মিজোরামে আটক বাংলাদেশী উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দিয়েছে রাজ্য পুলিশ: ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ

11015320_10205254069406565_1680307759_n

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট :

 ২ মার্চ ভারতের মিজোরাম রাজ্যের মামিত জেলার “কান্টালাং” নামক জায়গায় মিজোরাম পুলিশের হাতে আটক ১৫ উপজাতীয় সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দিয়েছে রাজ্য পুলিশ। এই ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জন বাংলাদেশী। বাকী ২ জন ভারতীয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গ্রেফতার হওয়ার কয়েক ঘন্টার পর আটককৃতদের রাজ্য পুলিশ ছেড়ে দেয় এবং তারা অন্যান্য দলের সাথে মিলিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

আটককৃতরা পুলিশের কাছে নিজেদের বাংলাদেশ বিদ্রোহী জেএসএস ( সন্তু ) দলের সদস্য  বলে দাবী করেছে। রাঙামাটির বাঘাইছড়ির ৫৪, বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-বিজিবি‘র মারিশ্যা জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল রবিউল ইসলাম রবি সন্ত্রাসীদের ছাড়া পাওয়ার বিষয়টি পার্বত্যনিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  তবে জেএসএস সূত্রে এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করা হয়নি।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের মিজোরাম রাজ্যের শালমোড় নামক জায়গায় সন্তু লারমা দলের সশস্ত্র গ্রুপের ১৬৫ জনের একটি দলের ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত এক মাসের একটি সামরিক একাডেমিক ট্রেনিং করানো হয়। ঐ একাডেমী থেকে বাছাইকৃত ৪৮ জন সন্ত্রাসীকে পোষ্টিং দেওয়া হয় দিঘীনালার সীমান্তবর্তী নাড়াইছড়িতে। এ টিমের দায়িত্বে রয়েছেন মানষ বাবু ও ইন্দু বাবু। ঐ টিমে যোগ দেওয়ার জন্য ২ মার্চ সন্ত্রাসীরা ৪টি গাড়িতে করে রওনা হন। এর মধ্যে ৩টি গাড়ি নিরাপদে ত্রিপুরার গন্ডাছড়া রস্সেবাড়ী পৌঁছতে পারলেও একটি গাড়ি রাজ্য পুলিশের চোখ এড়াতে পারেনি। ফলে তারা ধরা পড়ে। ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নেয়ার পর সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে। এর প্রেক্ষিতে মিজোরাম রাজ্য পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। বাঘমোন পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সন্ত্রাসীরা গন্তব্যে স্থানে সবাই মিলিত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সূত্র আরো জানিয়েছে, নাড়াইছড়ি টিমের জন্য (ফুরোমোন) হরিণা থেকে আনায়ন করা আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলা-বারুদ নেয়ার জন্য গোল্ডী চাকমা ওরফে ইন্দ্র বাবুর নেতৃত্বে ১৫ জনের একটি টিম এখন বাঘাইছড়িতে অবস্থান করছে।  টিম নাড়াইছড়ি ফিরে যাওয়ার আগে বাঘাইছড়ি টিমের সাথে একত্র হয়ে যৌথভাবে বঙ্গলতলী গঙ্গারাম এলাকায় বড় ধরণের আক্রমণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।  এ জন্য বাঘাইছড়ির টিমটি দুলুবণ ছড়া এলাকায় অবস্থান নিয়েছে।  আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এ আক্রমণ চালাতে পারে বলে জানা গেছে।।

এদিকে সন্তুর সশস্ত্র গ্রুপের বাঘাইছড়ির টিমে থাকা ২ নবাগত কমান্ডারের দ্বন্দ্বে প্রায় প্রকাশ্যে।  এ দুই কমান্ডার হচ্ছেন তুফান বাবু ও বরুণ বাবু।  এদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা নিয়ে রয়েছে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।  তারা দু’জনে একে অপরের কমান্ড মানতে রাজি নয়।  এ জন্য ঐ গ্রুপে সিনিয়র কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বে থাকা অগা প্রমেশ বাবু সিনিয়রদের সাথে কথা বলে দুই জনকে দুই ভাগ করে রেখেছে।  এখন আবার তাদের মধ্যে নতুন করে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে কে আগে শত্রু পক্ষের উপর সফল আক্রমণ চালাতে পারে।

সর্বশেষ তথ্য মোতাবেক আজ ৩ মার্চ বঙ্গলতলীর দুলুবন ছড়াতে এ দুই গ্রুপের ৩১  জন    সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছে। আর অগা অভিন্ন বাবু ১৩ জনের একটি টিম নিয়ে নিচের দিকে রয়েছে। তিন গ্রুপ মিলে ৪৫ জনের একটি টিম মাঠে সক্রিয় রয়েছে বড় ধরণের আক্রমণ পরিচালনার উদ্যেশ্যে।।

 এদিকে একের পর এক বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের আটক হওয়ার ঘটনাকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে সচেতন মহল মনে করছে এর মাধমে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা হুমকি বাড়ছে। সীমান্ত এলাকায় বিজিবি‘র ক্যাম্প ও নিরাপত্তা চৌকি স্থাপনের বিরোধীতা এসব সন্ত্রাসীদের অবাধ যাতায়াতের স্বার্থেই করা হচ্ছে বলে মনে করে মহলটি। তারা সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারেরও দাবি করেন।

নিরাপত্তা বাহিনী সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, মারিশ্যা জোনের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার প্রায় একশ কিলোমিটারেরও বেশী এলাকা অরক্ষিত। আর পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা ধরলে প্রায় দুশ কিলোমিটারের বেশী সীমান্ত অরক্ষিত আছে। আর সে সুযোগে সেখান দিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর যাতায়াত অনেক সহজ। বারবার কোন না কোন উপজাতীয়দের ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হওয়া প্রমাণ করে তাদের যাতায়াত কতোটা অবাধ।

এর আগেও ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশী উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের আটকের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য হুমকি কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ৫৪, বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-বিজিবি‘র মারিশ্যা জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল রবিউল ইসলাম রবি (সিগন্যাল) পার্বত্যনিউজকে বলেন, হুমকি তো আছেই। অরক্ষিত সীমান্ত এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা সম্ভব হচ্ছেনা বলেই এসব ঘটনা আমাদের অজানা থেকে যাচ্ছে।

এদিকে নিরাপত্তা বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলোর মতে পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও বান্দরবান থেকে পাহাড়ী যুবকদের বাছাই করে স্বশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আর এজন্য তারা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের গহীণ অরণ্যকে বেছে নিয়েছে। সেখানে ভারতীয় সন্ত্রাসীগ্রুপ গুলোর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ শেষে তারা দেশের অভ্যন্তরে ফিরে আসছে। এদের মধ্যে নারী সদস্যও রয়েছে বলে সূত্রটি দাবি করে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “মিজোরামে আটক বাংলাদেশী উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দিয়েছে রাজ্য পুলিশ: ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন