পরকীয়ার মিথ্যা অপবাদে গৃহবধু প্রেমমালা ত্রিপুরার মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে সমাজপতিরা

Ramgarh 26.

নিজাম উদ্দিন লাভলু:

ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়নহাটের আনন্দপুর গ্রামে কথিত সমাজপতির কু প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পরকীয়ার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রেমমালা ত্রিপুরা(২৫)নামে এক ত্রিপুরা উপজাতি চা শ্রমিকের মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইউনিয়ন পরিষদে অনুষ্ঠিত এক সালিশী বৈঠকে গত শনিবার সংগঠিত ন্যাক্কাজনক এ ঘটনার জন্য কথিত ঐ সমাজপতিরা প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যতে এ ধরণের কর্মকান্ড করবেনা বলে মুচলেকা দিয়ে পার পেয়ে গেছে।

ফটিকছড়ির নারায়নহাটের আনন্দপরের বাসিন্দা ও হালদা ভ্যালি চা বাগানের শ্রমিক প্রেম মালা ত্রিপুরার(২৫) স্বামী যতীন কুমার ত্রিপুরা ভারতের বোম্বে শহরে চাকুরী করে। তিনি দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জননী। প্রেমমালা জানান, স্বামীর অনুপস্থিতির সুযোগে তার প্রতিবেশী অনন্ত ত্রিপুরার নেতৃত্বে একদল উপজাতি ও বাঙ্গালি যুবক তাকে নানাভাবে বিরক্ত করতো। প্রায়শ:ই অনন্ত ত্রিপুরা তাকে কু প্রস্তাব দিত। এতে সাড়া না পেয়ে এবং তার দোকান থেকে কেনাকাটা না করায় প্রেমমালার উপর ক্ষুদ্ধ হয় অনন্ত ত্রিপুরা।

গত শুক্রবার রাত নয়টার দিকে তার দেবর বজিনা ত্রিপুরা ও বলিরাম ত্রিপুরা হঠাৎ এসে ঘরের দরজা খুলতে বলে। দেবরের ডাকে দরজা খুলে দিলে তারা ঘরে ঢুকে তার মোবাইল ফোন চেক করতে চায়। এতে প্রেম মালা প্রতিবাদ করলে তারা তার মোবাইল ফোনটি জোর করে কেড়ে নেয় এবং বাঙ্গালি যুবকের সাথে তার পরকীয়ার সম্পর্ক আছে এমন মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে টচ লাইট ও জুতা দিয়ে এলোপাথিারি মারধর করে। পরের দিন এ ঘটনায় গ্রামের সমাজের পঞ্চায়েতের কাছে বিচার প্রার্থী হয় প্রেমমালা। সালিশ বৈঠকে উপস্থিত পঞ্চায়েতের কথিত নেতা অনন্ত ত্রিপুরা ও কুসুম ত্রিপুরা তাকে মারধর করার বিচার না করে বাজিনা ত্রিপুরা ও বলরাম ত্রিপুরার পক্ষ নিয়ে বাঙ্গালি যুবকের সাথে পরকীয়ার উল্টো অভিযোগ আনে প্রেমমালার বিরুদ্ধে। এরপর সমাজের তথাকথিত আইনে বৈঠকেই অনন্ত ত্রিপুরা, বলিরাম ও কুসুম ত্রিপুরা জোরপূর্বক ব্লেড দিয়ে তার মাথা ন্যাড়া করে দেয় ।

এ ব্যাপারে কথিত সমাজপতি অনন্ত ত্রিপুরা এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘স্থানীয় বাঙ্গালি যুবকের সাথে অবৈধ সম্পর্ক থাকায় সমাজের নিয়ম মোতাবেক তার মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে। এটা কোন অপরাধ নয়।’ তবে বাঙ্গালি যুবকের নাম জানাতে পারেননি তিনি।

এদিকে কথিত সমাজপতিদের হাতে নির্যাতিত গৃহবধূ প্রেমমালা ত্রিপুরা নারায়নহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু জাফর মাহমুদের কাছে তার উপর চালানো নির্যাতনের বিচার প্রার্থী হন। এর প্রেক্ষিতে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় ইউপি কার্যালয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে সালিশ বৈঠকে বসেন ইউপি চেয়ারম্যান। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ইউপি সদস্য আশুতোষ চক্রবর্তী জানান, সালিশী বৈঠকে পঞ্চায়েত নেতারা প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা চেয়েছেন। এছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের কোন কাজ করবেনা মর্মে মুচলেকা দেয় পঞ্চায়েত নেতা বোলা ত্রিপুরা ও তার ছেলে অনন্ত ত্রিপুরা।

নির্যাতিত গৃহবধূ প্রেমবালাকে নিরপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করে সামাজিক রীতি অনুযায়ি পঞ্চায়েত নেতাদের খরচে ধর্মীয় পন্ডিতদের মাধ্যমে প্রেমমালাকে শুদ্ধতার কর্ম সম্পাদনেরও সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে । সালিশী বৈঠকে চেয়ারম্যান আবু জাফর মাহমুদ ছাড়াও ইউপি সদস্য দিলীপ, আশুতোষ চক্রবর্তী, বাবুল ও গাজী আবুল কালাম উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ঐ গৃহবধূর উপর চালানো ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে স্থানীয় এক ইউপি মেম্বারও জড়িত। এ কারণে জঘন্য অপরাধের দায়ে কথিত সমাজপতিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ বা শাস্তিমূলক কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি ঐ সালিশ বৈঠকে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন