মহালছড়িতে একটি সেতুর কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ত্রিশ গ্রামের ষাট হাজার জনসাধারণ 

IMG_20170509_170430 copy

মহালছড়ি প্রতিনিধি:

চেঙ্গী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার কেয়াংঘাট ইউনিয়নের ত্রিশ গ্রামের হাজারও মানুষ। নৌকায় করে নদী পারাপার হতে গিয়ে প্রতিবছরই হারাচ্ছেন জীবন ও সম্পদ। সেতুটি নির্মিত হলে যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি বৃদ্ধি পাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার কেয়াংঘাট ইউনিয়নের পশ্চিম পাশ দিয়ে চেঙ্গী নদী গিয়ে মিলেছে কর্ণফুলী নদীর সাথে। চেঙ্গী নদীর পূর্বপাড়ে মহালছড়ি উপজেলার কেয়াংঘাট ইউনিয়নে ত্রিশটি পাহাড়ি বাঙ্গালী গ্রামের অবস্থান। লোকসংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। এর মধ্যে ৫৫ হাজার ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকজন।

কেয়াংঘাট ইউনিয়নে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও এসব গ্রামে নেই কোন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। ফলে প্রায় তিনশতাধিক ছাত্রছাত্রীকে নদীর পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত মহালছড়ি সদরের কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয় প্রতিদিন। কিন্তু কেয়াংঘাট ইউনিয়নের পাশে অবস্থিত চেঙ্গী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে ছাত্রছাত্রীসহ পুরো ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের হাজার-হাজার মানুষ এক রকম বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করেন।বর্ষাকালে নৌকায় নদী পেরোতে গিয়ে প্রতিবছর ২/১জন করে মারা যায়।

এলাকাবাসী বলছে  ৪০ বছরে এ কেয়াংঘাটের চেঙ্গী নদীতে জীবন দিয়েছে প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু। কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারেনা।কান্তি লাল চাকমা নামের এক গ্রামবাসী বলেন, সেতু না থাকায় তাদের কষ্ট। ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না। তাদের যোগাযোগে অনেক সমস্যা হয়। কখনো কোন লোক অসুস্থ হলে সময় মতো তাকে ডাক্তারের নিকট নেওয়া যায়না।

কেয়াংঘাট এলাকার রূপময় চাকমা বলেন, প্রতি বছর নদী পেরোতে গিয়ে কেউনা কেউ মরছে।৪০ বছরে প্রায় শতাধিক লোক মারা গেলেও কেউ তাদের যন্ত্রণা বুঝচ্ছেনা। শুধু একটি সেতু না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা যেমন ভুগছে, তেমনি ভুগছে কৃষকেরা। তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারছে না। অনেক সময় উৎপাদিত পণ্য নষ্ট হচ্ছে।

সুসমা চাকমা নামের আরও এক এলাকাবাসী বলেন, কেয়াংঘাটে একটি মাত্র নৌকা। এ নৌকা দিয়ে ১০/১২জনের বেশি পারাপার হতে পারেনা। সকাল বেলায় স্কুল কলেজে পড়া শতশত ছাত্রছাত্রীসহ অনেকে ঘাটে ভিড় করে। ফলে সময় মতো কেউ ঘাট পার হতে পারেনা। ঘাটের আশেপাশে কোন যাত্রী ছাউনী নেই। ফলে বর্ষাকালে তাদের সকলকে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়।

কেয়াংঘাট ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান মেম্বার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, কেয়াংঘাট ইউনিয়ন হতে মহালছড়ি সদরে যাওয়ার জন্য মাইসছড়ি ইউনিয়ন দিয়ে একটি বিকল্প রাস্তা আছে। সেখান দিয়ে মহালছড়ি গেলে প্রায় ১৬ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। যাতায়াতে ভাড়া পড়ে প্রায় ২০০ টাকা। আর কেয়াংঘাট ইউনিয়নের পশ্চিম পাশ দিয়ে একটি সেতু হলে মহালছড়ি সদরের দুরত্ব দাঁড়াবে ৭/৮ কিলোমিটার এবং ৫০/৬০ টাকা খরচ হবে।

তিনি আরও বলেন, শুধু একটি সেতুটি নির্মাণ করা হলে কেয়াংঘাট ইউনিয়নের ত্রিশ গ্রামের যোগাযোগ সহজ হবে। কেয়াংঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চাকমা বলেন, তিনি বিভিন্ন সময় সেতুটি করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন, চিঠি দিয়েছেন, কিন্তু ফল হয়নি। খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাও সেতুটি করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন তা বাস্তবায়ন হোক এ অপেক্ষায় আছেন এলাকাবাসী।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, তিনি এলাকাবাসীর দুঃখ ও যন্ত্রণার কথা শুনেছেন। এছাড়া প্রতিবছর যে জীবন ও সম্পদ হানী হচ্ছে এ বিষয়টিও অবগত হয়েছেন। ব্রিজটি নির্মিত হলে এলাকাবাসী যোগাযোগ সুবিধা পাবে এটা নিশ্চিত। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীসহ স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি লিখবেন এবং তিনি আশা প্রকাশ করেন জনগণের অসুবিধার বিষয়গুলো বিবেচনায় সেতুটি নির্মাণের ‍উদ্যোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণাল

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন