মহেশখালীর পাহাড়ের গহীনে বন্ধ হচ্ছে না অস্ত্র তৈরী কারখানা

4.5.16  (5) moheshkhali

মহেশখালী প্রতিনিধি:

বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড় সমৃদ্ধ উপকুলীয় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর বিভিন্ন পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে দেশীয় অস্ত্র উৎপাদন কোন মতেই বন্ধ হচ্ছে না। বরং স্থান পাল্টিয়ে নিত্য নতুন কারখানায় অবাধে তৈরী হচ্ছে অপরাধ যগতের জন্য অবৈধ্য অস্ত্র। অপরাধী ও জঙ্গী গ্রুপগুলোর কাছে এসব অস্ত্রের চাহিদা থাকায় কারিগররা পাহাড়ী আস্থানায় অস্ত্র তৈরী করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। দিবারাত্রি নানা রকমের দেশীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরী করে সরবরাহ করছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম উদ্ধার করে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে মহেশখালীতে কোন বড় ধরণের উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না। অপরাধী এবং কারিগররা সাম্প্রতিক সময়ে বেপরোয়া হয়ে অস্ত্র তৈরীতে ব্যস্থহয়ে পড়েছে। রাতের চেয়ে দিনের বেলাকে অতিশয় নিরাপদ মনে করে কাজ করছে কারিগররা। হোয়ানক এলাকার এক পানের বরজের মালিক জানান, চার পাশে তাদের অসংখ্য সোর্স সতর্ক রয়েছে, পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যারায় আসুক না কেন, মোবাইলের মাধ্যমে আগাম খবর তারা পেয়ে যায় তাদের সোসের মাধ্যর্মে। এ কারণে দিনের বেলা পালানো সহজ। আগে রাতে কাজ করতো। এখন তারা রাতকে বেশি ঝুঁকি মনে করায় দিনের বেলায় এসকল কাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গহীন পাহাড়ে খোদাই করে দুই দিকে পালানোর ব্যবস্থা আছে। মনোরম পরিবেশে ওয়ার্কসপের মত করে তারা অস্ত্র তৈরীর কারখানাগুলো তৈরী করে থাকে। এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার লোহার পাত, স্টীলের নল, ড্রিল মেশিন, গ্যাসের চুলা, কয়লা, লেদ মেশিনসহ বিভিন্ন গোলাবারুদ তৈরীর যন্ত্রপাতি। তাদের মতে, একটি অস্ত্র তৈরী করতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হলেও সেটি স্থানীয়ভাবে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায়। আর দেশের বিভিন্ন স্থানে তা ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

এ সব কারখানায় নিয়মিত আসা যাওয়া রয়েছে বড় মহেশখালী, হোয়ানক ও কালারমারছড়া এলাকার দাগি সন্ত্রাসী ও একাধিক মামলার ফেরারী আসামীদের। তাদের রয়েছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। ওই নেটওয়ার্ক ফিশিং ট্রলার ও লবণ বোঝাই কার্গো ও গাড়ীর মাধ্যমে তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র সরবরাহ ও বিক্রি করে।

এলাকাবাসীরা জানায়, উপজেলার বড় মহেশখালীর বড় ডেইল, হোয়ানকের কেরুনতলী পাহাড়, কালারমারছড়ার ফকিরজুম পাড়া পাহাড়, খ্যাত পাহাড়ী জুম এলাকায় একাধিক অস্ত্র তৈরীর কারখানা রয়েছে।

এদিকে সম্প্রতি পুলিশ ও আইনশৃখলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সময় পরিত্যক্ত অস্ত্র উদ্ধার করলেও মুল অস্ত্র তৈরীর কারিগর ও তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতা মুখোশধারী গড়ফাদাররা রয়েছে সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এলাকাবাসী এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার পূর্বক অস্ত্র কারখানাগুলোতে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করার জন্য সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সহযোগীতা কামনা করেছেন।

একটি সূত্র জানায়, মহেশখালী থানার পুলিশ প্রশাসন বিভিন্ন সময় নারী ও পুরুষ অস্ত্র ব্যবসায়িদের হাতে নাতে অস্ত্রসহ আটক করলেও, মিলেনা মূল ব্যবসায়িদের এবং অস্ত্র তৈরীর মুল কারীগরের আস্থানা।

মহেশখালী উপজেলার প্রায় ৪লক্ষ জনসাধারণের দাবি, সামনে রোজা ও ঈদ, অন্তত এই সময়ে যদি দাগি অস্ত্রধারী ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং অস্ত্র কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হয় তা হলে জনগণের মাঝে স্বস্থি ফিরে আসবে। মহেশখালীর বিভিন্ন চিহিৃত স্পটে পুলিশ টহল জোরদার থাকলে ঈদের সময় ডাকাতি বন্দ হবে বলে সচেতন মহল মনে করেন।

মহেশখালী থানার ওসি (তদন্ত) দিদারুল ফেরদৌস বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বেশকিছু অস্ত্র উদ্ধার করেছি। মুলত মহেশখালীটি পাহাড়ঘেরা হওয়ার কারণে অপরাধিরা সহজে পালিয়ে যেতে পারে। তবে পুলিশ ওই সব অস্ত্রধারীদের ধরতে সব সময় প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন