ষু বলেন, ‘মায়ানমারের মংডু জেলার নাইসা ডং বৌদ্ধ বিহারের প্রধান উ সারানা ভিক্ষুর সাথে যোগাযোগ করে রোয়াংছড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া ১৩ কিশোরীকে ফেরত আনতে গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের যায় আমরা’। দুদিনের প্রচেষ্টায় মিয়ানমারের বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় গত শুক্রবার গভীর রাতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) নাইসা ডং বৌদ্ধ বিহার থেকে ১১ কিশোরীকে উদ্ধার করে উলাবুনিয়া বর্ডারে নিয়ে এসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেন। শনিবার ভোর রাতে বিজিবি সদস্যরা বান্দরবান ডিবি পুলিশের কাছে শিশুদের হস্তান্তর করেন।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আাইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। উদ্ধারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের অভিভাবকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন