নিরাপত্তার অজুহাতে সারা দেশের ন্যায় চকরিয়ায় চলছে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট

চকরিয়া প্রতিনিধি:

আটকা পড়েছে হাজার হাজার পর্যটক

ছাত্র আন্দোলনের কারণে চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নিরাপত্তার অজুহাতে সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারের চকরিয়াতেও অঘোষিত ভাবে চলছে শ্রমিকদের পরিবহন ধর্মঘট। চলছে না কোন ধরণের যানবাহন। রবিবার (৫ আগস্ট) ভোর বেলা থেকে কক্সবাজার মহাসড়কে দূর পাল্লার কোন ধরণের বড় যানবাহন চলাচল করছে না।

শ্রমিকদের অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের কারণে ঢাকা-চট্রগ্রাম থেকে কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে কোন ধরনের যানবাহন প্রবেশ করেনি। এতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে অবস্থানরত হাজার হাজার পর্যটক আটকে পড়ছে। এতে চরম ভাবে দুর্ভোগে পড়েছে পর্যটকসহ জেলার সর্বস্তরের মানুষ।

চকরিয়া পৌর শহর থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। সড়কে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে বলে জানান বাস মালিক ও শ্রমিক নেতারা।

চকরিয়া উপজেলা সদরের সাথে ঢাকা, চট্রগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের অন্যান্য সড়কের সাথে বাসসহ অন্যান্য যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। চকরিয়া পৌর বাস টার্মিনালে রবিবার সকাল থেকে দুরপাল্লার কোন ধরণের যানবাহন ছেড়ে যায়নি। এতে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হওয়ায় বিকল্প পরিবহন হিসেবে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও টমটম যাতায়াত করছে। দুরপাল্লার কোন বাস গাড়ী চলাচল না করায় যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে কয়েকগুন।

দেশ জুড়ে এ অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের কারণে এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জেলার আট উপজেলার মানুষসহ দূরপাল্লা যাত্রীরা।

চকরিয়া উপজেলার অভ্যান্তরীণ বদরখালী-মহেশখালী সড়কের সিএনজি চালক মো: মোস্তফা জানান, শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের নির্দেশক্রমে সকাল থেকে সড়কে কোন ধরণের সিএনজি গাড়ী বাহির করা হয়নি। কেন্দ্রের নির্দেশনানুযায়ী সকল পরিবহণ শ্রমিকরা এ পরিবহন ধর্মঘটে সাড়া দিয়ে পালন করে যাচ্ছে।

আরকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জহিরুল ইসলাম কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়কে পরিবহন শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া এবং কেন্দ্র থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত নির্দেশনা আসবেনা ততদিন পর্যন্ত তাদের এই পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, শ্রমিকরা তো সরকারের প্রতিপক্ষ না। শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে। এখানে সরকারের সাথে পরিবহন শ্রমিকের কোন ধারণের সম্পৃক্ততা নেই বলে তিনি জানান।

পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে আরকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন যুগ্ন সম্পাদক কামাল আজাদ বলেন, শতভাগ নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হলে সারা দেশে মহাসড়কের রাস্তার দু’ধারে যে সমস্ত ভাসমান দোকান ও ফুটপাত রয়েছে তা পরিস্কার করতে হবে। বহি:বিশ্বের রাষ্ট্রের মতো ওয়ান ওয়ে রোড চালু করতে হবে। অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো এ স্বল্পন্নোত দেশে শতভাগ নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হলে মহাসড়কে ছোট যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে বিকল্প সড়ক তৈরি করতে হবে।

তিনি বলেন, একজন গাড়ীর শ্রমিক তার দৈনিক মজুরী হিসেবে পায় নূন্যতম ৮ শত টাকা থেকে ১২শত টাকা। বর্তমান সরকার সড়কে দূর্ঘটনার ব্যাপারে যে গৃহীত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা একজন পরিবহন শ্রমিকের পক্ষে কখনও সম্ভব না। পরিবহন শ্রমিকের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

পরিবহন ধর্মঘট ব্যাপারে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়কে শ্রমিকের ধর্মঘট নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপক নজরদারি রাখা হয়েছে। যাতে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড ঘটাতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়। এ ছাড়াও ছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও অভিভাবকদের সচেতনা ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হয়। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ছাত্রদের দাবিসমূহ সরকার বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন