ভূমি কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালী বিতাড়নের প্রথম পদক্ষেপ- ওয়াদুদ ভুঁইয়া

ওয়াদুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূইয়া। তিনি বলেন, এ ভূমি কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালী বিতাড়নের প্রথম পদক্ষেপ। এ কমিশনের দরুণ কোন বাঙালি অন্যায়-অবিচারের শিকার হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি বাঙালি রুখে দাঁড়াবে বলে ঘোষণা করে তিনি সরকারের নিকট অবিলম্বে এই বিতর্কিত কমিশন বাতিলের জানান। উল্লেখ্য, আগামীকাল ৪ সেপ্টেম্বর সংশোধিত কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

শনিবার গণমাধ্যমকে দেয়া এক বিবৃতিতে ওয়াদুদ ভুঁইয়া বলেন, “নতুন সংশোধিত কমিশনে চেয়ারম্যানের ভেটো প্রদানের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছে। এর ফলে অগণতান্ত্রিক ও একতরফাভাবে বৈধ ভূমি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন বাঙালিরা। পাহাড়ের ভূমি বিরোধ পাহাড়ি ও বাঙালি – এ দু’ জনগোষ্ঠী কেন্দ্রিক হলেও, কমিশনে শুধুমাত্র পাহাড়িদের প্রতিনিধিই রয়েছে। পার্বত্য বাঙালিদের কোন প্রতিনিধি কমিশনে নেই “
তিনি বলেন. “শুধু তা-ই নয়, পাহাড়ি প্রতিনিধিদের কারোই কোন ধরণের গণতান্ত্রিক ‘ম্যান্ডেট’ নেই। আঞ্চলিক পরিষদ সহ যেসব পরিষদের সদস্যরা এ কমিশনে আছেন, তাদের পাহাড়ি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও, তারা অনির্বাচিত। আর বাঙালিদের ম্যান্ডেট কারোই নেই।”

ওয়াদুদ ভুঁইয়া বলেন, “কমিশনের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তিনি একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় নিরপেক্ষ ব্যক্তি। বিচারপতি হিসেবে তার প্রজ্ঞা ও পক্ষপাতহীনতার কোন মূল্য কমিশনের আইনে রাখা হয়নি। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার। ৫ সদস্যের কমিশনের বাকি ৩ সদস্যই পাহাড়ি! সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তারা যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তাই এটি হলফ করে বলে দেয়া যায়, এ কমিশনে বাঙালিদের প্রত্যেকটি বৈধ আবেদনই অগ্রাহ্য করা হবে। এ কমিশনে অবিচারের শিকার হলে কারও উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ নেই। সর্বোপরি এটি অগণতান্ত্রিকই নয় শুধু, অসাংবিধানিকও।”

তিনি বলেন, “পাহাড়িদের কথিত ‘প্রথাগত ভূমি অধিকারে’র ধারণাটি অত্যন্ত অস্পষ্ট, অনির্দিষ্ট এবং আইনগত ও সাংবিধানিকভাবে ভিত্তিহীন। তাই এ অধিকার কীরূপে পাহাড়ি সদস্যরা বাস্তবায়ন করবেন তা পরিষ্কার নয়। সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে যে, এর দরুন সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তারা বাঙালিদের ভূমি কেঁড়ে নেবেন। সরকারের বন্দোবস্তীকৃত ভূমি বাতিলের ক্ষমতাও এই কমিশনকে দেখা হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “আগামী ৪ঠা সেপ্টেম্বর সংশোধন হওয়া আইনে কমিশনের প্রথম বৈঠক পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি জনগোষ্ঠীকে তাদের বসতভিটা থেকে বিতাড়নের প্রথম পদক্ষেপ। আমি এ অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক কমিশন বাতিল অথবা এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি ও পাহাড়ি সম্প্রদায় থেকে সমান সংখ্যক নির্বাচিত সদস্য যুক্ত করা; কেউ ক্ষুদ্ধ হলে আদালতে প্রতিকার চাওয়ার বিধান যুক্ত করা এবং সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক বিধানসমূহ সংশোধনের দাবি জানাই।”

ওয়াদুদ ভুঁইয়া আরো বলেন, “এ কমিশনের দরুণ কোন বাঙালি অন্যায়-অবিচারের শিকার হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি বাঙালি রুখে দাঁড়াবে। আমি সরকারকে এ হঠকারী ও বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহবান জানাই।”

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন