বাড়তি ঈদ আনন্দ পেতে ঘুরে যেতে পারেন দীঘিনালায়: রয়েছে তৈদু ও থাংঝাং ঝর্ণা

toidu-jhorna-news-pic-1

দিদারুল আলম রাফি, দীঘিনালা প্রতিনিধি :

খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় সবুজ পাহাড় আর বুনো জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত নয়নাভিরাম ঝর্না দুটির নাম তৈদুছড়া ঝর্না। ত্রিপুরা ভাষায় “তৈদু” মানে হল “পানির দরজা” আর ছড়া মানে ঝর্না। অসাধারণ সৌন্দর্য আর প্রাকৃতিক বৈচিত্রতা এই ঝর্নাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। খাগড়াছড়িতে যে কয়টি দর্শনীয় স্থান রয়েছে তৈদুছড়া তাদের মধ্যে অন্যতম।

এখানে পাহাড় আর সবুজ বুনো জঙ্গেলর মাঝে আঁকা বাঁকা পাহাড়ের ভাঁজ দিয়ে বয়ে চলে ঝর্নার জল। শীতল স্বচ্ছ টলমলে জলের কলকল করে ছুটে চলার শব্দে মুখিরত চারিপাশ। ৩০০ ফুট উচু পাহাড় হতে গড়িয়ে পড়া পানি এসে পরছে পাথুরে ভূমিতে। অন্য সকল ঝর্নার মত এর পানি সরাসরি উপর হতে নিচে পড়ছে না।
পাহাড়ের গায়ে সিড়ির মত তৈরি হওয়া পাথুরে ধাপ গুলো অতিক্রম করে নিচে পড়ছে।

চাপ্পাপাড়া, পোমাংপাড়া কিংবা জামতলী  হতে দুর্গম পথ, অনেক গুলো ঝিরি, উচু নিচু পাহাড়, কোথাও হাটু সমান আবার কোথাও বুক সমান পানি আর বুনো জঙ্গল পাড়ি দিয়ে অবশেষে প্রায় ৩ ঘন্টা হাঁটার পর আপনি পৌছবেন ১ম ঝর্নাটিতে। এটি প্রায় ৬০ ফুট উচু। ঝর্নামুখ হতে পানি পাহাড়ের গাঁয়ে পরে তা পাহাড় বেয়ে নিচে এসে ছোট একটি হ্রদের মিলিত হয়েছে। অসাধারন সেই দৃশ্য।

প্রথম ঝর্ণার ডানপাশ দিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠলে খুব কাছাকাছি পেয়ে যাবেন ২য় ঝর্নাটি। এখানে প্রায় ৮০-৮৫ ডিগ্রী এঙ্গেলের ঢাল বেয়ে বানরের মত প্রায় ১০০ ফুট উপরে উঠতে হবে। উপরে উঠলে প্রথমেই চোখে পড়বে ঝর্না মুখ যেখান   হতে ১ম ঝর্নার পানি পড়ছে। ২য় ঝর্না হতে ঝিরি পথে পানি আসছে এখানে। ঝিরি পথ ধরে প্রায় ঘন্টা খানেক হাটলে পরে পৌছানো যায় ২য় ঝর্নাটিতে। এই চলার পথটি যেমন কষ্টকর তেমনি রোমাঞ্চকর আর আহামরি সুন্দর। উপর থেকে প্রচন্ড বেগে পানি নেমে আসতেছে। এই বেগ ঠেলে পানি বরাবরই হাঁটতে হয়। ডানে বায়ে যেখানে পানির স্রোত কম সেখানে শ্যাওলা জমেছে। একটুতেই পা পিছলে যায়। মাঝে মাঝে এখানে পানির স্রোত খুব বেশী যে ধাক্কা দিয়ে নিচে নিয়ে যেতে চায়।

তাই এখানে পা টিপে টিপে অনেক সাবধানে হাঁটতে হবে। একবার পিছলে গেলে কয়েকশ হাত দূরে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। এখান হতে আরো উপরে উঠতে হবে। চলার পথে পারি দিতে হবে বড় বড় পাথর আর কোমর সমান পানি। অতপর পেয়ে যাবেন দ্বিতীয় তৈদু ঝর্ণা।

অপূর্ব অসাধারন আর নয়নাভিরাম সে ঝর্না। এটি এতই দৃষ্টিনন্দন আর ব্যতিক্রম কারো আর তড় সইবে না। ঝর্নার নিচে ঝাপিয়ে পরতে মন চাইবে। ঝর্ণাটি প্রায় ৮০ ফুট উচু। ঝর্নার পানি এসে সরাসরি যেখানে পড়ছে সেখানে সিড়ির মত অনেকগুলো পাথুরে ধাপ রয়েছে। ধাপগুলো বেয়ে পানি নিচে গড়িয়ে পড়ছে। ধাপগুলোতে দাড়িয়ে অনায়েসেই গোসলের কাজটি সেরে নেয়া যায়। দীর্ঘ ক্লান্তিকর হাটার কষ্ট মুহুর্তেই ধুয়ে যাবে ঝর্নার জলে। ঝর্নার জলের শীতল পরশ আপনাকে ক্ষনিকের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেবে আবার কতটা পথ আবার হাটতে হবে ফেরার জন্য।

10No.. Jhorna Pic..
এছাড়া দীঘিনালা উপজেলা ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সীমান্তে রয়েছে প্রাকৃতিক শোভা মন্ডিত হাজাছড়া ১০ নম্বর ঝরনা বা থাংঝাং ঝরনা। স্থানীয়দের দেয়া নাম হল চিত জুরানি থাংঝাং ঝর্না (মন প্রশান্তি ঝর্না)। প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমন প্রেমিক বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে এখানে প্রশান্তি ফেলতে আসে।

অনেক উচু থেকে পানি পড়ছে, এই অপরূপ সুন্দর প্রাকৃতিক র্ঝনা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবেনা। র্ঝনাটির অতি নিকটে পুলিশ ক্যাম্প থাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। পাকা রাস্তার কাছে হওয়ায় বেশি হাঁটতে হয়না। র্ঝনাটি দেখতে খুবই সুন্দর, মনোরম পরিবেশ, পাহাড় ঘেরা সৌন্দর্যে ভরপুর অনেক উপর থেকে পানি পড়ছে যেন রিম-ঝিম করে অপরুপ প্রাকৃতিক লীলা।

তৈদু ঝরনায় কিভাবে যাবেন ভাবছেন?

→ঢাকা থেকে বাসে করে খাগড়াছড়ি। কলাবাগান ও কমলাপুর হতে শান্তি পরিবহন, সৌদিয়া, এস.আলম, শ্যামলী বা ষ্টার লাইন পরিবহন গুলো প্রতিদিনই ছেড়ে আসে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে।                                  → খাগড়াছড়ি হতে বাস, সিএনজি অথবা মাহিন্দ্র গাড়ি  করে আসতে হবে দীঘিনালায়।                            → চাপ্পাপাড়া, পোমাংপাড়া অথবা জামতলি  হতে পায়ে হেঁটে তৈদুছড়া। ৩ ঘন্টা হাঁটার পর পৌছবেন ১ম ঝর্নায় এবং আরো ১ ঘন্টা পাহাড় ট্রেকিং ও ঝিরি পাড়ি দিয়ে পৌছতে হবে ২য় ঝর্নাতে।                        →তৈদু ঝরনা ভ্রমন শেষে সিএনজি, মোটরসাইকেল কিংবা জীপগাড়ি নিয়ে অনায়াসে ১০নং ঝরনা বা থাংঝাং ঝরনায় যেতে পারেন।

তৈদু ঝরনায় যাওয়ার কিছু পরামর্শ :

ক) দীঘিনালা হতে তৈদুছড়া যাবার পথে যথেষ্ট পরিমান খাদ্য ও পানীয় নিতে হবে।
খ) ব্যাকপ্যাক হালকা নিতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া না নেয়াই  উত্তম। সাথে কিছু শুকনা কাপড় রাখতে পারেন।
গ) মোবাইল ও ক্যামেরার জন্য জলনিরোধ ব্যাগ নিতে হব স্যালাইন, গ্লুকোজ নিয়ে যাবেন।
ঘ) শর্ট / থ্রি কোয়র্টার প্যান্ট ও ভাল গ্রিপওয়ালা প্লাষ্টিকের স্যান্ডেল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন