মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রভাব যেন এদেশে না পড়ে: বললেন বিশ্লেষকরা
কক্সবাজার প্রতিনিধি:
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অত্যাচারে মুসলিমদের পাশাপাশি পালিয়ে এসেছে ৫১৭জন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। বিশ্ব গণমাধ্যম এবং পালিয়ে আসা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, রাখাইনদের অত্যাচারে তারা এদেশে পালিয়ে এসেছে। যদিও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে আরকান আর্মির (এআরএসএ) অত্যাচারে তারা সেদেশ ছেড়েছে। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রয়া থাকলেও বাংলাদেশের সম্প্রীতি যাতে বিনষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী বলছেন বিশ্লেষকরা।
উখিয়ার কুতুপালং হিন্দু পাড়ার হরি মন্দিরের পাশে পরিত্যাক্ত একটি খামারে ১০০ রোহিঙ্গা হিন্দু পরিবারের ৫১৭জন লোক অবস্থান করছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইনদের অত্যাচার থেকে বাচঁতে গত ২৮ আগস্ট মিয়ানমারের চিকনছড়ি এবং ফইরা বাজার থেকে এসব রোহিঙ্গা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক পালিয়ে এসেছে। সংখ্যালঘু হওয়ার মুসলিম রোহিঙ্গাদের তুলনা তাদের দেওয়া হচ্ছে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা। তাদেরকে যে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়েছে ওখানেই ত্রান সামগ্রি পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সহ দেওয়া হচ্ছে নানা সুযোগ-সুবিধা। তারা এদেশে ভাল থাকলেও ভুলতে পারছেনা রাখাইনদের অত্যাচারের কথা। হত্যাকাণ্ডের কথা।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারে আবিষ্কৃত হয়েছে গণসমাধী। এই গণসমাধিতে ২৮টি লাশের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে চলছে মিশ্র পতিক্রিয়া। মিয়ানমার দাবি করছে আরকান আর্মি (এআরএসএ) এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। যদিও এই অভিযোগ নাকচে আরকান আর্মি বলেছে, এটি উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের ‘মিথ্যাচার’। শুধু আরকান আর্মি নয় সারা বিশ্বের গণমাধ্যম বলছে, এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইনরা। এদিকে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ বাংলাদেশের লোকজন বলছে, এটি তাদের বিষয়। সুতরাং এদেশের সম্প্রিতি যাতে বিনষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে সবাইকে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কক্সবাজার জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপক শর্মা দীপু বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে কোন প্রকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হোক সেটা তিনি চাননা। সেটা রোহিঙ্গাদের ব্যাপার এবং মিয়ানমারের ব্যাপার।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আয়াছুর রহমান জানান, মিয়ানমারে যে গণকবরটি পেয়েছে সেটা সর্ম্পকে সবাই জানে এই হত্যাকাণ্ড রাখাইন সেনাবাহিনীর এবং রাখাইনরা করেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের কারনেই মুসলিমদের পাশাপাশি পালিয়ে এসেছে হিন্দুরা। এই ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশে কোন বিভ্রান্তি নেই। বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। বর্তমানে দূর্গাপূজা উৎসব হচ্ছে। এই দূর্গাপূজা হিন্দু-মুসলিম সবার কাছে এটি উৎসবে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন জানান, মিয়ানমারে হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছে। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পত্র-পত্রিকা এবং ফেইসবুকে বিভিন্ন মিথ্যা গল্প লিখা হচ্ছে। এই ঘটনা নিয়ে কোন অপ্রিতিকর ঘটনা এই পূজাকালিন সময়ে যেন না হয় এবং ভবিষ্যতেও যেন না হয় এদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন জানান, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। পুলিশ কনট্রোলরুম সহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। রোহিঙ্গারা কোন অভিযোগ দিলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে পুলিশের কনট্রোলগুলো।