মাটিরাঙ্গায় স্বামী-স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা: পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা দায়ী দাবী পিবিসিপির
সিনিয়র রিপোর্টার:
মাটিরাঙ্গায় মো. এনামুল হক (৫০) ও মোছা. পারভীন আকতার (৩৫) নামে স্বামী-স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার বিকালের দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মরা তাইফা এলাকার মকবুল এর লেকের পাড়ে এ ঘটনা ঘটে।
এ হত্যাকাণ্ড কে বা কারা সংগঠিত করেছে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে না পারলেও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারনা করছে নিহতদের আত্মীয়স্বজন। এদিকে স্বামী স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার খবর পেয়ে শত শত নারী পুরুষ ভীড় করে দুর্গম পাহাড়ী এলাকা মরা তাইফা এলাকার মকবুল এর লেকের পাড়ে।
নিহত মো. এনামুল হকের ছেলে মো. সালাউদ্দিন (১০) এ প্রতিনিধিকে জানায়, মঙ্গলবার বিকাল তিনটার দিকে তার মা বাবা তাদের বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দুরে মরা তাইফা‘র তাদের ইজারা নেয়া লেকে মাছ ধরতে ও লাকড়ি আনতে যান। সন্ধ্যার মধ্যে তাদের ফিরে আসার কথা থাকলেও সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেও তারা ফিরে আসেনি জানিয়ে সে বলে তখন ছোট দুই ভাইকে নিয়ে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে সে। বুধবার সকালে ঘুম ভেঙ্গেও মা বাবাকে দেখতে না পেয়ে প্রতিবেশী এক সহপাঠিকে নিয়ে লেকের পাড়ে গিয়ে মা বাবার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে সে ফিরে এসে বিষয়টি স্থানীয়দের জানায়।
নিহত এনামুল হক ও পারভীন আকতারের চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলে চট্টগ্রামের একটি বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ করলেও ছোট তিন ছেলে মা বাবার সাথেই থাকতো। মা বাবাকে হারিয়ে একেবারেই নির্বাক তিন শিশুপুত্র। তারা কোথায় যাবে কার কাছে আশ্রয় হবে তাদের কিছুই জানে না শিশুগুলো। নিঃশব্দ কাঁন্নার সাগরে ভাসছে তারা।
ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দুরে পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাহাদাত হোসেন টিটো সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল যান। এর পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যান খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. মজিদ আলী ও সহকারী পুলিশ সুপার (রামগড় সার্কেল) কাজী মো. হুমায়ুন রশীদ । পরে সেখান থেকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ।
এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে না পারলেও মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাহাদাত হোসেন টিটো বলেন, হত্যাকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া লাশ ময়না তদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য উপজাতীয সন্ত্রাসীদের দায়ী করেছে। বাঙালী ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলার সভাপতি ইঞ্জি. লোকমান হোসেন গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘মাটিরাংগা উপজেলার বেলছড়ি ইউনিয়নের তাইফা নামক এলাকায় প্রতিদিনের মতো বাগান পাহাড়া ও লেক থেকে মাছ ধরার জন্য এনামুল হক ও তার স্ত্রী পারভিন আক্তার ২৮ জুন বিকাল ৩টার সময় বাড়ি থেকে বের হয়ে রাতে আর ফিরে না আসায় ২৯ জুন সকালে তার প্রতিবেশীরা গিয়ে দেখে যে তাদের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ।
বিভিন্ন ভাবে জানা যায় যে উপজাতি সন্ত্রাসী গ্রুপ ইউপিডিএফ বাগান ও মাছ চাষের জন্য মোটা অংকের চাদা দাবী করে এবং প্রায় সময়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল, ধারণা করা হচ্ছে চাঁদা না দেওয়াতে উপজাতি সন্ত্রাসীরা এই নির্মম হত্যা কান্ড করে।
এই নিরীহ অসহায় বাংগালী দম্পতি হত্যার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ করছি, যথা সময়ে গ্রেপ্তার করতে অক্ষম হলে কঠিন কর্মসূচী দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলাকে অচল করে প্রশাসনকে অপরাধী গ্রেপ্তারের জন্য বাধ্য করা হবে’।