বিজয়ের মাসের প্রথমদিনেই শহীদ মিনারকে পবিত্র করলেন তরুণেরা
চকরিয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের চকরিয়ায় অপবিত্র হয়ে পড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে বিজয়ের মাসের প্রথমদিনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার মধ্য দিয়ে পবিত্র করে তোলা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই শহীদ মিনারটির বেহাল দশা পরিলক্ষিত হয়ে আসছিল। এই অবস্থায় কিছু উদ্যমী তরুণ পৌরশহরের পুরাতন বিমানবন্দরস্থ (বর্তমান সেনাক্যাম্প) শহীদ মিনারটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে নেমে পড়েন গত বৃহস্পতিবার বিকেলে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতে কোন ধরণের গরজ না দেখালেও ঠিকই দেশ মাতৃকার টানে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু উদ্যোমী তরুণ বিজয়ের মাসের প্রথমদিনেই শহীদ মিনারটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার মাধ্যমে পবিত্র করে তোলার ডাক দেয় কয়েকঘন্টা আগে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের এসব তরুণ কেউ ঝাড়ু হাতে, কেউবা মিনারের পাদদেশে পড়ে থাকা নানা ময়লা-আবর্জনা হাতে ধরে পরিষ্কার করতে দেখা যায়। এতে আধ ঘন্টার মধ্যেই ফিরে পায় পবিত্রতা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে অসহায় মানুষের পাশে থাকা স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন ‘স্বাধীন মঞ্চ’ ও ‘পিস ফাইন্ডারের’ পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয় অপবিত্র হয়ে পড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে বিজয়ের মাসের প্রথমদিনেই পবিত্র করে তোলার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে।
পিস ফাইন্ডারের পরিচালক আদনান রামীম ও স্বাধীন মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক আবুল মাছরুর আহমদ বলেন, ‘বিজয়ের মাসেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি অপবিত্র অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ভাল লাগছিল না। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশ মাতৃকার টানে যেসব সূর্য সন্তান নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদেরকে আমরা স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে না পারাটা লজ্জাজনক বিষয়। তাই অপবিত্র হয়ে থাকা শহীদ মিনারকে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার মাধ্যমে পবিত্র করে তুলেছি।’ তারা আরো বলেন, ‘এখন থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখভাল করুক বা নাই করুক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আমাদের মতো কিছু উদ্যোমী তরুণের সার্বক্ষণিক দৃষ্টি থাকবে এই শহীদ মিনারের দিকে। আমরা চেষ্টা করবো সারাবছরই এই শহীদ মিনারকে পবিত্র করে রাখতে।’
স্বাধীন মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক আবুল মাছরুর বলেন, ‘বায়ান্নর ভাষা, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা তথা পৃথিবী পৃষ্ঠে বাংলাদেশ নামক ব-দ্বীপের স্বাক্ষী হয়ে আছে আমাদের শহীদ মিনার। কিন্তু এই শহীদ মিনারের অমর্যাদা দেখে মর্মাহত হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শহীদ মিনারটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কর্মসূচীর আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং এ ধরণের কর্মসূচী ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’
উল্লেখ্য, চকরিয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ সার্বিক দেখভাল করার গুরুদায়িত্ব রয়েছে পৌরসভার। তাছাড়া শহীদ মিনারটি পৌরসভা কার্যালয়ের একেবারে সন্নিকটে। দিনের বেলায় যেমন-তেমন, রাতের বেলায় পাল্টে যায় এই শহীদ মিনারের দৃশ্য। সেখানে রাতভর বসে মাদকসেবীদের আসরসহ আরও কতকিছু। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্টরা এই শহীদ মিনারকে যথাযথভাবে দেখভাল বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন বলে অনেকেই মনে করছেন।
এ ব্যাপারে চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটিকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন এবং সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দেওয়া হয় অনেক আগে থেকেই। এখন থেকেই শহীদ মিনারের পাদদেশে কোন ময়লা-আবর্জনা ফেলতে না পারে বা সেখানে কোন কিছু শুকাতে দিতে না পারে সেজন্য স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে পৌরসভার পক্ষ থেকে।’