নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনুষ্ঠান হচ্ছে ‘আদিবাসী’ ব্যানারে

আবু সালেহ আকন:

সরকারিভাবে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আগামীকাল ৯ আগস্ট ‘আদিবাসী’ ব্যানারে দেশের বিভন্ন স্থানে অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে। এমনকি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও এই ব্যানারেই অনুষ্ঠান করবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠন। এতে সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং বিশিষ্টজন আমন্ত্রিত রয়েছেন। ব্যাপক বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও তাদের অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশে বসবাসকারী কয়েকটি সম্প্রদায়কে সংবিধানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদেরকে আদিবাসী বলে উল্লেখ করতে নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কতা সত্ত্বেও ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার করে বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা আগামীকাল ৯ আগস্ট বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে। সরকার এসব স্থান ব্যবহারে অনুমতি প্রদানে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশ দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপ উদাসীন।
তাদেরকে আদিবাসী উল্লেখ না করার বিষয়ে ইতঃপূর্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা প্রদান করা সত্ত্বেও তার কোনো কার্যকারিতা ল করা যাচ্ছে না। অন্যান্য বছরের মতো এবারো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আগামীকাল ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’ নামে অনুষ্ঠান উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে ‘বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এবং চট্টগ্রামের শহীদ মিনারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একই দিনে ওই ব্যানারেই অনুষ্ঠান করার ঘোষণা রয়েছে।

এই দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘আদিবাসী’ ব্যানারে সমাবেশ, র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হবে। সমাবেশের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামালের। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের। এতে সভাপতিত্ব করবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। চট্টগ্রাম শহীদ মিনারে তারা সমাবেশ, র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আহবান করেছে। তাদের আমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সকাল ১০টায় এ সভা উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন। প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন। সভাপতিত্ব করবেন শরৎ জ্যোতি চাকমা। ‘বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম’-এর ব্যানারে এ অনুষ্ঠান হবে।

২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৩ অধিশাখা থেকে ‘বাংলাদেশে আদিবাসী নামক অসাংবিধানিক দাবি বাস্তবায়নের অপকৌশল রোধে রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো জাতীয় ঐতিহাসিক স্থান ব্যবহারের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন’ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ নির্দেশনায় একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন ছোট ছোট সম্প্রদায়/গোষ্ঠীকে উপজাতি/ক্ষুদ্র জাতিসত্তা/নৃগোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল দেশী-বিদেশীদের সহায়তায় বাংলাদেশে আদিবাসী নামক অসাংবিধানিক দাবিটি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘আদিবাসী’ ইস্যুটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কিভাবে তারা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর অনুমতি নিয়ে অনুষ্ঠান করছে সে ব্যাপারে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। বিতর্ক থাকার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনুমতি প্রদান করছে। আর সেসব অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রীও প্রধান অতিথি থাকবেন বলে আমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ করা হচ্ছে। অনেকেই বলেছেন, যারা এ অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিয়েছেন তারা হয়তো জেনে শুনেই করেছেন।

সূত্র: নয়া দিগন্ত 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন