পার্বত্যাঞ্চলে জলোৎসবের উল্লাস

Rangamati water festibol pic03 copy

স্টাফ রিপোর্টার:

পার্বত্যাঞ্চলে শুরু হয়েছে ৩ দিনব্যাপী মারমা সম্প্রদায়ের জলোৎসব বা জলকেলি (সাংগ্রাইং)। জলকেলি দৃশ্য বেশ উপভোগ্য বলে অনেক মানুষের সমাগম ঘটেছে এই উৎসবস্থলে। মারমা ভাষায় এটিকে বলা হয় রিলংপোয়ে। জলখেলার জন্যে এরা আগে থেকে প্যান্ডেল তৈরি করে। ঐ প্যান্ডেলে মারমা যুবক যুবতীরা একে অপরের প্রতি জল ছিটিয়ে জয়ি হওয়ার প্রতিযোগিতায় সামিল হয়। এ সময় অনুষ্ঠানস্থল জুড়ে যেন ভারি বর্ষণের আর্বিভাব ঘটে।

উৎসবের আনন্দ জলে সিক্ত হয় মারমা তরুণ তরুনীরা। আনন্দ উল্লাসে নেচে গেয়ে পার করে দিন। মারমা সম্প্রদায় ছাড়াও উৎসবে যোগ দিয়ে ছিল চাকমা, ত্রিপুরা, খিয়াং, গুর্খা, অহমিয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, উসুই, লুসাই, চাক, রাখাইন, খুমী, বমসহ বাঙালি জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার নারী পুরুষ। শিশু, কিশোর, তরুণ, তরুণীসহ সব বয়সের মানুষ সমবেত হয় এ উৎসবে। রাঙামাটির মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাইংকে ঘিরে উৎসব মুখর হয়ে ওঠেছে পাহাড়ী জনপদ।

পার্বত্য তিন জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের পদচারণায় উৎসবের নগরীতে পরিণত হয় পুরো কাপ্তাই উপজেলা। সকাল থেকে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ চট্টগ্রাম থেকেও মানুষে ঢল নামতে শুরু করে জলোৎসবস্থলে। বেলা বাড়ার সাথে সাখে জন সমুদ্রে পরিণত হয় চন্দ্রঘোনা চিৎমরম এলাকা। পাহাড়ী বাঙালিসহ সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলন মেলায় জমে উঠে সাংগ্রাইং নামের এই উৎসব। এদিকে, পার্বত্যাঞ্চলের বৈসাবি ও বর্ষবরণ উৎসব শেষ হতে না হতে আবারও উৎসবমুখর রাঙামাটি।

শুক্রবার বেলা ১১টায় আনন্দ উল্লাস আর উৎসমুখর পরিবেশের মধ্যেদিয়ে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় চন্দ্রঘোনা চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার মাঠে মারমা সম্প্রদায় ৩দিনব্যাপী সাংগ্রাইং উৎসব অনুষ্ঠানিক উদ্ধোন করেন সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ।

এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন, কাপ্তাই জোন কমান্ডার মো. কামাল উদ্দিন, জেলা পুলিশ সুপার সাঈদ তারেকুল হাসান, জেলা পরিষদের সদস্য মুছা মাতব্বর, সদস্য অং¯্র সাইন চৌধূরী উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো বৈসাবিকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করে থাকে। যেমন, চাকমারা বিজু, ত্রিপুরারা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু ও মারমারা সাংগ্রাইং নামে পালন করে থাকে। মারমারা সম্প্রদায় জলোৎসবের মাধ্যমে পুরোন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করে। মারমা তরুণ তরুনীরা একে অপরকে জল ছিটিয়ে পুরাতন বছরের সমস্ত গ্লানি, দুঃখ, বেদনা ও অপশক্তিকে ধুয়ে মুছে দূর করে। এই আনন্দে মেতে উঠে পাহাড়ী বাঙালি সবাই। সমবেত হয় দূর-দুরান্ত থেকে আগাত পর্যটক ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী পুরুষ।

অন্যদিগে, ঐতিহ্যবাহী নানা আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে পার্বত্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি ও বর্ষবরণ। অবশ্য, মাসজুড়ে চলা উৎসবের উচ্ছ্বাস এখনও পাহাড়কে মাতিয়ে রেখেছে। আর মারমা সম্প্রদায় ঐতিহ্যবাহী জলোৎসবের মধ্য দিয়ে অর্ধমাস ব্যাপী চলা বৈসাবি উৎসব শেষ হবে রোববার।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন