মাটিরাঙ্গার গোমতিছড়ায় সেতু না থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে জননিরাপত্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক, মাটিরাঙ্গা :
দুর্গম পাহাড়ী পথ তবুও পাকা আর কাঁচা সড়ক আছে। কিন্তু সড়কের গোমতিছড়ার উপর কোন সেতু নেই। ফলে দীর্ঘ নয় কিলোমিটার এ সড়কটি জনগণের কোন কাজে আসছে না। বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। দুর্গম পাহাড়ী জনপদে ভোগান্তির অন্য নাম গোমতিছড়া। অর্ধেক সলিং আর অর্ধেক কাঁচা সড়ক ধরে গোকুলমনি পাড়া সিআইও ক্যাম্প ছাড়াও ১০টি গ্রামের কয়েক‘শ পরিবার গোমতি থেকে বিচ্ছিন্ন।
জানা গেছে, বছর তিনেক আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে গোমতিছড়ার ওপর আরসিসি পিলারের উপর কাঠের ছাউনি দিয়ে ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য একটি ফুটব্রীজ নির্মাণ করা হলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই বর্ষার পানিতে সে সেতু তলিয়ে যায়। জনভোগান্তির সাক্ষী হয়ে গোমতিছড়ার ওপর সেই পিলার এখনো দাঁড়িয়ে আছে। এরপর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-পলাশপুর জোন একাধিকবার গোমতিছড়ার উপর কাঠ ও বাঁশের সাকো নির্মাণ করলেও তা স্থায়ী হয়নি।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে গোমতি বাজার থেকে গালামনি পাড়া হয়ে গোকুলমনি পাড়া ও শেষ প্রান্তে কেশবমহাজন পাড়া পর্যন্ত পাকা-কাচা প্রশস্ত সড়ক রয়েছে। কিন্তু গোমতিছড়ার উপর সেতু না থাকায় কোন যানবাহনই এ সড়কে চলাচল করতে পারছে না। চাদের গাড়ী বা ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলের শেষ গন্তব্য গালামনি পাড়া। এর পর থেকে ১০/১২টি গ্রামের নানা বয়সী মানুষকে পায়ে হেঁটেই দুর্গম পথ পারি দিতে হয়। এতে করে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা।
গোমতির ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মিলন ত্রিপুরা বলেন, একটি সেতুর অভাবে গোকুলমনি পাড়া, নতুনপাড়া, সহ ১০/১২টি গ্রাম গোমতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। মানুষ তার প্রয়োজনে গোমতি বাজারে আসতে পারে না। কেউ অসুস্থ হলেও তাকে বিনাচিকিৎসায় মরতে হয়। জনগণের ভোগান্তি কমাতে সড়কটি নির্মাণ করা হলেও গোমতিছড়ার উপর সেতু না থাকায় সে সড়ক দিয়ে জনগণ কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছে না। গোমতিছড়ার উপর সেতুটি নির্মাণ করা হলে, গোমতি বাজারের সাথে জনগণের সেতুবন্ধন রচনার পাশাপাশি এখানকার মানুষের নিরপত্তা নিশ্চিত হবে। মানুষ খুব সহজেই তাদের উৎপাদিত ফসলাদি বাজারজাত করতে পারবে।
গোমতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক হোসেন লিটন বলেন, একটি সেতুর অভাবে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি এজনপদে স্থানীয় স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অব্যাহত চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ। সেতুটি নির্মাণ করা হলে গোমতির সাথে দুর্গম পাহাড়ী জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। মানুষের নিত্যদিনের দুর্ভোগ কমে আসবে। সম্প্রতি উন্নয়ন বোর্ড সড়কটি পাকাকরনের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেতুটি নির্মাণ না হলে সড়কটি জনগণের কোন কাজে আসবে না।
জননিরপত্তাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়টি বিবেচনা করে খুব দ্রুত গোমতিছড়ার ওপর সেতু নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বি.এম মশিউর রহমান। তিনি বলেন, গোমতিছড়ার ওপর সেতু নির্মিত হলে মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
যোগাযোগব্যবস্থা নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক উল্লেখ করে পলাশপুর জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ খালিদ আহমেদ বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে গোমতিছড়া সেতু নির্মাণ অত্যন্ত জরুরী। অন্যদিকে সেতু না থাকায় পিছিয়েপড়া পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে নাগরিক সুবিধা হতে বঞ্চিত। গোমতিছড়া সেতু নির্মিত হলে গোমতির সাথে সাধারণ জনগণের যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি এখানকার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।