পার্বত্য চট্টগ্রামে মারমা নেতৃত্ব শুন্য করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে- বললেন খাগড়াছড়ির মারমা নেতৃবৃন্দ

মারমা কিলিং

মুজিবুর রহমান ভুইয়া : 

চিংসা মং চৌধুরী হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে মারমা নেতৃত্ব শুন্য করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলে পার্বত্যনিউজের কাছে অভিমত ব্যাক্ত করেন খাগড়াছড়ির মারমা নেতৃবৃন্দ। ১৯৮০ সাল থেকে এ ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সাফাই মারমা থেকে শুরু করে মংসাজাই চৌধুরী হয়ে তাদের সন্ত্রাসের সর্বশেষ বলি হতে হয়েছে চিংসা মং চৌধুরী বলে অভিমত তাদের।

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় উপজাতীয় স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক মানিকছড়ি কলেজিয়েট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামলীগের সহ-সভাপতি চিংসা মং চৌধুরী’র নির্মম হত্যার পর সন্ত্রাসবিরোধী মেরুতে অবস্থান নিয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন। ইউপিডিএফ-জেএসএস-জেএসএস‘র (সংস্কার) সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মারমা সম্প্রদায়। এসকল হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তি প্রদানসহ ৫দফা দাবীতে বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে খাগড়াছড়ি জেলার মারমা সম্প্রদায়ের সামাজিক সংগঠন মারমা উন্নয়ন সংসদ।

মানিকছড়ির জনপ্রিয় মারমা নেতা চিংসা মং চৌধুরী হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে দলমতের উর্ধ্বে উঠে এক কতারে সামিল হয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতারা। সম্প্রদায় ভেদে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মারমা জনগোষ্ঠির মধ্যে ঐক্য তৈরীর প্রক্রিয়াও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে। তারা এখন স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়।

মানিকছড়ির স্কুল শিক্ষক চিংসা মং চৌধুরী হত্যাকান্ডে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে মারমা সম্প্রদায়ের শীর্ষনেতা ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুইথি কার্বারী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে মারমা জনগোষ্ঠিকে নেতৃত্বশূন্য করার ষড়যন্ত্র থেকেই এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। ১৯৮০ সাল থেকে এ ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে দাবী করে তিনি বলেন, সাফাই মারমা থেকে শুরু করে মংসাজাই চৌধুরী হয়ে তাদের সন্ত্রাসের সর্বশেষ বলি হতে হয়েছে চিংসা মং চৌধুরী।

ইউপিডিএফ-জেএসএস নিজেদের জন্য লড়াই করছে দাবী করে তারা নিজেরাই এখন নিজেদের স্বার্থে বিভক্ত। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে আধিপত্য বিস্তারের জন্যই মারমা জনগোষ্ঠির জনপ্রিয় নেতাদের হত্যা করছে দাবী করে এ মারমা নেতা বলেন, তাদের সন্ত্রাসের বলি কেন আমরা হতে যাবো ? আমরা অনেক ধৈর্য্য ধরেছি। আমাদের ধৈর্য্যরে সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা মারমা জনগোষ্ঠিসহ সকলকে সাথে নিয়ে মারমা নেতৃত্ব শূণ্য করার সব ষড়যন্ত্র রুখে দেব।

খাগড়াছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বাঁশরী মারমা বলেন, আমরা বিশেষ কোন গোষ্ঠির বিরুদ্ধে নয় পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ-জেএসএস-জেএসএস‘র (সংস্কার) সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে মারমা জনগোষ্ঠির মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলছি। তাদেরকে চাঁদা দিয়েও পাহাড়ের মানুষ নিরাপদ নয় দাবী করে তিনি স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চান। তিনি বলেন, তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কাছে আমি নিজেও নিরাপদ নই। ১৬ ডিসেম্বরের পর চিংসা মং চৌধুরী হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বড় আকারে কর্মসুচী ঘোষনার ইঙ্গিত তিনি বলেন, আমাদের আর পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। মারমা জনগোষ্ঠিকে নেতৃত্বশুন্য করার ষড়যন্ত্র যেকোন মুল্যে মোকাবেলা করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মারমা এলাকায় আর কোন সন্ত্রাসীকে প্রবেশ করতে দেয়া হবেনা।

পার্বত্য চট্টগ্রামকে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এলাকা উল্লেখ করে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার সিন্ধুকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুইনুপ্রু চৌধুরী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এবং সন্ত্রাস থেকে উত্তোরনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায়, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করার তাগিদ দিয়ে বলেন, মারমা সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব শুণ্য করার ষড়যন্ত্র ছিল এটা সত্য। সকল সম্প্রদায়ের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পরস্পরের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরী করতে হবে। তিনি সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনারও দাবী জানান। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টিসহ নিরাপত্তার দাবীতে চাকমা-মারমা-বাঙ্গালী-ত্রিপুরা সকল সম্প্রদায়কে এক মঞ্চে দাঁড়ানোরও আহবান জানান তিনি।

মাটিরাঙ্গা মারমা নেতা চাইলাপ্রু চৌধুরী বলেন, মানিকছড়ির স্কুল শিক্ষক চিংসা মং চৌধুরী হত্যাকান্ডে আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। এসব হত্যাকান্ড মেনে নেয়ার মতো নয়। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রতিটি জনপদকে অশান্ত করে তুলছে বলেও মনে করেন তিনি। তার মতে এসব সন্ত্রাসীদের মোকাবেলার এখনই উপযুক্ত সময়। এজন্য তিনি প্রশাসনিক হস্তক্ষেপও কামনা করেন।

পাহাড়ের তিন অনিবন্ধিত আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ-জেএসএস-জেএসএস‘র (সংস্কার) সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে মারমা জনগোষ্ঠির এ অবস্থানকে চাকমা বিদ্বেষী মনোভাবেরই বহি:র্প্রকাশ বলে মনে করছেন পাহাড়ের রাজনীতি সচেতন মহল। তাদের মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামে মারমা নেতৃত্ব শূণ্য করার যে প্রক্রিয়া সেই ১৯৮০ সালের দিকে শুরু হয়েছে তা এখনই বন্ধ করতে হবে। এজন্য তারা মারমা জনগোষ্ঠির ঐক্য কামনা করেন। তারা মনে করেন, শুধু মারমা নয়, এই সন্ত্রাস ও শোষণের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের ত্রিপুরা, বোমাং, তঞ্চঙ্গা, কুকিসহ তিন পার্বত্য জেলার বঞ্চিত ও নিপীড়িত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এখনই সময়। 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন