পেকুয়ায় একশত গজের মধ্যে দুইটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়: বিষয়টি জানে না শিক্ষা কর্মকর্তা

পেকুয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নে একশত গজের মধ্যে দুইটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওই স্থানে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকা শর্তেও জাল জালিয়াতি ও তথ্য গোপন রেখে একটি গণপাঠশালাকে সরকারী করণের প্রস্তাবে খোদ শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে এলাকার সচেতন মহল।

জানা যায়, পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের সোনালী বাজারস্থ গণপাঠশালার আসল তথ্য গোপন রেখে ভূঁয়া তথ্য উপস্থাপন করে সরকারী করণের জন্য প্রস্তাবনা প্রেরণ করে বর্তমান ও অতীত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাগণ। বিষয়টি এলাকায় জানা জানি হলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ফলে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিদ্যালয়-১ অধিশাখা এর স্মারক নং ৩৮.০০৭.০১৫.০০০.০৬.০১.২০১৪-২০৩ এর অনুকুলে প্রাথমিক বিদ্যালয় অধিগ্রহন আইন ১৯৭৪ এর ৩(১) ধারা অনুযায়ী অধিগ্রহনকৃত বিদ্যালয়গুলোর সরবরাহকৃত তথ্য কোন প্রকার সংশোধনী থাকলে কিংবা সংযুক্ত তালিকা আকারে প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উপসচিব গোপন চন্দ দাশ বরাবরে অভিযোগ প্রেরণের জন্য বিশেষ বিজ্ঞপ্তি আকারে নৌটিশ জারি করে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে।

পেকুয়া উপজেলার সোনালী বাজার গণপাঠশালা বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২য় ধাপে সরকারী করণের তালিকায় রয়েছে। উক্ত বিদ্যালয়টি সরকারী করণের ক্ষেত্রে শুরু থেকে অদ্যবধি তথ্য প্রেরণে নানা অনিয়ম ও দূণীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোবারক আকতার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উক্ত বিদ্যালয়টি সরকারী  করণের সুপারিশ প্রেরণ করেন। উক্ত বিদ্যালয়ে ৩০৭ জন ছাত্র ছাত্রী হিসাবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়টিতে প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে এই পর্যন্ত ২০০ এর বেশী ছাত্র ছাত্রী ছিল না। বর্তমানে এ বিদ্যালয়টি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তারপরও ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১০০ জনেরই কম। বিদ্যালয় সরকারী করণের ক্ষেত্রে নিকটবর্তী  সরকারী বিদ্যালয়ের সাথে দূরত্ব ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

উক্ত বিদ্যালয়ের তিনদিকে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। উত্তর পাশে সদ্য জাতীয় করণকৃত মটকাভাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাত্র ১০০ গজের মধ্যে। উক্ত বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৯০ জন। পূর্বপার্শ্বে জালিয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব ২০০ গজের মধ্যে। ৯৫ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। দক্ষিণ পূর্বপার্শ্বে ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত সুতাচুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৮৮ জন। দূরত্ব দেড় কিলোমিটারের মধ্যে। দক্ষিণ পার্শ্বে সোনালী বাজার এমইউ কিন্ডার গার্ডেন এর দূরত্ব ১৫০ গজের মধ্যে। ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ১৪৫ জনের মতো। এখানে নতুন কোন বিদ্যালয় সরকারী করণের প্রয়োজন না থাকলেও কল্পিতভাবে ছাত্রছাত্রী দেখিয়ে উক্ত বিদ্যালয়কে সরকারী করণের জন্য শিক্ষা অফিসারে মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

গত চলতি বছরের ৩০ জুন বিদ্যালয় সরকারী করণের প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত বিদ্যালয় সমূহের সংশোধিত তথ্য উপস্থাপনের জন্য ৩০ জুলাই সর্বশেষ তারিখ নির্ধারিত ছিল। দু:খের বিষয় বর্তমান শিক্ষা অফিসার হাসান মুরাদ চৌ: তৎকালিন শিক্ষা কর্মকর্তার দাখিলকৃত মিথ্যা তথ্যে কোন প্রকার সংশোধন না এনে পেকুয়ার বেশ কয়েকজন শিক্ষক নেতার পরামর্শে সত্যকে আঁড়াল করে দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সরকারী করণের জন্য প্রেরিত তথ্য সঠিক আছে বলিয়া লিখিত রির্পোট প্রেরণ করেন। উক্ত বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষকদের মধ্যে ২ জন শিক্ষক কর্মস্থলে রয়েছেন। আর ১ জন সোলতানা নার্গিস গত ১ বছর ৬ মাস ধরে পেকুয়ার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পুল শিক্ষক হিসাবে নিয়োজিত থেকে সরকারী বেতন ভাতা হিসাবে গ্রহণ করেন। কিন্তু ওনাকে ঐ বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষিকা হিসাবে দেখানো হচ্ছে।

ইতিমধ্যে তিনি পেকুয়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষক হিসাবে আছেন। আর বাকী ২ জন পারিবারিক বিভিন্ন কাজে এবং সাংসারিক কাজে নিয়ে দূরদূরান্তে রয়েছেন। আরেক জন শিক্ষক কাউছার জান্নাত তানিয়া ২০১৩ সালে চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নে বিয়ে হয়। সে দীর্ঘদিন ধরে শশুরবাড়ীতে অবস্থান করেন। বিদ্যালয় সরকারী করণের খবর পেয়ে লাখ টাকার মিশনে নামে। ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রেহেনা বেগমসহ অপরাপর শিক্ষকবৃন্দ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে মোটাঅংকের বিনিময়ে ম্যানেজ করে নানা ভুয়া তথ্য বিভ্রাট জালয়াতির আশ্রয় নিয়ে সরকারী অর্থ তছরুপের পাঁয়তারা শুরু করেছে। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যালয়টি যে জায়গায় অবস্থানে রয়েছে সে জায়গাটি সরকারের নামে দানকৃত নহে। কিন্তু বিদ্যালয়ের নামে যে জায়গাটি দান করা হয়েছে সে জায়গাই অদ্যাবধি কোন স্থাপনা হয়নি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ পেকুয়া কোন দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, শিক্ষক নেতা, জনপ্রতিনিধি সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অর্থ ও ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে ওই বিদ্যালয় সরকারী করণের মাধ্যমে শিক্ষকদের বেতন ভাতা এবং অবেধভাবে ঘুষ বাণিজ্য করার জন্য চেষ্টা শুরু করেছে। ওই বিদ্যালয়ের জমিদাতার মেয়েকে ওই বিদ্যালয়ে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেহেনা বেগম অর্থের লোভে তার একান্ত আত্বীয় কাউচার জন্নাত তানিয়াকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন এবং চাকুরী সরকারী করণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে যে স্থানে বিদ্যালয়টি রয়েছে সেই জায়গাটি গণস্বাস্থ্য এনজিও কে দিয়েছিল। স্থানীয় জাহেদুল হক জানিয়েছেন ঐ বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫০ জনের চেয়ে বেশি নেই। কারণ এখানে উপবৃত্তি দেওয়া হয়না বলে এ বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়না। পার্শ্ববর্তী সরকারী স্কুলে উপবৃত্তি পাওয়ার আশায় ভর্তি হয়ে থাকে।

স্থানীয় মটকাভাংগা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফা বেগম জানিয়েছেন বর্তমানে ঐ বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫০ জনের কম। আমার বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ের দূরত্ব দুই শত মিটার। একটি সরকারী স্কুলের পাশ্বে আরেকটি সরকারী বিদ্যালয় হওয়ায় শিক্ষা আইনের পরিপন্থি । শিক্ষা আইনে উল্লেখ আছে একটি সরকারী স্কুলের দুরত্ব দু কিলোমিটারের মধ্যে আরেকটি সরকারী স্কুল হতে পারে। কিন্তু এটির ব্যতিক্রম। যথসব ভূয়া তথ্য দিয়ে এসব কার্যক্রম হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আমি মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছিলাম।

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক রেহেনা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান বর্তমানে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২ শতের অধিক। তিনি আরো জানান তার বিদ্যালয়ে বর্তমান ৩ জন শিক্ষক রয়েছে। বিদ্যালয়টির বর্তমান জায়গাটির কার বা দানকৃত কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অনেকক্ষণ বলতে চাননি পরে জানান বিদ্যালয়টির জায়গাটি অন্য জনের নামে নামজারী খতিয়ান থাকায় স্থানীয় শাহ আলম মেম্বার বিদ্যালয়ের নামে উজানটিয়ার ছেরাংঘোনা এলাকার ৩৩ শতক জায়গা দান করেন। বর্তমানে যে স্থানে বিদ্যালয়টি রয়েছে সেই ভবনটি চরম ঝুকিপূর্ণ। শিক্ষকদের কাছ থেকে চাকুরীর নামে টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান মুরাদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান বিষয়টি আমি জানি না। আগের শিক্ষা অফিসার এ বিষয়টি নিয়ে কি করেছে তা আমি জানি না এবং কি ভাবে হচ্ছে তা আমি জেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের কাছ থেকে জেনে নিব। এখনো মন্ত্রানালয় থেকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকতা বরাবর সরকারী করণের তথ্য সংশোধনের ব্যাপারে কোন বিজ্ঞপ্তি প্রেরণ করেনি। আরো জানতে চাইলে তিনি জানান বিদ্যালয়টি সরকারী করণ হয়ে গেলে শিক্ষকরা বেতনভাতাসহ নানান সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন