বিদ্যুতে আলোকিত দুর্গম থানচি
নিজস্ব প্রতিবেদক,
স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর বিদ্যুতে আলোকিত হল বান্দরবান জেলা শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে দুর্গম থানচি উপজেলা। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় উপজেলা বাসিরা যেমন নাগরিক জীবনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে তেমনি মৌলিক চাহিদা থেকেও পিছিয়ে রয়েছে তারা।
শুধু থানচি উপজেলা নয় চিম্বুক পাহাড়ের প্রত্যন্ত পাহাড়ি পল্লীগুলো আলোকিত হয়ে উঠেছে বিদ্যুতের আলোতে। এতে করে দুর্গম এ উপজেলার সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি আর্থসামাজিক অবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বান্দরবানের ৭টি উপজেলার মধ্যে ৬ উপজেলায় বিদ্যুৎ থাকলেও একমাত্র থানচি উপজেলা ছিল বিদ্যুতহীন। দুর্গমতা ও ব্যয়বহুল হওয়ায় স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও সেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। ফলে অন্যান্য এলাকার চাইতে অনেকাংশেই পিছিয়ে ছিল থানচি উপজেলা। বিদ্যুৎ না থাকায় থানচি উপজেলার পাশাপাশি চিম্বুক পাহাড়ে বসবাসকারী পাহাড়ি পল্লীগুলো ছিল অন্ধকারে। এখন এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। দুর্গম উপজেলা থানচিতে পৌঁছেছে বিদ্যুৎ, আলোকিত হয়ে উঠছে চিম্বুক পাহাড়ের পাহাড়ি পাড়াগুলো।
প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৩/১১ কেভি, ৪ লাইনে রাঙ্গামাটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের কাজ সম্পাদন হয়েছে। ওয়াই জংশন এলাকা থেকে থানচি পর্যন্ত দুটি উপকেন্দ্রসহ বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ৮০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন টানা হয়েছে।
২৬ নভেম্বর প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি চিম্বুকে প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন।
বুধবার (১ মার্চ) সকালে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৩ হাজার প্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। দেরিতে হলেও বিদ্যুত সংযোগ পেয়ে খুশি এলকাবাসী।
থানচি নিবাসী অ্যাডভোকেট উবাথোয়াই বলেন, র্দীঘদিন পর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি সহায়তায় আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। আমরা এখন আর পিছিয়ে থাকবো না। সারা দেশের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবো।
থানচি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাংছার ম্রা জানান, থানচি এখন অনেক এগিয়ে যাবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যটন খাতেও সাফল্য আসবে বিদ্যুতের কারণে।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রনি মারমা বলেন, বিদ্যুতায়নের ফলে থানচি উপজেলার পিছিয়ে পরা সকল জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মান উন্নীতকরণ ও সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানসহ পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে।
থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় থানচির চিত্রকে বিশ্বের দরবারে আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এবারে বিদ্যুতায়নের সাথে সাথে পর্যটন সম্ভাবনাময় এ উপজেলায় কাঙ্খিত শিল্প বিকাশসহ আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে বলেও প্রত্যাশা সকলের।
এ বিষয়ে বান্দরবানের সাংসদ ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর জানান, থানচিতে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছানো এ সরকারের বড় একটি সাফল্য। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর দেশের সবচেয়ে দুর্গম থানচিবাসী বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়া স্বপ্নের মতো। পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সব এলাকায় এখনো বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছেনি যেসব এলাকায় প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুত পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি নতুন করে সোলার প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান করা হবে।