ফের উত্তপ্ত পার্বত্য অঞ্চল: আরো এক যুবকের লাশ উদ্ধার, অস্ত্রসহ পাঁচ পাহাড়ি গ্রেফতার

আবুল খায়ের:

লংগদু উপজেলায় যুবলীগ নেতা নয়ন হত্যাকাণ্ডের পর পাহাড়ি গ্রামে অগ্নিসংযোগের এক সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পরও স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি পরিস্থিতি। পাহাড়ি বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় রাঙ্গামাটির লংগদু মাইনী খাল থেকে অজ্ঞাতনামা এক বাঙালি যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই যুবকের নাম রবিউল। তিনি মোটরবাইকের চালক হতে পারেন। নিহত যুবকের দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের গুম, খুন ও চাঁদাবাজির কারণে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় অধিবাসীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
লামাসহ বান্দরবান জেলার বিভিন্ন উপজেলার গহিন অরণ্যে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কয়েকবার বন্দুকযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। বর্তমানে পাহাড়ি উপজেলাগুলোর বাঙালি পল্লীগুলোতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় গত বুধবার ইউপিডিএফের কর্মীরা প্রকাশ্যে ২৪টি গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়েও মহড়া দিচ্ছে ও চাঁদাবাজি করে চলেছে। ইতোমধ্যে সংঘটিত এসব ঘটনার পর নতুন করে পার্বত্য অঞ্চলের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই তিনটি জেলার পাহাড়ি ও বাঙালিরা বলছে, পার্বত্য শান্তিচুক্তি হয়েছে শান্তিতে বসবাসের জন্য। আমরা অশান্তি চাই না।
পাহাড়ের তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপ শান্তির পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টির জন্য দায়ী। তাদেরকে ব্যবহার করছে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল। এক পক্ষকে অশান্তিতে রেখে পাহাড়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আশা করা যায় না। তথাকথিত একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী ঢাকায় বসে পাহাড়ের প্রকৃত ঘটনা না জেনে এক পক্ষের প্রতি সহানুভূতি দেখায়। পাহাড়ে অশান্তি জিইয়ে রাখার আরেকটি ষড়যন্ত্র এটি।
পাহাড়ের তিনটি সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতারা পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তার করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করে। আর বাংলাদেশবিরোধী প্রভু রাষ্ট্রদের খুশি করে। এটাই হলো তাদের পাহাড়ি সংগ্রাম। পাহাড়ি বাঙালি ভাই ভাই। আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই। এটা বাংলাদেশের একটি ভূখণ্ড। এখানে সকল ধর্মের, গোষ্ঠীর মানুষ মিলেমিশে থাকব। এটাই পাহাড়ের বাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের প্রত্যাশা। নিরাপত্তার স্বার্থে অনেকেই নিজেদের নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এসব মন্তব্য করেছেন।
আতঙ্কের মধ্য থেকে কিছু কিছু পরিবার তিনটিলা বৌদ্ধ বিহার, মানিকজোড়ছড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রামের আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি এবং কিছু পাহাড়ে অবস্থান করছে। ঘটনার পর রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের তাদের গ্রামে ফিরে আসতে চাইলে একটি পাহাড়ি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী বাধা দিচ্ছে।
অপরদিকে নিহত যুবলীগ নেতা ও মোটরসাইকেল চালক নয়নের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বামী হারিয়ে স্ত্রী ও পিতা হারিয়ে সন্তানরা এখন নিঃস্ব হয়ে প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তাহীনতায় এখনো পর্যন্ত মামলা দায়ের করতে পারেনি নয়নের পরিবার। অন্যদিকে মামলার কারণে আশপাশের এলাকায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে নয়নের পরিবার এমন দাবি করেন নয়নের স্ত্রী ও সন্তানরা।
পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, নয়ন হত্যাকাণ্ডের যেমন বিচার হবে তেমনি পাহাড়িদের বাড়িঘরে যারা আগুন দিয়েছে তাদেরও বিচার হবে। ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণ না নেওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, ত্রাণ কেন নেবেন না ত্রাণ অবশ্যই নেবেন। ত্রাণ নিয়ে খেয়ে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি, ত্রাণ গ্রহণ করুন। সরকার আপনাদের পাশে আছে, সব সময় থাকবে।
এদিকে লংগদুর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় স্থানীয় স্কুলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি চিকিত্সা ক্যাম্প, তিনটিলা বৌদ্ধ বিহারের সম্মুখে স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য ক্যাম্প এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
লামা (বান্দরবান) সংবাদদাতা মুহাম্মদ কামালুদ্দিন জানান, বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদমের দুর্গম পোয়ামুহুরী এলাকা থেকে দুটি দেশি বন্দুক ও ছয়টি চাকুসহ ৫ পাহাড়ি সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে।
আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম জানিয়েছেন, পূর্বের একটি ডাকাতির ঘটনায় ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে স্থানীয় ম্রো জনসাধারণ অস্ত্র ও চাকুসহ ৫ পাহাড়ি সন্ত্রাসীকে আটক করে পোয়ামুহুরী ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করেছে।
আটককৃতরা হলো— থানখা ম্রো (২১), মাংইল ম্র্রো (২২), লেংপ্রু ম্রো (২০), বিজয় ম্রো (২০), আওবই ম্রো (২৪)। আলীকদম থানার অফিসার ইনচার্জ জানিয়েছেন, থানায় আনার পর বিস্তারিত বলা যাবে। সেনাবাহিনীর বান্দরবান রিজিয়নের ব্রিগেড মেজর তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, আটককৃতদের বিষয়ে আরো খোঁজখবর নিয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি এ.কে.এম মকছুদ আহমেদ জানান, রাঙ্গামাটির লংগদু মাইনী খাল থেকে উদ্ধারকৃত অজ্ঞাতনামা ৪০ বছর বয়সী লাশটি বাঙালি সম্প্র্রদায়ের এবং লাশের ?দুটি চোখই উপড়ানো অবস্থায় ছিল বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এছাড়া লাশের গায়ে একটি শার্ট ও পরনে জিন্সের প্যান্ট পরানো অবস্থায় ছিল। লাশের অবস্থা দেখে স্থানীয়দের ধারণা লাশটি কয়েকদিন আগে থেকেই পানিতে ভাসছিল এবং শরীর ফুলে গেছে। চেহারার একটি অংশ কিছুটা পচে গেছে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক
Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন