পানছড়ির প্রতিবন্ধী দিপা নন্দীর ৪র্থ সাফল্য

dipa-pic-copy

পানছড়ি প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলায় মামা-মামীর আদরে লেখাপড়া করছে দিপা নন্দী। প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়ায় বাবা সুভাষ নন্দী জন্মের পর মা-মেয়েকে পাঠিয়ে দেয় বাপের বাড়ি। মানসিক প্রতিবন্ধী মা পপি দাশ দিপাকে নিয়ে আশ্রয় নেয় ভাই সঞ্জয় দাশ ও চুমকি বিশ্বাসের বাসায়। বর্তমানে উপজেলার পানছড়ি বাজারের পাশেই হাজারী টিলায় ভাড়া বাসায় তাদের মানবেতর বসবাস।

প্রথম শ্রেণী থেকেই শারিরীক প্রতিবন্ধী দিপা ছিল লেখাপড়ার প্রতি প্রচুর আগ্রহী। শুরু থেকেই সব শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকারী দিপা ৪র্থ শ্রেণীতে পায় টেলেন্টপুলে বৃত্তি। এক বছর পরেই ৫ম শ্রেণীর শিক্ষা সমাপনীতে লাভ করে জিপিএ-৫। দু-বছর পরেই পানছড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পায় ৭ম শ্রেণীর জেলা পরিষদ বৃত্তি। সর্বশেষ এবারের জেএসসি’তে একই বিদ্যালয় থেকে লাভ করে জিপিএ-৫। এবারে উপজেলায় সর্বমোট ৪জন জিপিএ-৫ লাভ করে। তার মধ্যে প্রতিবন্ধী দিপা অন্যতম।

বছরের প্রথম দিনে বই উৎসবে কথা হয় হাস্যোজ্জল দিপার সাথে। সে জানায়, মামা-মামীর আদরে বেড়ে উঠেছি পানছড়িতে। মামা-মামীর অভাবের সংসারে কোনদিন অভাব অনুভব করিনি। যখন যা দরকার সময়মত পেয়েছি। প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়ায় বাবা সুভাষ নন্দীর আচরণে ঘৃণা জন্মেছে তার মনে। প্রতিবন্ধী হয়েও যে জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায় তা আমি দেখাতে চাই। মামা-মামী ও বিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্তরিকতার কথা বার বার স্মরণ করে দিপা জানায়, বানিজ্য বিভাগে লেখাপড়া করে ভবিষ্যতে আমি ব্যাংকার হতে চায়।

পানছড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুপ্রিয় চাকমা, সুপ্রীতি বড়ুয়া ও ঝুনু কান্তি দে জানায়, দিপা অত্যন্ত নিরিবিলি স্বভাবের। লেখাপড়ার প্রতি তার প্রচুর আগ্রহ তাছাড়া হাতের লেখাও চমৎকার। বিদ্যালয় থেকে সব ধরণের সুবিধা তাকে দেয়া হচ্ছে। তারপরও এ অসহায় প্রতিবন্ধী মেধাবী দিপার সহযোগিতায় বিত্তবানরা এগিয়ে আসা দরকার বলে তারা জানায়।

দিপার মামী চুমকি বিশ্বাস জানান, সে যতক্ষন লেখাপড়া করে খুব মন দিয়ে করে। ৩/৪ বছর বয়স থেকেই সে আমাদের সংসারে আছে। মেয়েটি একেবারে সহজ সরল। অভাবের সংসারে যতটুকু সম্ভব ওর চাহিদা মেটাতে আমরা চেষ্টা করি।

পানছড়ি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংঘের সভাপতি মো. হাসানুজ্জামান জানায়, মেয়েটি যে এত মেধাবি তা জানা ছিলনা। প্রতিবন্ধী মেয়েটির সাফল্য খুঁজে বের করায় তিনি এ প্রতিবেদককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সে আমাদের গর্ব। প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংঘের পক্ষ থেকে তাকে সহসাই সংবর্ধনা দেয়া হবে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, দিপা প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়ার পরেই বাবা সুভাষ নন্দী সাদা কাগজে দস্তখত রেখে মা-মেয়েকে পাঠিয়ে দেয় বাপের বাড়ি। বছর দু’য়েক পরে তাদের আশ্রয় হয় মামা সঞ্জয় দাশের পানছড়িস্থ ভাড়াটে বাসায়। অদ্যবধি পর্যন্ত মামা-মামীর আদর যত্নেই একের পর এক সাফল্য অর্জন করে উজ্জল ভবিষ্যৎ গড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দিপা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন