পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

20170426_152735
পেকুয়া প্রতিনিধি :
পেকুয়া উপজেলার উপকূলীয় মগনামা ইউনিয়নের চেপ্টাখালী নাশি থেকে মগনামা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ১.২৫ কিলোমিটার অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ফলে উপকূলবাসীকে রক্ষার সরকারের এই বৃহৎ উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা।

একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের অনিয়মের কারণে টেকসই বেড়িবাঁধ বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের প্রায় ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষ। পেকুয়া উপজেলা ও মগনামা ইউনিয়ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতার সহায়তায় এই অনিময়, দুর্নীতি চলে আসছে। তাই এর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেনা স্থানীয়রা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পেকুয়া উপজেলার ১২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে অধিক ক্ষতিগ্রস্থ ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত মগনামা, উজানটিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়নের ২০ কিলোমিটার অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়ায় কার্যাদেশ দেয়া হয়। এ জন্য বরাদ্ধ করা হয়েছে একশত ৯০ কোটি টাকা। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের অবহেলা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ওই ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে সংস্কার কাজ চলছে মাত্র ৭ কিলোমিটার অংশে। বাকি ১৩ কিলোমিটার এখনো রয়েছে অরক্ষিত। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীলরা বলছেন, আগামী বছরের বর্ষা মৌসুমের আগেই শেষ হবে বেড়িবাঁধের বাকি অংশের কাজ।

শনিবার ৬ মে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মগনামা ইউনিয়নের চেপ্টাখালী নাশি থেকে কাকপাড়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২.৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অংশটিতে দুইটি স্কেভেটর দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ করা হচ্ছে। বেড়িবাঁধের চেপ্টাখালী নাশি থেকে মগনামা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ১.২৫ কিলোমিটার অংশটিতে লিভার সাইটে বাঁধের বাইরের অংশ ব্লক বসানোর কাজ চলছে। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ বেড়িবাঁধের চেপ্টাখালী নাশি থেকে মগনামা লঞ্চঘাট পর্যন্ত অংশটি নির্মাণ কাজ ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে বেশ তড়িঘড়ি করে শেষ করা হচ্ছে।

স্থানীয় আবু তাহের ও মো. ইসমাঈল বলেন, চেপ্টাখালী নাশি থেকে কাকপাড়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২.৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অংশটি বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর সাবমেরিন ষ্টেশনের জন্য নির্ধারিত এলাকায় হওয়ায় এর নির্মাণ কাজে পরোক্ষ নজরদারী রাখছেন নৌবাহিনীর সংশ্লিষ্টরা। তাই এ অংশে অনিয়ম খুব একটা হচ্ছে না বলেও স্থানীয়দের অভিমত। যে পরিমান টেকসই কাজ সেখানে হচ্ছে তার অর্ধেক টেকসই কাজ হচ্ছে না তার উল্টো পাশে চলমান অপর একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের কাজ।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বেশ কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধি বলেন, চেপ্টাখালী নাশি থেকে মগনামা লঞ্চঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন সংস্কার কাজের কার্যাদেশপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার আতিকুল ইসলামের মালিকানাধীন উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজের সিডিউল অনুযায়ী করা হয়নি মাটি ভরাট ও মাটি কম্পেক্ট। যার কারণে ইতিমধ্যে তাদের ব্যবহৃত ভারী যানবাহন চলাচলে ধেবে যেতে শুরু করে মাটির কাজ শেষ করে ব্লক দেয়ার পর্যায়ে থাকা বেড়িবাঁধটি। তারা চ্যালেঞ্জ করে বলেন, চেপ্টাখালী নাশি থেকে কাকপাড়া পয়েন্ট অংশে যেসব মাটি কম্পেক্টকারী যন্ত্র (স্কেভেটর) কাজ করছে তা ওঠালে ধ্বসে যাবে ওই বেড়িবাঁধ। এছাড়া সিডিউল অনুসারে রাখা হয়নি লিভার সাইটের দৈর্ঘ্য, ডাউন সাইটের দৈর্ঘ্য, বেড়িবাঁধের টপের প্রস্থ। তারা আরো বলেন, তড়িঘড়ি করে যেনতেন কাজ করে সরকারী অর্থ লোপাটের চেষ্টায় মেতেছে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্টান। এব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এব্যাপারে চেপ্টাখালী নাশি থেকে মগনামা লঞ্চঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী আতিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়দের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। কিছু কুচক্রী মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এখনো আমরা কাজ শেষ করিনি। তার আগে কাজ নিয়ে অভিযোগ তোলার কোন সুযোগ নেই। আমরা কাজ শেষ করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবশ্যই পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে সিডিউল অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও (পেকুয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত) গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমার জানা মতে বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজে এখন পর্যন্ত কোন অনিয়ম হয়নি। এতে আমাদের নজরদারী রয়েছে। ঠিকাদার কাজ শেষ করলে বুঝা যাবে অনিয়ম হয়েছে কিনা।

মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম বলেন, বেড়িবাঁধের চেপ্টাখালী নাশি থেকে মগনামা লঞ্চঘাট পর্যন্ত নির্মাণ কাজে চরম দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণের নামে চোর ডাকাতরা সরকারি বরাদ্ধ লুটপাট করছে। এরচেয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করলেই ভালো ছিল। অন্তত সরকারি অর্থ রক্ষা হতো।

এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু বলেন, উপকূলবাসীর রক্ষা কবছ হলো বেড়িবাঁধ। তাই এ বেড়িবাঁধ যথেষ্ট টেকসইভাবে নির্মাণ করা জরুরী। মগনামা ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ নির্মাণে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৃঢ় নজরদারীর দাবী জানাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন