পানছড়িতে গৃহবধূর মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল, আদালতে হত্যা মামলা দায়ের


নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়ির পানছড়িতে এক গৃহবধূর মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের স্বামী বলছে আত্মহত্যা। আর তার স্বজনরা বলছে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।

ওই গৃহবধূর নাম স্বপ্না হাজারী (৪০)। সে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দেওয়ানপুর গ্রামের মৃত নির্মল বণিকের মেয়ে ও খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার পানছড়ি বাজারের যোগেশ হাজারীর ছেলে গোপাল হাজারীর স্ত্রী।

গত ১ জুন রাত ১১টায় ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পানছড়ি থানা পুলিশ। নিহতের গলার দুই পাশে ধারালো অস্ত্রের কাটা দাগ ছিল। পরে ৭ জুন নিহতের ভাই মেকু বণিক বাদি হয়ে গোপাল হাজারী, ছবি ধরসহ ৫ জনকে আসামী করে খাগড়াছড়ি আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আদালতে দায়েরকৃত মামলার বিবরণ ও স্বপ্না হাজারীর ভাই মেকু বণিকের অভিযোগ, গত ১ জুন গভীর রাতে তার ছোট বোনের স্বামী গোপাল হাজারী তাদেরকে ফোন করে বলেন তার বোন স্বপ্না আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে পরের দিন ভোরে পরিবার পরিজন নিয়ে পানছড়িতে ছুটে যান তারা। গিয়ে জানতে পারেন তার বোনকে পানছড়ি উপজেলা কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পান তার ছোট বোনের গলার দুই পাশ কাটা।

পরে তিনি পানছিড় থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ ও গোপাল হাজারীর লোকজন তাকে মামলা দায়ের করতে দেয়নি। এসময় তাদেরকে প্রায় ২ ঘন্টা আটকিয়ে রাখা হয়। তার বোনকে মাতাল স্বামী গোপাল হাজারী ও তার প্রেমিকা ছবিসহ সঙ্গবদ্ধ মাতালদল খুন করেছে বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, প্রায় ৩ মাস আগে গোপাল হাজারী স্বপরিবারের সাজেকে ঘুরতে যায়। ওখানে উপস্থিত হন গোপাল হাজারীর প্রেমিকা বিধবা ছবি ধর। পরে গোপাল বণিক ও ছবি ধরের অনৈতিক কর্মকান্ড তার বোন স্বপ্না হাজারী দেখে ফেলে। এর পরে সে লোক লজ্জার ভয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে।

হত্যাকান্ডের তিন দিন আগে তার বোনকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায় গোপাল হাজারী। ঘটনার দিন গোপাল হাজারী, ছবি ধর, বিপ্লব পাল, সুজল ধর, মনতোষ পাল বাড়িতে মদের আসর বসান। এসময় তার বোন বাধা দিলে তাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে একটি ধারালো সাবাল দিয়ে তার গলার বিভিন্ন অংশ কেটে ফেলে।

২১ বছর ধরে বিভিন্ন নির্যাতন সহ্য করে ছেলে-মেয়ের দিকে তাকিয়ে স্বপ্না স্বামীর সংসার করে আসছে। গোপাল হাজারী প্রায় রাতে মদ খেয়ে স্বপ্নাকে মারধর করতো।

পানছড়ি থানা পুলিশ মামলা না নেয়ায় তিনি বাধ্য হয়ে খাগড়াছড়ি আদালতে ৫ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

নিহতের বোনের ছেলে জীবন বণিক জানান, ঘটনার ৩ দিন আগে স্বপ্না তার বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুড় বাড়িতে যান। কিন্তু এই কয়েক দিনের মধ্যে এমন কি ঘটেছে যে তার মাসি আত্মহত্যা করেছে? তার মাসিকে পরিকল্পীতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।

তিনি আরো বলেন, থানা পুলিশকে ঘুষ দিয়ে হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এছাড়া তাদেরকে ওই দিন পানছড়িতে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। পরে স্বপ্নার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে জোর করে পুলিশ কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেয়।

গৃহবধূর স্বপ্না হাজারীর মৃত্যু নিয়ে গত ২ জুন পানছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ আ. জব্বারের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হয়েছিল। ঐদিন তিনি ঘটনাটি আত্মহত্যা দাবী করে জানান, লাশ ময়না তদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিহতের বড় ভাই তপন বনিক অত্র থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন