মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় গ্রেফতার ৩১: বিস্ফোরক আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা

মহেশখালী প্রতিনিধি:
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আজ মামলার রায়কে কেন্দ্রে করে কক্সবাজার-২ আসনের নির্বাচনী এলাকা মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক পুলিশি ধরপাকড় চলছে। পুলিশের তরফে বলা হচ্ছে -রায়কে ঘিরে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। এমন পটভূমিতে দুই দ্বীপ উপজেলায় গ্রেফতার আতংকে মাঠ থেকে সরে পড়েছে জামায়াত ও বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এই ইস্যুতে গতকাল রাত পর্যন্ত দুই উপজেলায় গ্রেফতার হয়েছে ৩১ নেতাকর্মী। পুলিশের দায়ের করা দুইটি বিশেষ মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সব ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মহেশখালী উপজেলা সদরের গোরকঘাটা বাজার এলাকা থেকে রোববার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিএনপি ও ছাত্রদলের ৬ নেতাকে। পুলিশের অভিযোগ খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনা করতে তারা বৈঠক করছিল। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু পেট্রোল বোমা ও ককটেল পাওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মহেশখালী থানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে হওয়া মামলায় জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বিএনপি ও ছাত্রদলের এসব নেতাকর্মীকে।
এর ধারাবাহিকতায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট মহেশখালীর প্রত্যন্ত এলাকায় জামায়াত-বিএনপি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখেন। বুধবার রাত পর্যন্ত এখানে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় ১৫ নেতাকর্মী। গতকাল দুপুরে কালারমার ছড়া থেকে শাপলাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা নুরুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে।এসময় হোয়ানক ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম ও পৌরসভার ঘোনাপাড়া থেকে উপজেলা জামায়াত নেতা মৌলভি হাসেমসহ মোট আরও ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার অভিযান প্রসঙ্গে মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানান -খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে মহেশখালীর বিভিন্ন স্থানে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য গোপনে বৈঠক করে নানা সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পরিকল্পনার চক আঁকে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীরা। গোয়েন্দা সূত্রে খবর নিয়ে পুলিশের একাধিক ইউনিট মহেশখালীর বিভিন্ন পয়েন্টে সাড়াসি অভিযান পরিচালনা করে সন্ত্রাসী পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়।
সন্ত্রাসী ও নাশকতার পরিকল্পনা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য রাখার অভিযোগে পুলিশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করছে। মহেশখালী থানার এসআই ইমাম হোসেন বাদী হয়ে করা এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান পুলিশ। ওসি জানান -আজকের রায়কে ঘিরে সন্ত্রাসীরা এলাকায় আতংক সৃষ্টির পাঁয়তারা চালালেও আসলে আজ কিছুই হবে না। কেউ সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাতে চাইলে তাকে কঠোর মূল্য দিতে হবে বলে জানান ওসি প্রদীপ।
অপরদিকে কুতুবদিয়া উপজেলাজুড়ে পুলিশের তরফ থেকে চালানো হচ্ছে জামায়াত-বিএনপি বিরোধী ব্যাপক অভিযান। গত দুই দিনে এখানে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৬ জামায়াত-বিএনপি নেতাকে। পুলিশের তরফ থেকে বিশেষ অভিযানের চক করে গতকাল রাত পর্যন্ত সমান তালে চলে এই অভিযান। জামায়াত-বিএনপির ডেরা হিসেবে পরিচিত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের পৃথক পৃথক অভিযান দল সক্রিয় রয়েছে। উপজেলা জুড়ে বাড়ানো হয়েছে পুলিশের টহল।
জামায়াত-বিএনপির মন্তানদের হুমকীতে জনসাধরণকে আতংকিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইন-চার্জ(ওসি) দিদারুল ফেরদৌস বলেন -সন্ত্রাসীদের যে কোনো তৎপরতা মুকাবিলার জন্য পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। কেউ আইন অবজ্ঞা করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে তাকে কঠোর মূল্য দিতে হবে।
ওসি জানান -গত দুই দিনে সন্ত্রাসী পরিকল্পনা ও নাশকতা সৃষ্টির তৎপরতার অভিযোগে ১৬ জন জামায়াত বিএনপি নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জামায়াতের শুরা সদস্য বড়ঘোপ ফাজিল মাদ্রাসার সহ-সুপার মাওলানা ওয়াকাস, শুরা সদস্য সাইদুল মনির, উপজেলা বিএনপি নেতা মুকুল মেম্বার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি রেজাউল করিম ও জামায়াত নেতা আব্দুল হকসহ অনেকেই রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে কুতুবদিয়া থানার এস.আই আতিক উল্লাহ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেছে। আজ উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ তল্লাসি চৌকি বসাবে বলে জানান ওসি ফেরদৌস। দুই উপজেলায় পুলিশের এমন অভিযানের মুখে দৌঁড়ের উপর রয়েছে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এমন পরিস্থিতিতে কি ভাবছেন জানতে গতকাল রাতে ফোনে কথা হয় কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ জালালের সাথে। তিনি জানান -কুতুবদিয়ার মত একটি বিচ্ছিন্ন শান্তি প্রিয় দ্বীপ এলাকায় পুলিশের এমন ধরপাকড় কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা কোন প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকা-কে সমর্থন করে না। বিগত দিনেও কুতুবদিয়ায় বিএনপি কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- করেনি, আগামীতেও করবে না। গ্রেফতারের বিষয়টি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতির পলিসি থেকে হচ্ছে উল্লেখ করে আজ খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে কুতুবদিয়ায় বিএনপির কোনো কর্মসূচি নাই বলে জানান এই বিএনপি নেতা।
মহেশখালী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুবকর ছিদ্দিক চিকিৎসাগত কারণে এলাকার বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। উপজেলা বিএনপির আরও একাধিক নেতার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তাদের মোবাইলে সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।
এদিকে এলাকায় জামায়াত-বিএনপি নাশকতা সৃষ্টি করতে চাইলে তাদেরকে কঠোর হাতে মোকাবেলা করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার পাশা চৌধুরী আশা করেন মহেশখালীর মানুষ শান্তিপ্রিয়, বিরোধীদের তরফ থেকে হুমকি দেখানো হলেও মহেশখালীতে আজ আসলে কিছুই হবে না। তার পরও জামায়াত-বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে -প্রতিটি ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সন্ত্রাস মোকাবেলায় নেতাকর্মীরা প্রয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আওরঙ্গজেব এর সাথে চেষ্টা চালিয়েও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন