উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া এখন চীনে

ডেস্ক নিউজ:

বাংলাদেশের আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া এখন চীনে। এত দিন যোগাযোগ বন্ধ রাখলেও সমপ্রতি তিনি চীনের গোপন এক আস্তানা থেকে ফোনে কথা বলেছেন দলের উচ্চপদস্থ নেতা জ্যোতির্ময় বরালি’র সঙ্গে। তারই সূত্র ধরে বলা হচ্ছে, পরেশ বড়ুয়া বর্তমানে চীনে অবস্থান করছেন। বার্তা সংস্থা টিএনএন-এর উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। এতে বলা হয়েছে, বরালি বর্তমানে মিয়ানমারের উলফা ক্যাম্পের তত্ত্বাবধানে আছেন। মিয়ানমারে উদ্ধারকৃত একটি ব্যাগ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় পরেশ বড়ুয়া ফোন করতে বাধ্য হন বরালিকে। ওই ব্যাগের মধ্যে একাধিক সিম কার্ড, কয়েক লাখ রুপি, কিছু গোলাবারুদ আর একটি ফোন ডিরেক্টরি রয়েছে। ব্যাগটি এখন মিয়ানমারে পরেশ বড়ুয়ার সমর্থক নেতাকর্মীদের হেফাজতে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ওই ব্যাগটি এর আগে পার্থ গগৈইয়ের তত্ত্বাবধানে ছিল। উলফার সহকারী অর্থ সচিব ছিলেন পার্থ। পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন উলফা’র একাংশ জানুয়ারির মাঝামাঝিতে পার্থ গগৈইকে বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ২৬শে জানুয়ারি ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার কথা ছিল তার। সরকারের সঙ্গে আলোচনার পক্ষে উলফার একাংশের সঙ্গে যোগদান করতে চেয়েছিলেন তিনি। পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বে স্বতন্ত্র উলফা গত তিন মাসে বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে প্রায় এক ডজন ক্যাডারের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। বড়ুয়ার ফোনকল এবং সামপ্রতিক ঘটনা প্রবাহে তার চীনে অবস্থানের ধারণাটি আরও নিশ্চিত করেছে। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে, বড়ুয়া চীনের রুই লি শহরে এক নারী বন্ধুর সঙ্গে গত দু’বছর ধরে বসবাস করছেন। রিপোর্টে বলা হয়, তার স্ত্রী ও দুই ছেলে আছে বাংলাদেশে। এদিকে ৩০শে জানুয়ারি বাংলাদেশের আদালত ২০০৪ সালের অস্ত্র পাচার মামলায় বড়ুয়াকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। আবার মিয়ানমারে কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলার জন্য উলফা চাপে আছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

kk

সূত্র মতে, উলফা ও এনএসসিএন(কে) এ দু’পক্ষই বর্তমানে চীনে মুক্তভাবে অবস্থান করছে- এমন ইঙ্গিত মিলেছে। সমপ্রতি এ দুটি গ্রুপ একত্রে কাজ করছে। তবে চীন সরকারিভাবে এমন গ্রুপকে সমর্থন দেয়ার কথা স্বীকার করে না। দীর্ঘদিন ধরে ইঙ্গিত মিলেছে যে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন চীন থেকে সংগ্রহ করে তাদের অস্ত্র। ভারতের কারাগারে রয়েছেন অ্যান্থনি শিমরাই। চীন থেকে যারা এসব গ্রুপের হয়ে অস্ত্র সরবরাহ করতেন তার মধ্যে অ্যান্থনি শিমরাই অন্যতম। সমপ্রতি কিছু ইঙ্গিত মিলেছে যে, উলফা (স্বতন্ত্র), এনএসসিএন (কে) এবং আরও কিছু গ্রুপ কৌশলগত কারণে কাজ করছে একসঙ্গে। এ গ্রুপ এখন অরুণাচল প্রদেশের তিরাপ ও চ্যাংলাং জেলায় সক্রিয়। সেখানে তারা রাজনৈতিক ইস্যুকে সামনে তুলে ধরেছেন। এ দুটি জেলা কৌশলগত দিক দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে।

কারণ, এ দুটি জেলার সঙ্গে রয়েছে আসাম, নাগাল্যান্ড, মিয়ানমার ও চীনের সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলো চীনে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে অবস্থান করছে। এসব গ্রুপের অরুণাচল প্রদেশে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো উদ্বিগ্ন। চীন কি এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোকে নতুন করে কোন পদক্ষেপ নিতে কোন ভূমিকা রাখছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর অক্টোবরে এনএসসিএন(কে) নেতা ডেভিড স্টারসন চীনে সাক্ষাৎ করেন পরেশ বড়ুয়ার সঙ্গে। সেখানে তারা আলোচনা করেন অরুণাচল প্রদেশে তাদের কৌশল কি হবে তা নিয়ে। আরও খবর পাওয়া গেছে যে, প্রায় একই সময়ে এনএসসিএন (আইএমআই)-এর সিনিয়র কিছু নেতা চীনে গেছেন। সূত্র বলেছে, নতুন করে বিশৃঙ্খলা মোকাবিলা করছে উলফা (স্বতন্ত্র)।

সূত্র: মানবজমিন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন