মানিকছড়ি ছাত্রদলে হ-য-ব-র-ল অবস্থা, উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণায় তৃণমূলে ক্ষোভ

243-copy

মানিকছড়ি প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলা বিএনপি’র গৃহবিবাদ এখন ছাত্রদলে। ৩ মাস মেয়াদী আহ্বায়ক কমিটি ৫ বছরেও যোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি তা বিলুপ্ত ঘোষণার খবরে তৃণমূলে ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অন্যদিকে ১০ যুগ্ম-আহবায়ক কমিটির ৭ নেতা ‘পদ’ থেকে পদত্যাগ করার খবর পাওয়া গেছে। ফলে এখন উপজেলা ছাত্রদলে বিরাজ করছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা!

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রায় ১ যুগ ধরে মানিকছড়ি উপজেলা বিএনপি দু’ধারায় চলছে। এতে দিন দিন তৃণমূলে বিএনপি’র রাজনীতি ধ্বস নেমেছে। আর মূলদলের (গ্রুপিং ও দ্বন্দ্ব) ভাইরাস এখন ছাত্রদলকে আক্রান্ত করতে শুরু করেছে। ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর জেলা ছাত্রদল কর্তৃক মানিকছড়ি উপজেলায় ১০ যুগ্ম-আহ্বায়কসহ ৪১ সদস্য বিশিষ্ট ৩ মাস মেয়াদী একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলেও ওই কমিটি ৫ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ৬ সেপ্টেম্বর জেলা ছাত্রদল কর্তৃক মানিকছড়ির আহবায়ক কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহীম খলিল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৭ ডিসেম্বর-২০১১ সালে মানিকছড়ি উপজেলা ছাত্রদলের ১০ সিনিয়র নেতাকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট ৩ মাস মেয়াদী একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই সময়ের মধ্যে এ কমিটি ইউনিয়ন কমিটিসহ পূর্ণাঙ্গ উপজেলা কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও তারা দীর্ঘ ৫ বছরেও তা করতে পারেনি! বরং নিজেদের মধ্যে অর্ন্তদ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। ছাত্রদলের সিনিয়র নেতারা দু’ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ায় তৃণমূলে এর প্রভাব পড়তে শুরু করে।

এ দীর্ঘ কয়েক বছরে তারা তৃণমূলে কমিটি গঠনকে ঘিরে বার বার দ্বন্দ্ব, সংঘাতে লিপ্ত হয়। সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর দু’পক্ষ মিলে-মিশে বাটনাতলী ইউনিয়ন ছাত্রদলের ৬১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করলেও ৫ সেপ্টেম্বর তিনট্যহরী ইউনিয়ন কমিটি গঠন করতে গিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। পরে উপজেলা বিএনপি ও জেলা ছাত্রদল তাতে হস্তক্ষেপ করেন। পরে উপজেলা বিএনপি ও জেলা ছাত্রদলের সমন্বয়ে দু’গ্রুপের পছন্দনীয় তালিকা থেকে তিনট্যহরী, যোগ্যাছোলা ও মানিকছড়ি ইউনিয়নে ছাত্রদলের আংশিক কমিটি গঠন করা হয় এবং তা ২১ সেপ্টেম্বরে অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু ইউনিয়ন কমিটির আংশিক অনুমোদন হওয়ার পর তৃণমূলে দেখা দেয় বিভ্রান্তি!

অনুমোদিত কমিটির সু-খবর ব্যাপক জানাজানির মাঝেই উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির দুঃসংবাদ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। অর্থ্যাৎ ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহীম খলিল স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানানো হয় যে, মানিকছড়ি ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি নির্ধারিত সময়ে তৃণমূলে কমিটি গঠনে ব্যর্থসহ দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়ার কারণে এ আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হলো। এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে।

এ প্রসঙ্গে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মন্তব্য জানতে চাইলে সদর মানিকছড়ি ইউনিয়ন কমিটির (আংশিক অনুমোদিত) সিনিয়র সহসভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমার মতে যেহেতু গত ১৫ সেপ্টেম্বর তারিখে মানিকছড়ি ইউনিয়ন কমিটি গঠনকল্পে আহ্বায়ক কমিটির স্বাক্ষরে(পৃথক,পৃথক) জেলা কমিটিতে জমা পূর্বক ২১ সেপ্টেম্বর তা অনুমোদন প্রাপ্ত হয় এবং অনুমোদিত (আংশিক) কমিটির শেষাংশে বিশেষ দ্রষ্টব্যে বলা হয়, উক্ত আংশিক কমিটি আগামী ১ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে উপজেলা ছাত্রদল ও জেলা ছাত্রদলের নিকট জমা দিতে হবে (নিদের্শ দেওয়া হয়েছে)। এতেই প্রমাণিত যে, মানিকছড়ি আহবায়ক কমিটি এখনো বৈধ। এখানেই মানিকছড়ি ছাত্রদলের বর্তমান লেজে-গোবরে অবস্থার শেষ হয়নি!’

এদিকে উপজেলা ছাত্রদলের ১০ সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক কমিটির ৭ জন গত ২২ সেপ্টেম্বর তারিখে তাদের প্রেরিত তালিকা থেকে ইউনিয়ন কমিটিতে রদবদল হওয়ায় এতে অভিমান করে তারা এ কাজে উপজেলা বিএনপি’র বিশেষ এক নেতার ইন্দন রয়েছে বলে অভিযোগ করে তারা পদবি থেকে পদত্যাগ করেন।

বক্তব্যে ‘বিশেষ এক নেতা’ বলতে কাকে ইঙ্গিত করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের সিনিয়র একাধিক নেতা ও কর্মী বলেন, ‘দলে গ্রুপিং, দ্বন্দ্ব ও বিভাজন সৃষ্টিতে পারদর্শী বিএনপি সেক্রেটারী মো. এনামুল হকের ইন্দনে আজ ছাত্রদলে দূরত্ব বাড়ছে, যেমন বেড়েছে বিএনপিতে!’

ছাত্রদলের বর্তমান অবস্থা সর্ম্পকে জানতে চাইলে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমাদের নিজেদের ভূলের কারণেই আজ জেলা ছাত্রদল কমিটি বিলুপ্ত করেছে। আরেক যুগ্ন আহবায়ক মীর হোসেন বলেন, ছাত্রদলের কার্যক্রমে কতিপয় বিএনপি নেতার হস্তক্ষেপের কারণেই দীর্ঘ ৫ বছরেও ছাত্রদল কমিটি গঠনে ঐক্যমত হতে পারেনি। সম্প্রতি গঠিত ইউনিয়ন কমিটি জেলায় জমা দেওয়ার পর আবার ওই নেতা তাতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেন। ফলে বাধ্য হয়ে  আমরা ‘পদ’ থেকে পদত্যাগ করেছি,দল থেকে নয়।

এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহীম খলিল এর  মোবাইলে শনিবার রাত পৌনে ১১ টায় বাব বার ‘কল’ দিলেও তিনি তা রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন