পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবসে ৩৫ কাঠুরিয়া হত্যার বিচার ও ভূমি কমিশন বাতিলের দাবী

dsc09875-copy

লংগদু প্রতিনিধি:

রাঙামাটির লংগদুতে পার্বত্য বাঙালী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে ৩৫ কাঠুরিয়া হত্যাকান্ড দিবস বা ‘পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবস’ পালন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, ৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বরের এই দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি সৃষ্টিকারী শান্তিবাহিনী নামধারী সন্তু লারমার দোসর ও সশস্ত্র ক্যাডাররা লংগদু ও বাঘাইছড়ি সীমান্তে পাকুয়াখালী নামক স্থানে নিরীহ ৩৫ বাঙালী কাঠুরিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

বক্তারা আরে বলেন, এই হত্যা কাণ্ডের দীর্ঘ বিশ বছর পার হলেও  আজ পর্যন্ত সেই খুনীদের কোন বিচার হয়নি। বিচার যেন নিভৃতে কাঁদে। উপরন্তু সরকার খুনিদের পুরস্কৃত করে এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদের সাথে শান্তি চুক্তি নামে একটি কালো চুক্তি করেছে। এই ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য একটি কলঙ্কজনক ঘটনা। বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী সশস্ত্র ক্যাডার কর্তৃক সকল হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারের দাবী জানিয়ে নিহত বাঙালী পরিবারদের পূন:র্বাসন করার দাবী জানান।

বক্তারা আরো বলেন, সম্প্রতি পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন সংশোধনের নামে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালীদের বিতাড়নের আরেকটি নীল নকশা তৈরী করেছে। শুধু তাই নয়, কাপ্তাই হ্রদের  জলেভাসা জমিও পাহাড়ীদের ভাগ করে দেওয়া হবে সরকারের এমন বক্তব্য আত্মঘাতি ঘোষনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

সমধিকার আন্দোলন লংগদু উপজেলা শাখার সহ সভাপতি এমএ হালিমের পরিচালনায়  প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন।

সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ লংগদু উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ দেলোয়ার  হোসেন। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাব্বির আহম্মেদ।

লংগদু উপজেলা সমধিকার আন্দোলনের সভপতি মো. খলিলুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, লংগদু উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. নাছির উদ্দিন, গুলশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু নাছির, সমধিকার আন্দোলন রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবছার আলী, সাবেক কালাপাকুজ্জা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বারেক দেওয়ান, লংগদু উপজেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা আমিনুর রশীদ, সমঅধিকার ছাত্র আন্দোলন, লংগদু উপজেলা শাখার সভাপতি মো. রাকিব হাসান প্রমূখ।

বক্তরা তাদের বক্তব্যে আরো বলেন, পার্বত্য ভূমি কমিশনে সন্তু লারমার নেতৃত্বকে আমরা মেনে নেবনা। সন্তু লারমার বিচার দাবী করে ভূমি কমিশন সংশোধন আইনকে অবৈধ এবং সংবিধান পরিপন্থি কালো আইন বলে আখ্যা দেন বক্তারা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাহাড়ীরা দেশের স্বাধীনতা না মেনে তারা পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেছিল। প্রকৃত পক্ষে তারাও রাজাকার। তাই, মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে সন্তু লারমা গংদেরও  বিচার হওয়া প্রয়োজন।

বক্তারা নিরপেক্ষ ভূমি কমিশনে তিন পার্বত্য জেলার তিন জেলা প্রসাশক ও নির্বাচিত বাঙালী জনপ্রতিনিধিদের অন্তভূর্ক্তি করার দাবী জানিয়ে বলেন, আমরা কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না। আমরা আমাদের অধিকার বাস্তবায়নের দাবীতে আন্দোলন করছি। তৎকালীন শান্তি চুক্তির সময় সন্তু বাহিনী বলেছিল অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। কিন্তু, এখন দেখতে পাচ্ছি পাহারের অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। পাহাড়ী অস্ত্রধারী গোষ্টির কাছে সাধারণ পাহাড়ী-বাঙালী কেউ নিরাপদ নয়।

সংবিধানে সন্তু লারমা ও তার দল উপজাতী হিসেবে স্বীকৃতি নিলেও এখন তারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে নিজেদেরকে হঠাতই ‘আদিবাসী’ বলে দাবী করছে। অথচ তথ্যানুযায়ী জানা যায়, এশিয়া মহাদেশে কোন আধিবাসী নেই। আমরা এই দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। প্রয়োজনে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারী দেন বক্তারা।

শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ ও সম-অধিকার আন্দোলন লংগদু উপজেলা শাখার উদ্যোগে উপজেলা সদরে শোক র‌্যালী বের করা হয়। র‌্যালীটি প্রধান সড়ক ঘুরে উপজেলা রেষ্টহাউজ সংলগ্ন ৩৫ কাঠুরিয়ার গণকবর জেয়ারত ও দোয়া মোনাজাতে মিলিত হয়। শহীদ কাঠুরিয়াদের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মুনাজাত করেন, উপজেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা আমিনুর রশীদ। পরে উপজেলা চত্বরে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন