পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতি সত্ত্বা সমূহের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে: হাসানুল হাক ইনু
স্টাফ রিপোর্টার:
বিশ্ব আদিবাসী দিবস-২০১৮ উপলক্ষ্যে রাজধানীতে আয়োজিত এক সমাবেশে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, আমরা যারা এই দিবস পালন করি তারা পেছনে তাকাই, সামনে তাকানোর পথ নকশা তৈরি করি। আজকে আপনারা কী পেলেন আর কী পাননি তার হিসাব নিকাশ করবেন। আমাদের সরকার আপনাদের এই পাওয়া না পাওয়ার হিসাবের ফর্দ দেখবেন এবং না পাওয়া বিষয়গুলোকে আবার কার্যকরী করার চেষ্টা করবেন।
তিনি বলেন, আমি স্বীকার করছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে আমাদের কিছু বিভ্রান্তি হয়েছে। কিছু ভুল হয়েছে। যার জন্য সমতল ও পাহাড়ের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতিসত্ত্বা সমুহের মাঝে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। দ্বন্দ্ব সংঘাত তৈরি হয়েছে। কিন্তু অবশেষে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সন্তু লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পাদনের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনা দ্বন্দ্ব সংঘাতের অবসান ঘটান এবং শান্তির পথে, সহাবস্থানের পথে সমগ্র পাহাড়ী জনগোষ্ঠী, সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতি সমূহকে সমগ্র বাঙালী জনগোষ্ঠীসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমান মর্যাদায় বসবাস করার একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
তিনি আরো বলেন, শান্তিচুক্তির এখনো অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি, এটা সর্বজন বিদিত। এ ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমির সমস্যা, জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদের শান্তিচুক্তি অনুযায়ী যেটুকু শাসন করার ক্ষমতা পাওয়ার কথা সে সমস্যা, ভোটার সমস্যা- এগুলো সমাধান করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করা হয়েছে। আমি নিশ্চিত করে বলতে চায়, সমতল ও পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালী সংবিধানে সমান অধিকার ভোগ করে। কেউ যে পাহাড়ী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার হরণ করার চেষ্টা না চালায়।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উপর একটি অসাম্প্রদায়িক ছাতা ধারণ করে আছে বলেই সকলে সমান অধিকার ভোগ করছে। আশা করবো আপনারা কখনো এই অসাম্প্রদায়িক ছাতা ধারণকারী শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে রাজাকার জঙ্গী সমর্থিত কোনো মহল কোনো সরকারকে সমর্থন দিবেন না।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের আয়োজনে দিবসের মূল অনুষ্ঠান ছিলো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী উপরোক্ত কথা বলেন। অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলো সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেএসএস সভাপতি সন্তু লারমা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, ইয়াসিন আলী এমপি, সৈয়দ আবুল মকসুদ, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, রবীন্দ্রনাথ সরেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, সৌরভ শিকদার প্রমুখ।
এ বছর দিবসের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে: ‘ইনডিজেনাস পিপলস, মাইগ্রেসন এন্ড মুভমেন্ট। এই মূল সুরের সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম দিবসের প্রতিপাদ্য করেছে: ‘আদিবাসী জাতিসমূহের দেশান্তর ও প্রতিরোধের সংগ্রাম। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও অন্যান্য সংগঠন গত কয়েকদিন ধরে ঢাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। স্বাগত বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আদিবাসি অধিকারকে মানবাধিকার আইন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। আদিবাসীকে পিছনে রেখে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। সকলকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের পথ চলতে হবে। আদিবাসীদের মনে যেন কেউ দু:খ না দেয় সে দিক আমাদের লক্ষ রাখতে হবে।’
ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, সংবিধানে যে বাংলাদেশে অন্য জাতি বসবাস করে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাস্তবতা অস্বীকার করতে পারেন না। তাদেরকে আদিবাসি হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে পুর্ণাঙ্গভাবে এই বাস্তবতাকে স্বীকার করা হোক।
তিনি বলেন, ‘আমি একটি কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সংসদে কোনদিন আমরা আদিবাসি শব্দ ছাড়া আজকের আদিবাসিদের প্রসঙ্গে অন্য কোন শব্দ ব্যবহার করি নি। সেখানে স্পিকার আমাদের বাধা দেন নাই। আর এখন আদিবাসিদের উপর নিপীড়ন, ভুমি দখল, নারী নির্যাতন এবং সংখ্যালঘুদের উপর যে অত্যাচার চলছে তার প্রতিকার প্রচলিত আইন দিয়ে হবে না। আমরা সংসদে আদিবাসী অধিকার সংরক্ষণ আইন পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেছি। আমরা বারবার বলেছি এটা আলোচনা করা হোক, কিন্তু এটা আলোচনা হয় নাই। একসময়ে আমরা আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করলে সচিবালয় থেকে চিঠি আসত, আজকাল আর চিঠি আসে না। আমার বিশ্বাস এ আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেলে আমরা বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তন করে আদিবাসী শব্দটি সংবিধানে সংযুক্ত করতে পারব।’
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘আদিবাসীদের সাথে এমন একটি আস্থার সম্পর্ক করতে হবে যেন তারা দেশান্তর হওয়ার কথা কখনও ভাবতে না পারে।’
অনুষ্ঠানে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘যে আদিবাসী আমার পুর্বপুরুষদের সাথে লড়াই করেছে, তাদের আমরা স্বীকৃতি দিতে রাজী না। তাদের পরিচয় সংবিধানে তুলতে আমরা রাজি না। এই প্রতিশ্রুতি লজ্জার। জাতীয় ভাবে আদিবাসী দিবস পালন না করে অকৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে প্রতিবছর। ‘
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদাউস বলেন, ‘আমাদের দেশের সরকার আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস পালন করছেন না। আমরা মনে করি বাংলাদেশ কেবল বাঙালীর রাষ্ট্র না বাংলাদেশ কেবল মুসলমানের রাষ্ট্র না। অন্যান্য জাতির মত এখানে আদিবাসীরা সমান অধিকার নিয়ে বুক ফুলিয়ে তাদের অধিকার আদায় করবে।’
রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদ এবং চেয়ারম্যান বুলবুল এর নেতৃত্বে আদিবাসীদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার কারনে আদিবাসীরা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। আমরা বলেছি সংবিধানে আদিবাসিদের স্বীকৃতি দিতে হবে। আমাদের পরিচয় দিতে হবে। আমাদের পরিচয় দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। কেন ব্যর্থ হয়েছে, কারন তারা বলতে চায় বাংলাদেশে আদিবাসী নেই। আমরা বলেছি আদিবাসীদের সামনে রাখতে হলে তাদের কোটা দিতে হবে।’
সমাবেশ শেষে টিএসসি ও দোয়েল চত্তরে র্যালীর মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।