পেকুয়ায় গোপনে স্কুল কমিটি গঠন নিয়ে প্রধান শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের মধ্যে দ্বন্ধ চরমে

fec-image

অনিয়ম

পেকুয়া প্রতিনিধি:

পেকুয়ায় বারবাকিয়া ওয়ারেচীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গোপনে পরিচালনা (এসএমসি) কমিটি দেয়া প্রচেষ্টাকে ঘিরে প্রধান শিক্ষিকার সাথে এসএমসির বর্তমান কমিটি ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারন করেছে। এর জের ধরে যেকোন মুর্হুতে অভিভাবকদের অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়তে পারে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে।

জানা যায়, পরিচালনা কমিটি এক পেশে গঠিত হলে এসএমসি কমিটির বর্তমান কর্তা ও অভিভাবকরা এর বিরুদ্ধে ব্যাপক সোচ্চার হয়ে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার পথে হাঁটছেন। এদিকে শিলখালী ঐতিহ্যবাহি বারবাকিয়া ওয়ারেচীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা বুলবুল জান্নাত আরা বেগম অপর সহকারি শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে স্নায়ু বিরোধ দেখা দিয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে প্রধান শিক্ষিকা ও অন্য শিক্ষকরা সম্পর্কের দু’মেরুতে অবস্থান করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিরোধ প্রকাশ্যে রুপ নেওয়ায় বিদ্যালয়ের  পড়ালেখার মান অনেকটা নিচের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে অনেক অভিভাবকরা তাদের ছেলে মেয়েদের ওই বিদ্যালয় থেকে অন্যত্রে সরিয়ে নিয়েছে।

শিলখালী ইউনিয়নের লোকজন ও অভিভাবকরা জানায়, প্রধান শিক্ষিকা বুলবুল জান্নাত আরা বেগম বিদ্যালয়ে স্থলাভিশক্ত হওয়ার পর থেকে এ বিদ্যালয়ের ভাবমুর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। তার স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহারসহ নানাবিধ অসঙ্গতি প্রেক্ষিতে শিক্ষকরা তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এরই মধ্যে বারবাকিয়া ওয়ারেচীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গঠিত হচ্ছে স্কুল পরিচালনা কমিটি। ক্যাটাগরিতে শিক্ষানুরাগী, দাতা সদস্য, শিক্ষক প্রতিনিধি, বিদ্যুৎসাহী, অভিভাবক সদস্য নিযুক্তির জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি নির্বাচনী তপশীল প্রকাশ করেছে। কিন্তু সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচন সম্পর্কে জনসাধরন নিশ্চিত হতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নিয়ম রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রধান শিক্ষিকা নোটিশ প্রকাশ না করে গোপনে কয়েকজন তার অনুগত ব্যক্তিকে ফরম সরবরাহ দিয়েছেন। এতে করে অন্য প্রতিযোগিরা ক্ষেপেছেন প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানায়, প্রধান শিক্ষিকা স্বৈরাচারি মনোভাব পোষনে স্কুল পরিচালনা করছে। আমাদের সাথে প্রতিনিয়ত দুর্ব্যবহার করছে। তার কারনে অনেক শিক্ষক অন্যত্রে বদলি হতে আবেদন করেছি। তার আচার-আচরনে অভিভাবকরাও অতিষ্ট হয়েছে। প্রায় সময় বিভিন্ন লোক দিয়ে মুঠোফোনে আমাদের হুমকি দেয়। আমরা কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছিনা।

জুবাইর, শামসু, ছরওয়ার, রাহেলা বেগম, জিন্নাত আরা বেগম, মমতাজ বেগম, কামাল হোসেনসহ আরও অনেক অভিভাবক জানায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান পতন হচ্ছে। এসবের জন্য প্রধান শিক্ষিকাই দায়ী। আমরা তাকে অপসারন চাই। অভিভাবকদের সাথেও প্রায় সময় দুর্ব্যবহার করেন। তার কারনে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ছেড়েছেন। আমরা এর উত্তরন চাই। অন্যতায় বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে তার অপসারনের জন্য কর্মসুচিতে এগিয়ে যাব। প্রয়োজনে তালা ঝুলিয়ে দেব বিদ্যালয়ে। ইউপি সদস্য শাহাব উদ্দিন জানায় প্রধান শিক্ষিকার অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইতিপুর্বে সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তার স্বেচ্ছাচারিতা ও একঘেঁয়েমিতার কারনে অনেক শিক্ষক এ স্কুল থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এটি শিক্ষার জন্য অধঃপতন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মৌ. এনামুল হক, সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সদস্য সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তাক আহমদ জানায়, আমরা এসবের সমাধান করতে গিয়ে উল্টো প্রধান শিক্ষিকার হাতে হেনাস্তা হয়েছি।

প্রধান শিক্ষিকা বুলবুল জান্নাত আরা বেগম জানায় এসব আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। আগেও একই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল। একজন প্রধান শিক্ষক কেঁদে এ স্কুল থেকে বিদায় নিয়েছে। আসলে তারা আমার কারনে স্কুল ফাঁকি দিতে পারছেনা। তারা সবাই এক হয়ে আমাকে এখান থেকে সরানোর চেষ্টা করছে। সম্পূর্ন নিয়মতান্ত্রিকভাবে এসএমসি কমিটির নির্বাচনের তপশীল প্রকাশ করা হয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান মুরাদ চৌধুরী জানায়, এখানে গোপনের কোন কিছু নেই। পেকুয়া উপজেলার সবক’টি বিদ্যালয়ে একই তারিখে এসএমসি কমিটি গঠনের জন্য তপশীল ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের জন্য আলাদা সিডিউল হয়নি। বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রধান শিক্ষিকাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন